নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বন্দর উপজেলার মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ লাখ টাকার উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। যার মধ্যে ১৫ লাখ টাকার সরকারী অনুদানের সাথে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরো ৩৫ লাখ যোগ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির উন্নয়ন করা হবে।
তিনি বলেছেন, বন্দরে ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সত্যিকার অর্থে দূর্নীতি ছিল। মানুষ এখনো সঠিক ভাবে জানেন না আমার কোন রোগটা হলে আমি কোথায় যাবো। বন্দরে চিকিৎসা সেবার মান আরো উন্নয়ন করা অতি জরুরি। সেই প্রয়োজনেই আমি বন্দর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি উন্নয়নের উদ্যোগ নিচ্ছি। উদ্যোগটি নেওয়ার পর ইতোমধ্যে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন আমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সহযোগীতা করছেন। এজন্য সে অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার দাবীদার। ১২ জুলাই রবিবার সন্ধ্যায় বন্দর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কেন্দ্রে সরকার হতে প্রাপ্ত সংসদ সদস্যের ঐচ্ছিক তহবিলের অনুদানের চেক বিতরন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ দিন মোট ১৫০ জন অসহায় মানুষের মাঝে ঐচ্ছিক তহবিলের অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়। যার মধ্যে ৫০ জনকে ৫ হাজার টাকা করে এবং ১০০ জনকে ২৫০০টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকার চেক বিতরন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, কয়দিন আগে আমার এমপি পদ বদলে দেওয়া হলো। কেউ কেউ মনে চায় আমি মারা গেলে তারা এমপি হবে। শকুনের দোয়া গরু মরে না। দেশে এখন যে দুর্যোগপূর্ন পরিস্থিতি চলছে এটা রাজনীতি করার সময় না। যারা এই মুহুর্তে রাজনীতি করছেন তারা মৃত্যুর কথা ভূলে গেছেন। একদিন আমাদের সবাইকে মরতে হবে। এখন শুধু মানুষের জন্য কিছু করার সময় রাজনীতি করার সময় না। করোনা হলে আপনি মরবেন না এই কথাটা বললে আমাদের মারাত্মক ভূল হবে। আপনার হয়তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারনে আপনি বেচে যেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি সাথে করে ভাইরাসটা বাসায় নিয়ে যান তবে আপনার পরিবারে বয়স্ক মা বাবা, আপনার সন্তান আক্রান্ত হতে পারে। তাই আপনারা নিজে সুরক্ষিত থাকবেন। পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন এবং আপনার পাশের মানুষটিকে সুরক্ষিত রাখবেন।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত পরিশ্রম করছেন করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। সবাইকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা উনার সকল দিক নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। কিন্তু কেউ কেউ আবার চাপাবাজি করে চলেছেন। ১০ জন মানুষকে সহযোগীতা করে ছবি তুলে প্রচার করেন ৩০০ জনকে সহযোগীতা করেছি। আসলে আমরা এখনো ভাল হইনি বলেই হয়তো আল্লাহ আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন।
ঐচ্ছিক তহবিল থেকে অনুদান প্রাপ্তদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যারা চেক নিবেন তারা কাউকে একটি টাকাও দিবেন না। এটা দিয়ে আপনারা সাধ্যমত মুরগি কিনেন, ছাগল কিনে বাড়িতে পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। আপনারা আপনাদের বাড়ির আশে-পাশে সবজি গাছ লাগান। যা পারেন তাই লাগান। যাদের বাড়ি আছে তারা ছাদ কৃষি করেন। আপনারা করোনা দেখছেন কিন্তু দুর্ভিক্ষ দেখেন নাই। দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে করোনার থেকেও বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা কোন অনুষ্ঠানে এসে আমার প্রশংসা করে সময় নষ্ট করার দরকার নাই। মানুষের জন্য কাজ করেন। আপনারা কোন টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত হবেন না। কোন ঠিকদারের কাছ থেকে কমিশন নিবেন না। আপনারা মানুষের জন্য কাজ করেন আগামী নির্বাচনে জনগন আপনাদেরকেই বেছে নিবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কৃষি অফিসার ও চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখন হয়তো সব থেকে বেশি ব্যস্ত থাকার কথা শিক্ষা অফিসা আর কৃষি অফিসারকে। আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা লেখপড়া করতে পারছেনা। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রাইভেট স্কুল গুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বন্দরে অত্যন্ত ক্যাবেল চ্যানেলে একটি নিদিষ্ট সময়ে ক্লাস পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্কুল শিক্ষকদেরকেও বিনয়ের সাথে এগিয়ে আসতে হবে। আর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকেও এ ব্যাপারে যথাযথ সহযোগীতা করতে হবে। উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে আমি ব্যক্তিগত ভাবে অর্থায়ন করবো। আর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে ছাদকৃষি করার ব্যবস্থা করতে হবে। সামনের দিন গুলোতে দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে সবাইকে কৃষিতে আগ্রহী করতে আপনাকে কাজ করে যেতে হবে।
বন্দর উপজেলার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি বলেন, মদনপুর-মদনগঞ্জ রুটে কেউ একজন রেলওয়ের জমি দখল করে সেখানে মাজার বানিয়েছেন। এখন আবার সে রাস্তার পাশে টিনে বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করছেন। কিছুদিন পর দেখা যাবে সেখানে দেয়াল উঠছে। শীতলক্ষ্যা নদীতে নাসিম ওসমান সেতু চালু হলে রাস্তাটি ডাবল লেন করা হবে। তখন সমস্যা দেখা দিবে। এর থেকে আপনারা আগে থেকেই আইনি ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। কেন রাস্তার পাশে রেলওয়ের জমি দখল করা হচ্ছে। তাদের কাছে কোন বৈধ লিজ আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
চেক বিতরন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার। সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বন্দরবাসী আপনাদের সংসদ সদস্য হিসেবে একজন ভাল মানুষকে অভিভাবক হিসেবে পেয়েছেন। যিনি সার্বক্ষনিক আপনাদের নিয়ে চিন্তা করেন। আপনাদের জন্য কাজ করেন। আপনাদেরও উচিত উনার সম্মান রক্ষা করা। আমি হয়তো বদলী হলে চলে যাবো কিন্তু এই বন্দর আপনাদের আপনারই থাকবেন। আপনারা যে যার যার স্থান থেকে বন্দর উপজেলার মঙ্গলকর বিষয়টি চিন্তা করবেন এটা আমার অনুরোধ।
বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান ও বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ বলেন, আমাদের এমপি সেলিম ওসমান উনার কর্তব্য এবং দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছেন। ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের বলেন, এমপি সেলিম ওসমান এই করোনা কালে নিজের জীবনের মায়া করেননি। পরিবারের কথা ভাবেননি। মানুষের জন্য তিনি ছুটে এসেছেন। মানুষের জন্য দুই হাত ভরে সাহায্য সহযোগীতা করছেন। উনার একটাই কথা আমার দাদা খান সাহেব ওসমান আলী নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য অকাতরে দান করে গেছেন আমি আমার দাদার মতই করে যাবো।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানা উল্লাহ সানু, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা ইসলাম শান্তা, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম প্রমুখ।