নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব সংবাদদাতা ) : সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে. এম. খালিদ হাসান এমপি বলেছেন, এই লোকজ উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এই মেলা। বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য ফুটে উঠে মেলায়। ২২শে মঙ্গলবার ফেব্রুয়ারি বিকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জাদুঘরে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী লোককারু শিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসকল কথা বলেন।
কে. এম. খালিদ হাসান বলেন, মুক্তিযোদ্ধদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এই জনপদ লড়াই করার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল, এই জনপদ হার মানেনি। মুঘলদের সাথেও তারা লড়াই করেছে। ১২ ভূইয়ার এক ভূইয়া এই সোনারগাঁয়ে ছিলেন। এই সোনারগাঁয়ে মুক্তিযোদ্ধা যেমন জন্মেছে, সোনার মানুষ জন্মেছে। জাতির পিতা এই সোনারগাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন বলেই শিল্পাচার্জ জয়নাল আবেদীনের হাত ধরে এই কারু ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ১৫ আগষ্টের সকল শহীদসহ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই লোকশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই আজ সোনারগাঁয়ের জনগণ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এই বাংলা আগে বাঙালি শাসন করেনি। পিতা তোমার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ বাঙালিরা শাসন করেছে। এই বাংলা স্বাধীন করতে তিতুমীর রক্ত দিয়েছে, সুভাস চন্দ্র বোস রক্ত দিয়েছে। তারা পারেনি, বঙ্গবন্ধু অবশেষে পেরেছে। আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সেদিন ৭ই মার্চ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহ দিয়েছিল। তার প্রতিও আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সচিব মো. আবুল মনসুর এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) এর মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, নারায়ণগঞ্জ ৩ এর সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ এলাহী ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সোনারগাঁও উপজেলা কমান্ড ওসমান গণি। এসময় সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহ।
এদিকে, সোনারগাঁও এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সেই সাথে দেশ সহ বিশ্বে প্রচার তুলে ধরতে মাস ব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়। বিশ্বে পর্যটন নগরী হিসেবে তুলে ধরতে নতুন বাজেট বরাদ্দ করে নবরুপে নান্দনিক সৌন্দর্যে সোনারগাঁও এর লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনকে সাজানো হবে বলে উপস্থিত অতিথিগণ সকলেই বক্তব্যে তুলে ধরেন।
এবারের মেলার আকর্ষণ গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম ভালোবাসার তামা-কাঁসা-পিতল শিল্পের বিশেষ প্রদর্শনী। ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে ৬০ জন কারুশিল্পী মেলায় প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ৩০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, চট্রগ্রামের নকশিপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁও এর হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, নকশি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতলপাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁও এর পাটের কারুশিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্তশিল্প সহ বেশ কিছু স্টল থাকছে মেলায়।
এছাড়াও লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে প্রতিদিনই থাকছে দর্শনার্থীদের জন্য মঞ্চে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী, মুর্শিদী গান, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি।