নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : আগামী ৮ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীক ছাড়া এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ও বর্তমান দুই চেয়ারম্যান। এদিকে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হওয়ার প্রত্যাশায় ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন এক প্রার্থী। প্রার্থী হয়েছেন তার ছেলেও।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১১ প্রার্থীকে চূড়ান্ত হিসেবে ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ।
চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ, সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দুইবারের ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুয়েল, আলমগীর হোসেন ও মোশাঈদ রহমান। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে একজন বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন এবং অপরজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার।
বন্দর, মুছাপুর, ধামগড়, কলাগাছিয়া, মদনপুর; এই পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে প্রায় ৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বন্দর উপজেলা তিনদিক দিয়ে শীতলক্ষ্যা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও ধলেশ্বরী নদী দিয়ে বেষ্টিত। প্রতীক বরাদ্দের আগে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় বিধিনিষেধ থাকলেও প্রার্থীরা অনুসারী কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। ভোটের মাঠের তথ্য বলছে, চেয়ারম্যান পদে সাবেক ও বর্তমান দুই চেয়ারম্যানের মাঝে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে আসা মাকসুদ। এক্ষেত্রে, এবার উপজেলায় ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। যদিও মাঠ জরিপে এগিয়ে আছেন সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না পেলেও বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ রশীদ দলীয় সমর্থন পাচ্ছেন। তার বিপরীতে দলেরই আরেক প্রার্থী আবু সুফিয়ান দলীয়ভাবে সমঝোতায় রাজি হয়েছেন। তিনি রশীদকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এমন আলোচনা রয়েছে মাঠে। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি।
গত শুক্রবার মদনপুরের এক রিসোর্টে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে এমএ রশীদ ও আবু সুফিয়ান উভয়ই উপস্থিত ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যস্থতায় আবু সুফিয়ান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে রশীদের পক্ষে কাজ করার কথা জানিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল বলেন, নৌকা প্রতীক না থাকলেও দলীয়ভাবে রশীদের পক্ষেই আওয়ামী লীগের সমর্থন রয়েছে। সুফিয়ানের সাথে এই বিষয়ে বৈঠকটিও ইতিবাচকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে, ওই বৈঠকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে দলীয়ভাবে জানানো হবে।
তবে, এই বিষয়ে কথা বলতে আবু সুফিয়ানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে, এম এ রশীদ সমর্থন পাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানেরও। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তিনি এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রশীদকে সমর্থন দিচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একাধিক অনুষ্ঠানে রশীদকে সমর্থন দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। গতবারের নির্বাচনেও সেলিম ওসমান রশীদের পক্ষে ছিলেন। সেবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান হন এম এ রশীদ।
তবে, গতবার রশীদকে ছাড় দিলেও এবার বেশ শক্তভাবেই মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি এ উপজেলায় পরপর দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। মাঠপর্যায়ে তার বেশ সমর্থনও রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ ঘেঁষা কর্মকাণ্ডের কারণে গত ৩০ ডিসেম্বর জেলার ৬ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এই তালিকায় মুকুলও রয়েছেন। যদিও ভোটের মাঠে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে দাবি তার। বরং ভোটের মাঠে তার অবস্থার বেশ শক্ত বলে দাবি তার।
আতাউর রহমান মুকুল বলেন, ‘দল এবং ব্যক্তিগত দুইভাবেই আমি মাঠে আছি। আমি এই উপজেলায় জনগণের ভোটে দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তখনও যেমন সব দলের লোক আমাকে ভোট দিয়েছে, এবারও দেবে।’
এদিকে, তার ‘জনপ্রিয়তায়’ ভীত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ হোসেন তার নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ মুকুলের।
যদিও এই বিষয়ে মাকসুদ হোসেনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইবারের নির্বাচিত সানাউল্লাহ সানুর পথটি এবার সুগম নয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্ত অবস্থানে আছেন যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম জুয়েল।
নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবারও ছালিমা হোসেন ও মাহমুদা আক্তারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। গতবার অল্প ব্যবধানে পরাজিত হলেও সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা এবার জয় পেতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন জোরেসোরে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৩ জুলাই প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামবেন প্রার্থীরা।
এ উপজেলায় ৫৪টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ৫০০ জন, নারী ভোটার ৬৪ হাজার ৬২ জন এবং হিজড়া ভোটার ২ জন।