নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, আমি বেঁচে আছি। কিন্তু বোমাটা আমাকে উদ্দেশ্য করেই ব্লাস্ট করা হয়েছিল। ১৫ জুন বুধবার চাষাড়ার রাইফেল ক্লাবে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার ২১ বছরেও বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এসব বলেন তিনি।
ভয়াবহ সে কাল রাত :
২০০১ সালের ১৬ জুন শনিবার বিকাল থেকেই চাষাড়া শহীদ মিনার গা ঘেষা আওয়ামী লীগ অফিসে তৎকালীন এমপি শামীম ওসমানের গণসংযোগ কর্মসূচিতে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িত নেতৃবৃন্দরা জড়ো হতে থাকেন। রাত ৭টার মধ্যে পুরো অফিস লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা কেউ জানতেন না তাদের প্রাণের স্পন্দন কেড়ে নিতে অথবা কারো অঙ্গহানি করার জন্য সেখানে পুঁতে রাখা হয়েছে শক্তিশালী বোমা। হল রুমের একেবারে দক্ষিণ দিকে (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বসে এলাকার মানুষের কথা শুনছেন। একেকজন একেক সমস্যা নিয়ে আসছেন। কারো চাকরির সুপারিশ, কারো চিকিৎসা সংক্রান্ত তদবির, কারো ভর্তির সমস্যা। হল ঘর পার হয়ে একটি কক্ষ। সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের খাস কক্ষ। হল ঘরের পরের ঘরটিতে তখন আলোচনায় বসেছিলেন দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়মী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা।
যেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন, এড. খোকন সাহা, রফিক, তৎকালীন চাষাঢ়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল আহম্মেদ (প্রয়াত), সহ সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সৈয়দ লুৎফর রহমান সহ কয়েকজন। কয়েক দিন পরেই নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে জনসভা করবেন শামীম ওসমান। সভার আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সভা শেষ করার কথা শামীম ওসমানের। কিন্তু মানুষের কথা শুনতে শুনতে উঠে আসতে পারছিলেন না তিনি। তাই ফোন করে আনালেন তার পিএস, কৃষক লীগ নেতা চন্দন শীলকে। চন্দন শীলকে দায়িত্ব দেয়ার পর তিনি ভেতরে ঢুকছিলেন সভায় যোগ দিতে। শামীম ওসমান ওঠার পরপরই রাত পৌনে ৯ টায় এতক্ষন তার বসে থাকার স্থানের অদূরেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে শক্তিশালী বোমার। সেই ২০০১ সালের ১৬ জুন এই বোমা হামলায় ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে, বরণ করেছেন আজীবন পঙ্গুত্বও।
তিনি আরও বলেন, দু:খের ব্যাপার এটাই যে সর্ষের ভেতর ভূত আছে। কারণ মোরসালিন মোত্তাকিন দুই ভাই (বোমা হামলার মামলার আসামী) তারা ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকা দ্যা হিন্দুস সহ কয়েকটা জনপ্রিয় পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়েছিল। তারা দিল্লিতে আরডিএক্স (বোমা) সহ ধরা পড়েছিল। আজ থেকে একুশ বছর আগে আরডিএক্স, তার মানে নিশ্চই বিশাল বড় কোন শক্তি তাদের সাথে ছিল।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই কারণ স্বজন হারানোর ব্যথা তার চেয়ে ভাল কেউ বুঝবে না। বোমা হামলার পর আমি একটা কথাই বলেছিলাম শেখ হাসিনাকে বাঁচান। আমার তখন মাত্র জ্ঞান ফিরেছিল, আমি কানে শুনছিলাম না।
আমি যেহেতু ভিকটিম তাই আমাকে খোঁজ খবর রাখতে হয়েছে। এ প্রোগ্রামটার নাম হচ্ছে হিট এন্ড রান। তারা নারায়ণগঞ্জকে বেইজ করে এখানে থাকে। ওরা সময় মত ঢাকাকে হিট করবে। টার্গেট এখনও শেখ হাসিনা। এর প্রমাণ ওই মোরসালিন মোত্তাকিন হিন্দুস পত্রিকায় বলেছিল শামীম ওসমান আমাদের প্রাইমারি টার্গেট, শেখ হাসিনা আমাদের পার্মানেন্ট টার্গেট। তারা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ করেছে।
সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, আমার দাবী থাকবে। ভারত আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ। আমরা এত আসামী ভারতকে তুলে দিয়েছি। ভারত থেকে মুরসালিন মোত্তাকিনকে এনে যদি জিজ্ঞসাবাদ করা যায় তাহলে কোন কোন বড় দল ও বড় শক্তি এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল তা বেরিয়ে আসবে। ভবিষ্যতের ঘটনা থামানোর জন্য এটা হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৬ জুন রাতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে অবস্থিত আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ২০ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছিলেন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানসহ যেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন, এড. খোকন সাহা, রফিক, তৎকালীন চাষাঢ়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল আহম্মেদ (প্রয়াত), সহ সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সৈয়দ লুৎফর রহমান সহ আরও অনেকেই।