ফতুল্লায় প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা এর ২৪ ঘন্টার ভেতর প্রধান আসামী ও মূল পরিকল্পনাকারীসহ ০৪ জন র‌্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

গত ২৭/০৬/২০২৪ তারিখ আনুমানিক ১:৩০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন উত্তর কাশিপুর আলীপাড়া মোড় এলাকায় মসজিদের সামনে আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া (৬৫) নামক এক ব্যক্তিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে ভিকটিমের ছেলে বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৫৫, তারিখ ২৯/০৬/২০২৪। এ পাশবিক ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাটি দেশজুড়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত মামলার আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১১ দ্রুত ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের জের ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ২৯ জুন ২০২৪ তারিখ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন চর সৈয়দপুর এলাকা হতে উক্ত মামলার প্রধান আসামী ১। আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫), পিতা-মোঃ সফর আলী মাঝি (৫৮), সাং-কাশিপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়ণগঞ্জকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে আসামীর দেয়া তথ্য মতে র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-১ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে অন্যান্য আসামী ২। মোঃ আল আমিন (২২), পিতা- মোঃ আওলাদ হোসেন, সাং- পশ্চিম ভোলাইল উত্তর কাশিপুর, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়ণগঞ্জ,  মোঃ রাসেল (২০), পিতা- মোঃ জাফর, সাং-পশ্চিম ভোলাইল উত্তর কাশিপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়ণগঞ্জ এবং ৪। মোঃ সানি (২৯), পিতা- মোঃ সেলিম, সাং-পশ্চিম বুলাই, থানা- ফতুল্লা, জেলা- নারায়ণগঞ্জদেরকে গাজীপুর কালিয়াকৈর থানাধীন রতনপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ঘটনার তদন্তে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামীরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং একাধিক মামলার আসামী। পক্ষান্তরে নিহত ভিকটিম সুরুজ মিয়া এলাকার সাবেক মেম্বার এবং কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থসম্পাদক। এছাড়া তিনি আলীপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও এলাকার গণ্যমান্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভিকটিমের অটোরিকশা গ্যারেজ ও ইট-বালুর ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রধান আসামী আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫) এবং তার ভাই সালাউদ্দিন ওরফে সালু (৩২) এর সঙ্গে ভিকটিমের পূর্ব থেকেই বিরোধ ছিল। ঘটনার ১০-১৫ দিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী হীরা ও তার ভাই সালু এলাকার একটি নির্মানাধীন ভবনে গিয়ে ভবনের মালিকের নিকট চাঁদা দাবি করে। ওই ভবনের মালিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে ভিকটিম সুরুজ মিয়ার কাছে বিচার দেন। ভিকটিম গ্রেফতারকৃত আসামী হীরা ও সালুর বাবাকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং হীরা ও সালুকে চাঁদাবাজী থেকে বিরত থাকতে বলেন।

পরবর্তীতে ২৭ জুন ২০২৪ তারিখ সুরুজ মিয়া আলী পাড়া জামে মসজিদে থাকাকালীন গ্রেফতারকৃত আসামীরা আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫) এর নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন প্রত্যেকের হাতে রামদা, বগিদা, ছোরা লোহার রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলী পাড়া জামে মসজিদের দান বক্সের সামনে রাস্তায় ভিকটিমের বড় ছেলে রাজু (৪৩) এবং ছোট ছেলে জনি (৪১) এর পথরোধ করে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামী হীরার হাতে থাকা রামদা দিয়ে রাজু (৪৩)’র মাথায় কোপ দিতে গেলে রাজু হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তার হাতের কনুয়ের উপর আঘাত লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এছাড়াও অন্যান্য আসামীরা রাজু এবং জনি কে এলোপাতাড়ী আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে মুমূর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখে। ইতিমধ্যে যোহরের নামাজ শেষে ভিকটিম মসজিদ থেকে বেরিয়ে উক্ত ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছালে ভিকটিমকেও আঘাত করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ভিকটিম আত্নরক্ষার্থে আক্রমণকারীদের একজনের হাত থেকে রামদা ছিনিয়ে নিয়ে আত্নরক্ষার চেষ্ঠা করাকালীন গ্রেফতারকৃত আসামীরাসহ অন্যান্য আসামীরা ভিকটিমের মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরুজ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

গ্রেফতারকৃত ১নং আসামী আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫) এর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় চুরি, ডাকাতি, হত্যা চেষ্টা এবং গুরুতর জখমসহ দশ এর অধিক মামলা এবং জিডি, গ্রেফতারকৃত ২নং আসামী মোঃ আল আমিন (২২) এর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ ০৫টি মামলা এবং জিডি এবং গ্রেফতারকৃত ৩নং আসামী মোঃ রাসেল (২০) এর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় ০২টি মাদক মামলা চলমান রয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত