নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ফতুল্লার কুতুবাইল এলাকায় দিন দিন দুর্ধর্ষ হয়ে উঠছে মৃত আলাউদ্দিন হাজীর পুত্র আক্তার হোসেন ও সুমন হোসেন। বিএনপির নেতা আলাউদ্দিন হাজীর মৃত্যুর পর তার পুত্র আক্তার ও সুমন আওয়ামীলীগার বনে গিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সম্প্রতি ফতুল্লার কাঠেরপুল ও কুতুবাইল এলাকার গার্মেন্টেসের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে মরিয়ে হয়ে উঠেছে দুই ভাই। এছাড়াও বিদেশী মদ ব্যবসা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে আক্তার ও সুমনের বিরুদ্ধে।
গত কয়েক বছর আগে র্যাবের হাতে বিদেশী মদ ও বিয়ারসহ আটক হয়েছিল আক্তার ও সুমন। এরপর অনেকটা নিশ্চুপ থাকলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সাথে আতাঁত করে আক্তার ও সুমন এখন আওয়ামীলীগার হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে আক্তার ও সুমনের প্রভাবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে আক্তার ও সুমন।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ফতুল্লার আলাউদ্দিন ওরফে কুতুবাইলের আলাউদ্দিন হাজী কর্নফূলী টেক্সটাইল নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। যার ব্যবসায়ীক অংশিদার ছিলেন সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর গিয়াস উদ্দিনকে ব্যবহার করে সকল অপকের্মর সাথে ছিলেন এই আলাউদ্দিন। বিএনপির ৫ বছরের শাসন আমলে এহেন কোন কর্মকান্ড করেননি যা লিখে শেষ করা যাবে না। এলাকার মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে জমি দখল এমনকি চোরাই পথে গ্যাস নিয়ে মিল চালানোর সময় তিতাস কর্তৃপক্ষ হাতে নাতে ধরে ফেললে তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্ণফূলি মিলে বেধে রাখা হয়। এক পর্যায়ে সেভেন মার্ডারের আসামী নূর হোসেন হাজী আলাউদ্দিনের সাথে যোগ দিলেও তখনো নূর হোসেন লাইমলাইটে আসেনি।
আরো জানা গেছে, হাজী আলাউদ্দিন বিএনপির শাসন আমলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কৃষকলীগ নেতা সোলায়মান ও মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনকে প্রকাশ্যে হত্যাসহ বেশ কয়েক জনকে হত্যা করে ক্ষমতা ও টাকার জোরে পার পেয়ে যায়। ঐ সময় তার দুই ক্যাডার ইবু ও রুবেল নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে র্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে মারা যায়। হাজী আলাউদ্দিনের ক্যাডার সন্ত্রাসী নয়ন এখনো এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছে। আর তাকে ব্যবহার করছে আক্তার ও সুমন। ঐ সময়ের বির্বতনে আলাউদিন হাজীর কন্যা স্বামী হারা হয়, স্ত্রী, বড় ছেলে মোক্তার ছোট ভাই আউয়াল ও সালাউদ্দিনের স্বাভাবিক মৃত্যুর পর অনেকটা ভেঙ্গে পরলে দুই ছেলে আক্তার ও সুমন হাজী আলঅউদ্দিনের স্থালাভিষক্ত হন। এরই মধ্যে উত্থান ঘটে সেভেন মার্ডারের প্রধান আসামী নূর হোসেনের। নূর হোসেনের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত আরিফুল হাসান তখন প্রভাবশালী। পরিচয় ঘটে আক্তার ও সুমনের সাথে। ঘুরে দাড়াতে চেষ্টা করে হাজী আলাউদ্দিন।
এরই মধ্যে ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসীদের গডফাদার যাকে নিয়ে সমগ্র বিশ্বে নারায়ণগঞ্জ আলোচিত হয় সেই নূর হোসেনের ক্যাডার আরিফুল হাসানের পরিচয় ঘটে আক্তার-সুমনের। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল সেভেন মার্ডারের পর নূর হোসেনের সাথে সুমনও পালিয়ে যায়। এবং একই বছর নূর হোসেনের সাথে গ্রেফতার হয়। আদালতে চার্জশীট দাখিলের পর মামলা থেকে ৫জনকে অব্যাহতি দিলে নূর হোসেনের পলাতক সহযোগীরা ফিরতে শুরু করে। একই সাথে আক্তার ও সুমন নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখলে কৌশল ব্যবহার করেন। কিন্তু র্যাবের হাতে বিদেশী মদসহ কাউন্সিলর আরিফ, আক্তার ও সুমন গ্রেফতার হলে পরবর্তিতে জামিনে এসে অনেকদিন নিশ্চুপ ছিলেন আক্তার ও সুমন। পরে মহানগর আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতাদের আর্শিবাদে আওয়ামীলীগার বনে যায় আক্তার ও তার ছোট ভাই সুমন। ফতুল্লায় আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাদের কোনঠাসা করে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে সকল অভিযোগের ব্যাপারে আক্তার জানান, আমরা নিজেরা ব্যবসা করে চলি। আমাদের পুরো পরিবার ব্যবসায়ী, এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। আর আমাদের কাছে শাহালম সাহেবও এসেছেন, শামীম ওসমান সাহেবও এসেছেন। আমরা ব্যবসা করি। সকলেই আসতে পারে তাই বলেতো সব দল করা সম্ভব না। আমাদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে আওয়ামীলীগের নেতারা কোনঠাসা হবে তাও সঠিক নয়। তাছাড়া আমার বাবাকে নিয়ে যেসব অভিযোগ তাও মিথ্যা, তিনি ব্যবসায়ী। কেন হত্যায় ও অনিয়মে জড়িত থাকবে।
এদিকে একই অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সুমনের ব্যবহৃত নাম্বারটিতে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই কোন মন্তব্য জানা যায়নি।