পুলিশ স্টিকারের অপব্যবহার করা হচ্ছে নাতো ?

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : দামি ব্র্যান্ডের বিলাস বহুল জিপ গাড়ি। সামনের গ্লাসে পুলিশ লেখা স্টিকার লাগানো। ভেতরে পুলিশ সদস্য না থাকলেও একটি আইডি কার্ড সব সময় থাকে গাড়িতে। এমনকি পুলিশ স্টিকার লিখা বিলাস বহুল গাড়ী নিয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। পোশাক পরিহিত পুলিশের কোন সদস্য না থাকলেও জিপ গাড়ীতে জেলার বিভিন্ন স্থানের মাদকের গডফাদার নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে অহরহ। রাস্তার পাশে পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই ! পোশাক পরিহিত কোন পুলিশ সদস্যদের দেখা না মিললেও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের রহস্যজনক আনা গোনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের স্টিকারের অপব্যবহার করা হচ্ছে নাতো ? অপরদিকে, পুলিশের স্টিকার লাগানো বিলাস বহুল গাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয় এলাকাবাসীর নানা কৌতুহলের জন্ম নিলেও স্থানীয় প্রশাসন কি অবগত নয় এ বিষয়ে ?

জানা যায়, সম্প্রতি সেই বিলাস বহুল গাড়িসহ বাহাউদ্দিন বাবুল এবং তার এক সহযোগীকে ৪০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ সদস্যরা। এ সময় মাদকের চালান আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ঐ জিপ গাড়িতে পুলিশ লেখা স্টিকার ছিল। ভেতরে এক নারী পুলিশ সদস্যের আইডি কার্ডও পাওয়া যায়। এ সময় র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেন। তাদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় মামলা র‌্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি মাদকের গডফাদার বাহাউদ্দিন বাবুল জামিনে বের হয়েছেন।

সূত্রে আরো জানা যায়, র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া বাহাউদ্দিন বাবুল ফতুল্লার হরিহর পাড়া আমতলা এলাকার বাসিন্দা। তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার মিতু মহিলা পুলিশ সদস্য। আর বিলকিস আক্তার মিতুর বদৌলতে বাহাউদ্দিন বাবুল তার বিলাস বহুল জিপ গাড়িতে পুলিশ স্টিকার লগু লাগিয়ে মাদকের চালান বিভিন্ন স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি র‌্যাব-১ এর দায়েরকৃত মাদক মামলা থেকে জামিনে বের হয়ে আসার পর পরই বাহাউদ্দিন বাবুল আবারো সেই পূর্বের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন এমনটাই স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। প্রতিদিন তার বর্তমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিনিষ্টার শো-রুমের ভিতরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের আনা গোনা লক্ষ্য করা যায়। এমনকি পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়িতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের হর হামেশাই বিচরন করতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ স্টিকার লাগানো বিলাস বহুল গাড়ীতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরে চলা ফেরার কারনে একদিকে সাধারন মানুষের কাছে গর্বিত পুলিশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে পুলিশের লগো ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ হাসিল হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে গর্বিত পুলিশের ভাবমূতি! তবে স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে, প্রকাশ্যে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশের ভাবমূতি নষ্ট করে গেলেও কি কারনে কোন ব্যববস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন ?

এমন প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না। কোন ক্ষমতা বলে একজন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশ স্টিকার তার গাড়িতে ব্যবহার করছে এ বিষয়ে সর্ম্পকে খোঁজ নেয়া হবে। আর মাদক ব্যবসার সাথে যে ব্যাক্তিই জড়িত থাকুক না কেনো তাদেরকে কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম স্যার সর্বদাই মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স রয়েছেন। অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পুলিশের ভাবমূতি নষ্ট কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাহাউদ্দিন বাবুল এর মোবাইল নাম্বার (০১৬২০-৪০৫২১২) যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাজারো জিপ গাড়িটির মালিক সে নিজেই। আর তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার মিতু পুলিশের চাকরি করার সুবাধে পুলিশের স্টিকার গাড়িতে লাগানো রয়েছে।

মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাহাউদ্দিন জানান, আরে ভাই আমারে তো র‌্যাবেই খোঁজতেছে কিন্তু পাচ্ছে না। আপনি খোঁজে কি করবেন ! আর কিসের নিউজ করবেন ? আমি আপনার সাথে দেখা করছি !

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ স্টিকার লাগানো জিপ গাড়িটির মালিক বাহাউদ্দিন বাবুল একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী ছিলেন। বর্তমানে ফার্নিচার ব্যবসার পাশাপাশি ফতুল্লার আমতলা প্রেম রোড এলাকায় মিনিষ্টার শো-রুমও রয়েছে তার। তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার মিতু ফতুল্লার হরিহরপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ২০১১ সালে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন মিতু। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আইসিটি বিভাগে কর্মরত আছেন।

স্থানীয় সূত্র মতে, ফার্নিচারের ব্যবসার আড়ালে মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন বাহাউদ্দিন বাবুল। স্ত্রী পুলিশ অফিসার হওয়ার সুবাদের এই প্রভাবটাও এক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন তিনি। নিজস্ব গাড়িতে পুলিশ স্টিকার ব্যবহার করে মাদক পাচার করে থাকেন, যা গত ৬ মে র‌্যাব-১ এর হাতে বিষয়টি ধরা পড়ে ৪০ কেজি গাঁজাসহ আটকের পর। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে বাবুল মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানিয়েছেন র‌্যাব-১ এর সিপিসি-৩, পূর্বাচল ক্যাম্প কমান্ডার মেজর আব্দুল্লাহ আল মেহেদী।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল হাসান র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া বাহাউদ্দিন বাবুলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় র‌্যাব বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৪০ কেজি গাঁজা পাওয়া গেছে এমন মর্মে র‌্যাব বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এখনো চার্জশিট আদালতে প্রেরণ করা হয়নি। তবে দ্রæত গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সমর্পূরক চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানান।

add-content

আরও খবর

পঠিত