নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( মিলন হোসেন, বদলগাছী ) : তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে/সব গাছ ছাড়িয়ে/ উকি মারে আকাশে। মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়/একেবারে উড়ে যায়;/কোথা পাবে পাখা সে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চির চেনা তালগাছ কবিতাটিরই যেন বাস্তব উদাহারণ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ সেই তাল গাছের মতই একপায়ে দাঁড়িয়ে একহাত চালিয়ে প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে সমাজের সুস্থ সবল মানুষকে পিছনে ফেলেই এগিয়ে চলেছে আজাদ। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভাগ্য বিরম্বনায় ডান হাত আর ডান পা হারিয়ে পড়াশুনার ইতি টানতে হলেও তার পথচলা আর উচ্চ আঙ্খাকা থেমে থাকেনি যেন পাখা না থেকেও উড়ার বড় স্বাধ। সে উপজেলার মোঃ লুৎফর রহমানের ছোট ছেলে বলে জানা গেছে। তার ডান হাত ও ডান পায়ের পুরো অংশ কাটা হয়েছে। আজাদের বাবা পেশায় একজন কৃষক। দুই ভাই ও এক বোন এর মধ্যে সে ছোট। শনিবার সকাল ১০টায় পাহাড়পুর বাজারে আজাদের দোকান খাজাবাবা টেলিকমে গিয়ে দেখা যায় এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে মোবাইল ফোন কিনতে আসা গ্রাহককে মোবাইল দেখাচ্ছেন সে।
একপর্যায়ে বাম হাতে সিম রেজিষ্ট্রেশন করাচ্ছেন। এক হাতে মোবাইল নম্বর লিখে ফ্লেক্সিলোড দিচ্ছে। প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে সে এখন সফল ব্যবসায়ী। কথা হয় আবুল কালামের সাথে সে জানায় ১৯৯৬ সালে ২রা জুন দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে বৈদ্যুতিক স্পর্শে গুরুত্বর আহত হয় আমি। আহত অবস্থায় প্রথমে জয়পুরহাট সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে সুস্থ হলেও আমার ডান হাত ও ডান পা পুরোটায় কেটে ফেলতে হয়। বাড়িতে বেকার বসে বসে অতিকষ্টে ৮-১০ বছর সময় অতিবাহিত করি। একসময় মনে হতে লাগল আমি সমাজের বোঝা। ঠিক করি কিছু একটা করতে হবে। এমরান ও বাদশার অনুপ্রেরনায় ২০০৭ সালে ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে গ্রামীন ফোনের ফ্লেক্সি লোডের এজেন্ট নেয়। পাহাড়পুর বাজারে আমার কোন জায়গা ছিল না।
বাদশা ও এমরানের দোকানের সামনে চেয়ার টেবিল নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। আব্দুল্লাহ বেমুখ হননি। তিন বছরে পেয়ে যাই সাফলতা। তিন বছরের মাথায় পাহাড়পুর আদিবাসি স্কুল মার্কেটের একটি দোকান ঘর ৪০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে ভাড়া নেয়। ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি মোবাইল চার্জার, হেড ফোন, ব্যাটারী ও নতুন মোবাইলসহ যাবতীয় মোবাইল সামগ্রী বিক্রি করি। এখন আমি প্রতিদিন যা আয় করি তাদিয়ে খুব ভালোভাবে চলতে পারি। আবুল কালাম আজাদ আরও জানায় আমি প্রতিবন্ধি কিন্তু সমাজের বোঝা নয়। প্রতিবন্ধিরা পারে এটা আমি দেখিয়ে দিয়েছি। সমাজের সব প্রতিবন্ধিকে আমি বলতে চাই চেষ্টা করুন নিজে কিছু করার। প্রতিবন্ধকতাকে হার মানানো এই ব্যক্তি প্রতিবন্ধকতার কারণে এখন ঘর বাঁধা হয়নি। সমাজের কেহ এগিয়ে আসলে আমি সে বিয়ে করবে বলে জানায়। অবশেষে কান্না জড়িত কন্ঠে সে জানায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আকুল আবেদন তিনি যেন সকল প্রতিবন্ধিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সহযোগিতা করেন।