নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে মিছিল, মিটিং আর জনসভায় একটিই নাম। নেতাকর্মীদের বজ্রকন্ঠে রাজপথ প্রকম্পিত হয় একটাই স্লোগান নারায়ণগঞ্জের মাটি, শামীম ওসমানের ঘাটি। নারায়ণগঞ্জের মাটি, আওয়ামীলীগের ঘাটি। নারায়ণগঞ্জের মাটি, শেখ হাসিনার ঘাটি। বিভিন্ন সময়ে চমকপ্রদ ও নানা ঘটন অঘটনের জন্য খবরের শিরোনাম হওয়া শামীম ওসমানের রাজনৈতিক ইতিহাসে আছে বিপুল বৈচিত্র। সারাদেশের মানুষই নারায়ণগঞ্জের নাম বললেই প্রথমই যে নামটি উচ্চারণ করেন তা হলো শামীম ওসমানের এলাকা।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাজনৈতিক ইতিহাসে ওসমান পরিবার বিগত তিন পুরুষ ধরে অবদান রেখে আসছে। খান সাহেব ওসমান আলী থেকে শুরু শামসুুজ্জোহা, পরবর্তীতে নাসিম ওসমান না ফিরার দেশে চলে গেলে বর্তমানে শামীম ওসমানই সে ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। তাইতো বিশ্ব গণমাধ্যম অথবা স্থানীয় সংবাদপত্র, টেলিভিশন কিংবা অনলাইন গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার এর মাধ্যমে বিশ্বদরবারেও জনপ্রিয়তার স্থান দখল করে রেখেছেন একটি নাম তা হলো এ.কে.এম শামীম ওসমান।
সম্প্রতি শামীম ওসমানের একটি সংলাপ এখন ওপার বাংলা অর্থ্যাৎ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে হৈ- হুল্লোড় ফেলে দিয়েছে। যা নেট দুনিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। ওই সংলাপটি শুরু সময়টা ২০১৩ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার কিছুদিন আগে। এক কর্মী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান খেলা হবে সংলাপটি প্রথম উচ্চারণ করেন।
যা এখন পশ্চিমবঙ্গের নেতা থেকে শুরু করে ছাত্রজনতার মুখে এখন কেবল খেলা হবে। এমনকি এ নিয়ে গানও তৈরি হয়ে গেছে, সে গান চলছে বিভিন্ন পাড়ার অনুষ্ঠানে। বলতে গেলে সব রাজনৈতিক দল গানে, মিছিলে স্লোগানে সবখানে খেলা হবে স্লোগান কে রেখে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিধান সভা নির্বাচন এবার খেলা হবে সংলাপের দখলে। ধীরে ধীরে এই সংলাপ বা বক্তব্যের অংশ স্লোগানে রুপান্তরিত হয়েছে। শুধু তৃণমূল নয় এই স্লোগান এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় বসকল রাজনীতিবিদদের মুখেই উঠে আসছে। এখানে শেষ হলেও কথা ছিল। এই স্লোগান এখন বিয়ে বাড়ির ডিজেতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলতে গেলে এই এক স্লোগান আসন্ন বিধান সভা উপলক্ষে গোটা পশ্চিমবঙ্গেই হইচই ফেলে দিয়েছে। কেবল এই এক স্লোগানের মধ্য দিয়েই জমে ওঠে ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার প্রচার-প্রচারণা। যদিও নির্বাচনের দিনক্ষণও এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। তবে চুপ করে নেই বিজেপিও। তৃণমূলের খেলা হবের জবাবে দলটি বলছে, শুধু খেলা হবে না, গুলিও হবে। আবার খেলার মাঠে লড়াই চলবে, এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে।
শামীম ওসমানের খেলা হবে স্লোগান গোটা পশ্চিমবঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যাবে তা হয়তো কখনোই ভাবেনি এদেশের নেটিজেনরা। তাই বিধানসভাকে কেন্দ্র করে এই স্লোগান রীতিমতো দাবানল হয়ে গেল কীভাবে, এটা খুঁজতে গিয়ে ভারতের পত্রিকাগুলো খুঁজে পেয়েছে শামীম ওসমানকে। অবশ্য কেউ কেউ তো এখনও দাবি করছেন এটা অনুব্রত মন্ডলের। তবে অনুব্রত মন্ডল যে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকেই এই স্লোগান আমদানি করেছেন তা ইন্টারনেট ঘাঁটলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, সেই চল্লিশ এর দশক থেকে শুরু করে অদ্যাবধি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জনপ্রিয় এই আওয়ামীলীগ নেতা ও তাঁর ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারটি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও আওয়ামী পরিবারের সহযোদ্ধা হিসেবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবং জেলার প্রতিটি নেতাকর্মীকে এগিয়ে আসার র্নিদেশও দিয়েছেন তিনি। এ নির্দেশে বৈশ্বিক মহামারী করোনা সহ বর্ন্যাত ও রোহিঙ্গা জনসাধারণের জন্যও ব্যপক অবদান রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে সম্মিলিত হয়ে কাজ করার মাইলফলক রেখেছেন তিনি। আর এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় আবারো ব্যপক আলোচনায় চলে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমান।
আর এই আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রয়েছে করোনাকালীন সময় তাঁর নিরালশ পরিশ্রম। নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যখাতে তিনি রেখেছেন অন্যতম অবদান। ফলশ্রুতিতে নারায়ণগঞ্জের দিকে আরো বিশেষ দৃষ্টি দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা খ্যাত, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নারায়ণগঞ্জের সকল সাধারণ মানুষের জন্য করোনা ল্যাব সহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে আইসিইউ বেড এর ব্যবস্থাও করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশন এর প্রতিনিয়ত টক শো গুলোতে তুলে ধরেছেন নানা সমস্যার কথা। ফলশ্রুতিতে, বঙ্গবন্ধুর নামকরণে একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরও অনুমোদন হয়েছে। এখন একটি মেডিক্যাল কলেজ সহ নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নে আরো কিছু সপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন নারায়ণগঞ্জের সপ্নদ্রষ্টা শামীম ওসমান।
তাছাড়া বিভিন্নসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে তেলেসমতি কর্মকান্ড তো আছেই। বিগতবার জেলা বিএনপির কমিটি দেয়ার বছর পুর্তি না হতেই যেন ভেঙ্গে র্চুণবির্চুণ হওয়ার অবস্থা। ওই কমিটিতি সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান এবং কাগজে কলমে পদপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। তবে তাদের কমিটি কতটা সংঘবদ্ধ এবং কে কতখানি নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য এটাও তখন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তবে ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নারায়ণগঞ্জ রাজনীতিতে এক চমক দেখিয়েছিলেন এ.কেএম শামীম ওসমান।
জেলায় বিএনপি দলের নিষ্কৃয়তায় ও হতাশায়, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামলীগের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডে এমপি শামীম ওসমানের পাশে থাকতে একে একে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত ডিএনডি প্রকল্প র্শিষকে এক জনসভায় আওয়ামী সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রীর সামনে ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মতিন প্রধান। একই অনুষ্ঠানে মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আয়েশা আক্তার দিনাও মিছিল নিয়ে হাজির হন। এবং জনসভার মূল মঞ্চেই তিনি শেষ পর্যন্ত অবস্থান নেন। এছাড়াও গত ১৯ই অক্টোবর ফতুল্লায় ভেলকি দেখান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস এবং কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টু। এখন দেখার বাকি রয়েছে এবারের গঠিত বিএনপি কমিটি নিয়ে কি চমক দেখান শামীম ওসমান।
শামীম ওসমানের বিচক্ষনতা ও উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে এখন প্রশংসা করে বিশ্বদরবারের অসংখ্য মানুষ। তাছাড়া জেলার বিএনপির বড় বড় নেতারাই এখন ওসমান পরিবারের অনুসারী। ফলশ্রুতিতে তাদের মুখেই ফুটে উঠে আওয়ামী সরকারের উন্নয়নে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমানের প্রশংসায় পঞ্চমুখী বক্তব্য। ওই অনুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাস তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, আমার নেতা শামীম ওসমানের হাত দিয়ে স্মরণকালের সেরা কাজ আমার উপজেলায় হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সকল রাস্তা-ঘাট শামীম ওসমানের হাত ধরে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়েও শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই। এছাড়াও বন্দর বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, বিএনপির দলীয় নেতা চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু, কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, কাউন্সিলর ইসরফিল সহ অনেকেই এখন ওসমান পরিবারের অনুসারী।
অপরদিকে, রাজনীতিতে ত্যাগ বিসর্জনের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অন্যতম। বিএনপি-জামাতকালে তিনি নেত্রীর নির্দেশে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। সুদূর কানাডায় থেকে দীর্ঘ সময় সেখানে বসেই চালিয়েছে রাজনৈতিক কার্যক্রম। তৎকালীন সময় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে দলীয় কর্মীদের সোচ্চার রেখেছেন। তাছাড়া ২০০১ সালে ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলায় তিনি কোনমতে প্রাণে বেঁচে যান। তবে হারান ২০টি তাজা প্রাণ, আহত হয় অনেকেই। যাদের মধ্যে অনেকই এখন স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করে ইহকাল ত্যাগ করেছেন আবার কেউ কেউ শয্যাশায়ী। এক সময়কার ওই সব মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মীরা এখন তৎপর নেই। কিন্তু তারাও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যার নাম বলেন সে একমাত্র জননেতা এ.কে.এম শামীম ওসমান।
তবে নেত্রী ও কর্মীদের প্রতি শামীম ওসমানের টান ছিল অনেক। তাই তো শেষ নিশ্বাসে আল্লাহ রাসূলের পরে তিনি তার নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্মরণ করেন। বলে উঠেন আমার নেত্রীকে বাঁচান, আপনারা আমার নেত্রীকে বাঁচান। সম্প্রতি ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগ কমিটিতে তাকে রাখা হলেও তিনি সহ তার স্ত্রী, নতুন প্রজন্মের আইকন তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন এর নামও বাদ দিতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। সেখানে যেন অন্য কোন ত্যাগী নেতাকে স্থান দেয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি একই কথা বলেন, আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী, কর্মী হয়েই থাকতে চাই।