বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে নানা বিতর্ক

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বন্দর সংবাদদাতা ) : বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আগামী ২৬ নভেম্বর সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে এ কাউন্সিল হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এ কাউন্সিলকে ঘিরে চলছে নানা বিতর্ক। এখনও আওয়ামী লীগের এ কাউন্সিলে নিমন্ত্রণ পাননি জেলা ও থানার অনেক শীর্ষনেতৃবৃন্দ।

এদিকে বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির এলিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আমি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসছি অথচ সম্মেলনে আমি এখনও নিমন্ত্রণ পাইনি। এ দু:খ কোথায় রাখব। বিগত সময়ে আমি দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে বিএনপির হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। অনেক সময় রাতে বাসায় ঘুমাতে পারি নাই। কিন্তু কখনো দল ছেড়ে যাইনি।

তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করে গেছি। সবসময় দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন। দল থেকে কী পেলাম সেটা কখনো বুঝতে চাই নাই। দল ক্ষমতা থাকাবস্থায় মামলা খেয়েছি। অথচ এখন দলের সুসময়।

আমাদের মাইনাস করে একটি সুবিধাবাদী মহল নিজেদের পাল্লা ভারি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু প্রার্থী হচ্ছে যাদের আওয়ালীগের দুর্দিনে কখনো দেখা যায়নি। কালো টাকাকে সাদা করার চেষ্টায় তারা এখন প্রার্থী হচ্ছে।

একটি ফেক কমিটি করার জন্য একটি মহল চেষ্টা করছে। ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। দলীয় হাইকমান্ড এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে সামনে কঠিন পরিস্থিতির দোড়গোরায় পৌঁছতে হবে।

২০১৬ সালের পর ৯ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জেলার প্রতিটি উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি হাই-বাদল জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একত্রিত করতে ব্যার্থ হওয়ায় এই কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা কমিটির নেতৃত্বে রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা কমিটি ঘোষণা নিয়েও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন তারা। দুটি উপজেলাতেই বর্তমান সংসদ সদস্যদের সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ বন্দর আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমান একজন জাতীয় পার্টির এমপি হওয়ায় এখানে হয়তো তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা যাবে না। বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ রশীদ।

তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার কারণেই সাম্প্রতিক উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এমনটাই দাবি বন্দরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

আগামী ২৬ নভেম্বর বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবারও এমএ রশীদকেই সভাপতি করার দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই তার সমর্থকরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত হয়তো তাকেই আবার সভাপতি করা হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা কী পাবে? তিনি সভাপতি হওয়ার কারণেই উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন আবার নতুন করে তাকেই যদি সভাপতি করা হয় তাহলে সম্মেলনের কী দরকার ছিলো এমনটাই দাবি ত্যাগীদের।

অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী এমএ সালাম এবং ধামঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ ও মহানগর শ্রমিকলীগের সাবেক সভাপতি কাজিম উদ্দিন প্রধান।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন গাজী এমএ সালাম। যদি প্রকৃতভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে ও ২৩৭ জন কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে পদ দেয়া হয় তাহলে সালাম চেয়ারম্যানই হবেন সাধারণ সম্পাদক এমনটাই জানিয়েছেন সালাম চেয়ারম্যান সমর্থকরা। কারণ ছাত্র জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অটল থেকে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলীয় সকল কার্যক্রম করে যাচ্ছেন গাজী এমএ সালাম।

এ বিষয়ে মহানগর শ্রমিকলীগের সাবেক সভাপতি কাজিম উদ্দিন প্রধান বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। কলাগাছিয়া ইউনিয়নবাসীর ত্যাগ যদি থেকে থাকে ইনশাল্লাহ ২৬ নভেম্বর আমি সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হব আশা করছি। বন্দর উপজেলার মধ্যে এক সময় এই কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফরাজীকান্দা নেতৃত্ব দিয়ে আসত। আর এখন আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। এর ধারাবাহিকতা আমাদের পুর্নরুদ্ধার করতে হবে।

অপরদিকে ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাসুম আহমেদ বলেন, কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হলে আমি বিপুল ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবো আশা করি।

আগামী সম্মেলন প্রসঙ্গে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ রশীদ বলেন, প্রার্থীদের মূল্যায়ন করেই কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমেই নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী একাধিক থাকলেও সভাপতি পদপ্রার্থী আমি ছাড়া এখনো কেউ নেই।

সম্মেলন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কোন নিমন্ত্রণ আমি এখনও পাইনি। অথচ আমি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি কিন্তু এখনো পর্যন্ত কিছুই জানিনা।

এ বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন এবং ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিছু কিছু ওয়ার্ডে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে অযোগ্যদেরও হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা কিছু নেতাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তাই এবার উপজেলা আওয়ালীগের কমিটি গঠনের বেলায় যেনো স্বজন-প্রীতি না করে এবং কালো টাকার কাছে জিম্মি না হয়ে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয় এমনটাই দাবি জানিয়েছেন বন্দর উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

add-content

আরও খবর

পঠিত