নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জে হারবাল আর নানা প্রকার কবিরাজি চিকিৎসার চটকদার বিজ্ঞাপনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাসা-বাড়িতে ডিসের চ্যানেল ঘুরালেই বিভিন্ন ছবি বা গানের মাঝখানে দেখাচ্ছে ওইসব অশালীন বিজ্ঞাপন। যেখানে নানা রকম যৌন উত্তেজক ও যৌন সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয় নারীদের অশোভনীয় ছবি ও দৃশ্য। বলা হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্কদের নানা গোপনীয় কথা বেশ খোলামেলাভাবেই। যার কারণে যে কোন সময়ই পরিবারের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে টিভি দেখাও এখন বেশ লজ্জার হয়ে দাড়িয়েছে।
জানা গেছে, এসব হারবাল প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অশ্লীল ভাষায় সিডির ক্যাসেট, ডিভিডির ক্যাসেট ও ক্যাবল টিভি চ্যানেল (ডিস) মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। শুধু তাই নয়, সড়কের পাশে ফুটপাত, সিডি-ডিভিডি’র দোকান কিংবা যেখানে সেখানে লিফলেট ছড়িয়ে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করছে। এছাড়াও বড় বড় দালান ও বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের দেয়ালগুলোতেও চোখে পড়ে অশ্লীল ভাষায় মুদ্রিত সেসব লিফলেট। এতে জনসম্মুখে চলাচলের সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই ছোট ছোট সোনামনিদের নানা প্রশ্নেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে বড়রা। কিন্তু এদিকে প্রশাসনের তেমন একটা নজরদারী লক্ষ করা যাচ্ছে না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওইসব জ্ঞানহীন, মুনাফলোভীরা তাদের ব্যবসার পরিধি আরও বৃদ্ধি করছে।
সচেতন বোদ্ধা মহল বলছেন, চিকিৎসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এদের অনেকেই হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। বিশেষ করে মানুষের যৌন শিক্ষা সচেতনতা কম থাকাকেই তারা প্রতারণার প্রধান মাধ্যম হিসেবে এ পথ বেছে নিয়েছে। ওষুধ খাওয়ার পর পরই বিভিন্ন রোগের ১শত ভাগ নিরাময়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আর এতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে রোগীরা।
অভিযোগ রয়েছে, হারবাল চিকিৎসার নামে এরা অনেকেই যৌন উত্তেজক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত ভারতীয় গরুর ট্যাবলেট ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটগুলো করে হালুয়া বানিয়ে হারবাল ওষুধ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। হারবাল প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চিকিৎসকরা রোগীদের আকৃষ্ট করতে নিজেরাই ওষুধের বাহারী নাম তৈরি করে। বাহারী আর ইসলামী কায়দার নামে দেখে রোগীরাও সেসব হারবাল ওষুধের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। হারবাল প্রতিষ্ঠানগুলো এত অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সাধারণ রোগিদের সাথে প্রতারণা করে গেলেও এখনো পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়েনি। প্রশাসনিক কোনো বাধা-বিপত্তি না থাকায় হারবাল ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ তাদের এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ড্রাগ লাইসেন্সের আড়ালে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে বিকিকিনি করছে। আবার অনেকের সঠিক ড্রাগ লাইসেন্সও নেই। কিন্তু প্রচারণার ক্ষেত্রে তারা কোন বাধা বিপত্তির শিকার হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাষাঢ়া এলাকার এক বাসিন্দা কয়েকটি প্রশ্ন রেখে বলেন, এ ধরনের অশ্লীল, সুড়সুড়িমূলক বিজ্ঞাপন সেন্সরের ছুরি থেকে বাঁচি কী করে? এগুলো দেখার দায়িত্বে কি কোনো দায়িত্বশীল, রুচিবান মানুষ নেই? নেই কোনো সংস্কৃতিবান শিক্ষিত মন্ত্রী-মিনিস্টার? এক দিন-দুদিন নয়, বছরের পর বছর এ ধরনের সম্পূর্ণ অহেতুক, অযৌক্তিক যৌন আবেদনমূলক বিজ্ঞাপন টিভি, আইপি টিভি ও ডিস চ্যানেলে দিনে এক শত বার করে দেখানো হবে, আর তারপরও আমরা মনে করব আমাদের তরুণ-তরুণীরা বেপথু হবে না? আমরা তো লজ্জায় পড়ে যাই। যখন আমাদের সামনে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি বসা থাকে। আর হঠাৎ করেই এগুলো চলে আসে তখন কেমন লাগে !
একটাই দাবী জানাবো, এসব অশ্লীলতার বিষফোড়া তো ক্যান্সারাক্রান্ত করে ফেলছে দেশটাকে। তাই গুটিকয়েক দুষ্ট প্রকৃতির লোকের অপতৎপরতা ছাড়া বাকি শতকরা ৯০টি বিজ্ঞাপনই তো যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। অনেকগুলোতে পাই হাস্যরসের খোরাক। কিছু কিছু বুদ্ধিদীপ্ত বিজ্ঞাপনচিত্র তো রীতিমতো পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তবে বন্ধ করা হোক বিজ্ঞাপনের নামে এসব নোংরামী।