নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ফতুল্লায় ছাগল চুরির অপবাদে দুই যুবককে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের অফিসে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩১ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদারের কার্যালয়ে। তবে ভিডিওটি ৯ ডিসেম্বর রাত দশটার দিকে ফেসবুকে কেউ একজন পোস্ট দিলে তা মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হলে বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে।
দুই মিনিট সাত সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, বিশ থেকে বাইশ বছর বয়সী দুই যুবককে একটি বিলাসবহুল কক্ষে মাটিতে ফেলে কয়েকজন যুবক পালাক্রমে পেটাচ্ছে। এরপর তাদের দুই পা জাপটে ধরে উপরে তুলে শুন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাদের মাথা নিচে থাকে। এ অবস্থায় তাদের পায়ে, পিঠে ও কোমরে বর্বরের মতো এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদার তার চেয়ারে বসে নির্যাতনের বিষয়টি উপভোগ করছেন এবং আরো জোরে পিটানোর নির্দেশ দিচ্ছেন।
মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদারের টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে টুপি পাঞ্জাবি পড়া পঞ্চাষোর্ধ দুই ব্যক্তিও বিষয়টি খুব স্বাভাবিকভাবে দেখছিলেন। মেম্বারের বাম পাশে মাথায় ঘোমটা দেয়া একজন ভদ্রবেশি নারীও নির্যাতনের ঘটনা উপভোগ করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী আলাউদ্দিন মেম্বারের স্ত্রী হতে পারেন।
এ সময় ওই কক্ষে অন্তর আরো দশ থেকে পনেরজন মানুষ চারপাশে বসে ও দাঁড়িয়ে থেকে দুই যুবককে এই নির্যাতনের ঘটনা দেখছিলেন। দুই যুবকের কান্নাকাটি আর আর্তচিৎকারে কারো মনে একটু মায়া দয়া হয়নি। কেউ প্রতিবাদ করে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। নৃশংস এ ঘটনা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে দেখছেন সবাই।
ভিডিওটির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষ দিন তথা থার্টিফার্স্ট নাইটে নাইম ও রাতুল নামে স্থানীয় দুই যুবককে ধরে এনে চোর আখ্যা দিয়ে ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে গরু পেটানোর মতো পেটানো হয়। পরবর্তীতে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশে তাদের সোপর্দ করা হয়েছিলো।
নির্যাতনের শিকার নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার ছেলে প্রিন্টিং কারখানায় কাজ করে। ৩১ ডিসেম্বর রাতুলের সঙ্গে আমার ছেলেরে ধরে নিয়ে যায়। মারতে মারতে নিয়ে গেছে। পরে আবার আলাউদ্দিন হাওলাদার তার অফিসে নিয়ে ইচ্ছামত মারছে।
নাইমের মায়ের ভাষ্য, আমার পোলায় অন্যায় করলে আমাগো জানাইতো, পুলিশরে দিতো, হেয় অমন কইরা মারলো ক্যান। আমি এর বিচার চাই।
এদিকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদার মারপিটের কথা স্বীকার করে বলেন, নাইম ও রাতুল ছাগল চুরি করেছিলো। সিসি টিভির ফুটেজে চুরির ঘটনা ধরা পড়েছিলো। পরে ছাগলের মালিক থানায় অভিযোগ করলে একজন দারোগা আসেন এবং আমার উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য। পরে রাতুল নামের একজনকে আমার কাছে ধরে আনার পর সে চুরির কথা স্বীকার করছিলো না। পরে তাকে কয়েকটি পিটুনি দিলে সে স্বীকার করে এবং নাঈম সাথে ছিলো জানায়।
তিনি আরও বলেন, নাঈমকে ধরে আনার পর প্রথমে স্বীকার না করলে তাকেও কয়েকটা পিটানি দেওয়া হয়। পরে তারা স্বীকার করে জালকুড়ি ছাগল বিক্রি করে দিয়েছে। এরপর দারোগাকে খবর দিলে সেই ছাগলসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
অপরাধ করলে পুলিশ আছে। আইন আদালত আছে, সেখানে এমনভাবে মানুষকে পেটানো আইনগত অপরাধ, সেটি জানেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, হ্যাঁ, এটা অন্যায় হয়েছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নাই। তাই মাইরটা একটু বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো ছাগল উদ্ধার করছি।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদার রাজনৈতিক কোন দলের পদ পদবি না থাকলেও এলাকায় প্রভাবশালী বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী লালন পালনের অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতনের ওই ভিডিওচিত্রটি দেখে তা প্রমাণ হয়। এছাড়া নিজ এলাকায় এবং এলাকার বাইরে যাওয়া আসায় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চলাফেরা করেন। বিভিন্ন সময়ে লোকজনকে ধরে এনে তার টর্চার সেলে অর্থাৎ তার কার্য্যালয়ে নির্যাতন করা হয়।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। এটা অবশ্যই অপরাধ। এভাবে যদি পিটিয়ে থাকে, আর কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।