নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (নিজস্ব প্রতিনিধি) : নগরীর বিভিন্নস্থানে জমে উঠেছে অবৈধ হাট। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে সড়কের পাশে এসব হাটে নৈরাজ্য দেখা গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির পশু এনে চালাচ্ছে এহেন অনৈতিক বানিজ্য। তবে কোনটার জন্যই নেয়া হয়নি ইজারা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, করোনা প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে এবছর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মাত্র অস্থায়ী ছয়টি পশুর হাটের ইজারা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায়। দুইটি বন্দর উপজেলায়। এছাড়াও সদর উপজেলায় ১৪ টি হাটের বিপরীতে ১৩ হাটের ইজারা সম্পূর্ন হয়েছে। তবে ফতুল্লার আলীগঞ্জে দরপএের ত্রুটি থাকার কারণে হাট বসার অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের পরিচালনায় কয়েকদিন ধরেই চলছে পশুর হাট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফতুল্লার সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের এলাকায় আনাচে কানাচে ছোট বড় প্রায় ২০টি অবৈধ পশুর হাট গড়ে তোলা হয়েছে। কিছু কিছু পাড়া মহল্লায় ১০০ থেকে ২০০ গরু বিভিন্ন জেলা থেকে এনে বিক্রয়ের জন্য ক্রেতাদের দেখানো হচ্ছে। এসব অবৈধ হাটে যেমনি জায়গা সল্পতা রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নাই। আবার কেউ কেউ খোলা মাঠে, কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় অধিক মুনুাফার জন্য ২০ থেকে ৫০টি গরুও বিক্রি করছে।
সূত্রটি জানায়, কসাই ও পাইকারদের সহযোগীতায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতারা বসিয়েছেন এসব হাট। এভাবেই লুকোচুরি করে বসছে কোরবানী পশুর হাট। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। আবার বৈধ ইজারাদার অনেকেই এ নিয়ে ক্ষুব্দ। তবে প্রশাসনের অভিযান দৃশ্যমান না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নও উঠেছে।
মিজমিজি কান্দা পাড়া এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন জানান, করোনার কারণে সিটি কর্তৃপক্ষ পশুর হাটের সংখ্যা কমালেও একশ্রেনীর স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রতিটি পাড়া মহল্লার খালি জায়গায় ও যানবাহন চলাচল বিঘিœত করে সড়ক দখল করে অবৈধভাবে ইজারা ছাড়াই বসিয়েছে মিনি হাট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরী এলাকা, কাশিপুর, বক্তাবলী, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে, সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি মুক্তিনগর, মাদানীনগর, নিমাইকাশারী, সানারপাড়, মিজমিজি, হীরাঝিল, পাইনাদী, বাতানপাড়া, শিমরাইল, কদমতলী, গোদনাইল এলাকাতেও প্রতিটি মিনি হাটে কমপক্ষে ২০ থেকে ৫০টি গরু রয়েছে। এভাবে লোকচুরির মাধ্যমেই চলছে মিনি হাটে গরু বিক্রি। বাড়ির পাশেই গরু পাওয়ায়, ঝুঁকি এড়াতে ক্রেতারা দূরে ইজারাকৃত হাটে যাচ্ছেনা।
মাদানী নগর এলাকার সোহেল নামে একজন ক্রেতা জানান, বাড়ির পাশে হাট থাকতে কষ্ট করে দূরে যাওয়ার দরকার কি। তাছাড়া মিনি হাটে হাসিলার ঝামেলা নেই। তাই বাড়ির পাশের মিনি হাট থেকে আশি হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি।
মাদানীনগর চৌরাস্তায় সড়ক দখল করে মিনি পশুর হাট বসানো আসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এটা কোন হাট না। কিছু গরু এনে এখানে বেঁধে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসন কিংবা সিটি কর্পোরেশন নিষেধ করলে সরিয়ে নেব।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ আইয়ুব নগর এলাকার অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদার মো. কবির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে হাট বসিয়েছি। অথচ পাড়ামহল্লায় অবৈধভাবে মিনি হাট বসায় ক্রেতা সংকটে পড়ে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি সিটি কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার হচ্ছেনা।
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল আমিন এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কলটি রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা বলেন, আমাদের কাছে এখনো এধরণের খবর আসেনি। তবে যেহেতু জানলাম। আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আলীগঞ্জের হাটটি দরপত্র নিয়ে একটু ত্রুটি রয়েছে তা তারাই সংশোধন করবে। তবে এখনো সমাধান করেনি।