নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : কাতারে আয়োজিত ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতে উঠেছে প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত জেলা নারায়ণগঞ্জ। পতাকা, ব্যনার, ফেস্টুনের পাশাপাশি বের করা হচ্ছে বিশাল শোভাযাত্রা। জেলা জুড়ে আকর্ষণ হয়ে উঠেছে প্রিয় দলের পতাকার রংয়ে রাঙ্গিয়ে তোলা বেশ কয়েকটি বাড়ির দালান। এমনকি সন্তানের নামও রাখা হয়েছে পছন্দের খোলোয়াড়ের নামের সাথে মিল করে। গেল কয়েকদিন ধরে এমনই উত্তেজনায় ভাসতে দেখা গেছে ফুটবল প্রেমীদের।
বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির ছাদে ছাদে উড়ছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানসহ প্রিয় দলগুলোর পতাকা। অলি-গলিতে এবং উন্মুক্তস্থানে বিশাল প্রজেক্টর লাগিয়ে খেলা উপভোগ করতেও দেখা যাচ্ছে ফুটবল প্রেমীদের। এখানেই থেমে যাননি ফুটবল ভক্তরা। গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ- কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর ফুটবল খেলা উপভোগের জন্য করেছেন নানা আয়োজন। ঢাক-ঢোল ও গানের ছন্দে সড়কে প্রদক্ষিণ করেছে বিশাল শোভা যাত্রাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক ও ভাইরাল করছে বিভিন্ন ধরণে মজার মজার ট্রলের ভিডিও। প্রিয় দলের সর্মথকরা ব্যক্ত করছেন চ্যম্পিয়ন হওয়ার প্রত্যাশাও।
হাজীগঞ্জ এলাকার রাজু জানায়, আমি ব্রাজিল সমর্থক। ব্রাজিল দলকে আমি ভালবাসি, কারণ এ দলে নেঈমার রয়েছে। যার খেলায় আমি মুগ্ধ হযেছি। আর এবার আমার দলই চ্যাম্পিয়ন হবে।
পাইকপাড়া এলাকার পুলক দেওয়ান নামে এক আর্জেন্টিনা সর্মথক বলেন, প্রতিবছরই আমরা নানা আয়োজন করা হয়। এবারো করেছি। বাড়ির ছাদে বড় আকাড়ের আর্জেন্টিনা পতাকা লাগিযেছি। আমাদের এলাকায় বেশীর ভাগ মানুষই আর্জেন্টিনাকে পছন্দ করে। যেদিন খেলা থাকে আমরা সকলে মিলে একসাথে প্রজেক্টরের মাধ্যমে খেলা দেখে উপভোগ করি।
একই এলকার আরেক আর্জেন্টিনা সর্মথক বলেন, আমার জন্মের পর থেকে কখনো বিশ্বকাপ জয়ী হতে দেখিনি। তবে শুনেছি বিশ্বাকাপ কাপানো প্লেয়ার মেরাডোনার হাত ধরেই মেসি এসছে। যেহেতু মেসি আছে, এবার ভালো কিছু পাবো।
এদিকে নিজ হাতে প্রিয় দলের জন্য উৎসর্গ করে আর্জেন্টাইন ভক্ত মো. আফজাল মুন্সী রাঙ্গিয়েছে তার বাড়িটি। সীমানাপ্রাচীর, আঙ্গিনা ও গেইটসহ সম্পূর্ণ বাড়িটি রং করা হয়েছে আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে। শহরের গলাচিপা এলাকার আউয়াল মিয়ার এ বাড়িটি এখন আর্জেন্টিনা-বাড়ি হিসেবেই পরিচিত। তার মেয়ের জামাতা প্রতিবছরই দলকে ভালবেসে এ উদ্যোগ গ্রহন করে থাকনে।
এ বিষয়ে মো. আফজাল মুন্সী বলেন, আমি নিজ হাতে প্রিয় দলের পতাকার আদলে পুরো বাড়ি রং করি। এটি করতে এ বছর খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকার মত। আমার এ বাড়ি দেখে ব্রাজিল, স্পেন অন্যান্য দলের সমর্থকরা ভালো বলে। আমার একটাই চাওয়া মেসি তার জাদু দেখাবে। এবার মেসি বিশ্বকাপ জয় করে নিয়ে যাবে।
এছাড়াও ফতুল্লা ৬ তলা ভবনটিও প্রস্তুত রয়েছে ব্রাজিলের পতাকার আদলে। শুধু তাই নয়, বাড়িটির নামও দেওয়া হয়েছে ব্রাজিল বাড়ি। এদিকে সুদূর কাতারে এবারের ফিফার বিশ্বকাপ খেলা হলেও বাংলাদেশে এর উন্মদনায় ভক্তদের যেন উচ্ছাসের শেষ নেই। আর তাই তো প্রিয় দল জার্মানির সাবেক খেলোয়াড়ের সাথে মিল করে নিজ সন্তানের নামও রেখে দিয়েছে হাজীগঞ্জ রেললাইন এলাকার আক্কাস মেম্বারের ছেলে কাজি সাব্বির।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে জার্মান দলের ভক্ত কাজি সাব্বির জানায়, আমি ছোট থেকেই জার্মান দলকে পছন্দ করি। আমার প্রিয় খেলোয়াড় ছিল ওজিল। তার খেলায় মুগ্ধ হয়েই আমি এ দলের সাপোর্ট করি। তাই একটা স্বপ্ন ছিল কখনো ছেলে সন্তান হলে তার নাম ওজিল রাখবো। তা পূরণ করেছি। তাছাড়া তিনি ইসলাম গ্রহণ করে মানুষের জন্য কাজ করে। সবমিলিয়ে তার প্রতি এজন্য আরো সম্মান বেড়ে গেছে। যদিও মেসুত ওজিলকে আর এ দলের জার্সিতে দেখা যাবে না। তারপরেও আমি আশাবাদি জার্মান সকল দর্শকদের ভালো খেলা দেখাবে। সামনে দলকে গুছিয়ে নামবে।
অন্যদিকে স্বামী জামার্নির ভক্ত হলেও বিভেদ নেই বলে জানালেন আর্জেন্টাইন ভক্ত গৃহিনী। তিনি বলেন, আমি মেসিকে নিয়ে গর্ব করি। মেসি অন্যান্য লীগ খেলা যখন খেলে তখন তার খেলায মুগ্ধ হননা এন দল নেই। তারপরেও বিশ্বকাপ এলে প্রতিপক্ষ হয়ে খেলায় নামে তাকে গুরু মানা অন্যান্য জুনিয়ররা। আর তার জন্যই আর্জেন্টিনা দলকে পছন্দ করি। আমারও আশা আর্জেন্টিনা দল যেন চ্যাম্পিয়ন হয়।
পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে পতাকা বেচাকেনায়ও দর্জি দোকান থেকে দোকান মালিকরাও ব্যস্ত সময় পার করছে। দোকানগুলোতেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্রেতা সমাগম। দোকানদাররা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকাই বেশী বিক্রয় করে থাকে। অন্যান্য পতাকা বিক্রি হলেও কম। প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা পতাকা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও ৩০ হাজার টাকার সুবিশাল পতাকাও তারা বানিয়েছেন। রেডিমেট জার্সি দোকানীতেও ক্রেতা রয়েছে। দাম একুট বেশী হলেও প্রিয় দলের জার্সি পড়ে খুশি ক্রেতারাও।