নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (সোনারগাঁও প্রতিনিধি) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পৌরসভার রাইজদিয়া এলাকায় পুলিশ কনষ্টেবল আরিফুল ইসলাম আরিফ হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার ৪ আগস্ট সোনারগাঁও থানার এসআই আল আমিন তালুকদার বাদী হয়ে নিহত পানের দোকানদার মতিনের ভাইদেরসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ্য ও অজ্ঞাতনামা ৩৫ জনসহ ৪৮ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে নিহত পুলিশ সদস্যের হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও নিহত পান দোকানদার মতিনের পক্ষে থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি কেউ। এদিকে নিহত পুলিশ কনষ্টেবল আরিফুল ইসলাম আরিফের লাশ ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু পান দোকানদার মতিনের লাশের ময়না তদন্ত শেষে থানায় নিয়ে আসলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানা থেকে কেউ তার লাশ নিতে আসেননি। এদিকে নিহত মতিনের মেয়ে শিউলী আক্তার বলেন, পরিবারের পুরুষ সদস্যরা গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাবার লাশ থানা থেকে কে নিয়ে আসবে সেই সাহস পাচ্ছে না তারা। গ্রেফতারের ভয়ে আমরা থানায় যেতে সাহস পাচ্ছিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে রাইজদিয়া এলাকায় গেলে এলাকাবাসী ও নিহত মতিনের স্বজনরা জানায়, পান দোকানদার মতিন নিহত হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গ্রেফতার আতংকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে মতিনের ৬ ভাই ও এক ছেলেসহ পুরুষ আত্মীয়-স্বজনরা। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশের গ্রেফতার আতংকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে পৌরসভার রাইজদিয়া, নোয়াইল, দরপদ ও ঠোটালিয়া দরপর এলাকার ৪টি গ্রামের পুরুষ। ৪টি গ্রামেই পূরুষ শূন্য রয়েছে শিশু ও নারী ছাড়া ।
মতিনের স্ত্রী নুরতাজ বেগম ও এলাকাবাসী জানান, গত বুধবার বিকেলে সোনারগাঁও থানার এএসআই ফখরুল ইসলাম ও পুলিশ কনষ্টেবল আরিফুল ইসলাম আরিফ সাদা পোশাকে পৌরসভার রাইজদিয়া এলাকা দিয়ে মোটর সাইকেল যোগে নোয়াইল এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় নিহত মতিন ও তার স্ত্রী নুরতাজ বেগম গরুর খড় নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আসার সময় এএসআই ফখরুল ইসলামের মোটর সাইকেলটি গতিরোধ করে মতিনকে মাদক ব্যবসায়ী বলে তার দেহ তল্লাশি করতে থাকে। এ সময় মতিন পুলিশের ভয়ে রাস্তার পাশের বিলের পানিতে ঝাপ দেয়। কনষ্টেবল আরিফও তাকে ধরতে পানিতে ঝাপ দেয়। এক পর্যায়ে আরিফ ও মতিনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হলে মতিন পানিতে তলিয়ে যায়। এদিকে মতিনের স্ত্রী তাদের ধস্তাধস্তি দেখে দৌড়ে রাইজদিয়া মসজিদে গিয়ে তার ছেলে ও এলাকাবাসীকে খবর দেয় পুলিশ পানিতে চুবিয়ে তার স্বামীকে মেরে ফেলছে। এ খবর শুনে মতিনের ছেলেসহ এলাকাবাসী ও স্বজনরা এগিয়ে আসলে এএসআই ফখরুল প্রাণ বাঁচাতে কৌশলে কনষ্টেবল আরিফকে রেখে পালিয়ে যায়। এদিকে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে এসে মতিনের লাশ কোথায় আছে বলে আরিফকে চাপ দিলে আরিফ নিজের নিরাপত্তার জন্য পাশে থাকা একটি নৌকা নিয়ে বিলের মাঝখানে চলে যায়। এদিকে স্থানীয় লোকজন খোঁজাখুজির পনের মিনিট পর বিল থেকে মতিনের লাশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, প্রাণ বাঁচাতে কনষ্টেবল আরিফ নৌকাতে করে প্রায় আধা ঘন্টা বিলের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। পরে উত্তেজিত এলাকাবাসী আরিফুল ইসলামকে ধাওয়া করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে সে প্রাণে বাঁচতে বিলের মাঝখানে একটি উচু স্থানে আশ্রায় নেয়। সেখানে গিয়ে উত্তেজিত এলাকাবাসী তাকে পিটিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মঞ্জুর কাদের সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নিহত কনষ্টেবল আরিফের লাশ ও মতিনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।