নেতা বানায় কারেন্টের খাম্বা !

নারায়ণগঞ্জ র্বাতা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : শহর থেকে নদী বেষ্টিত এলকা বন্দরে, থানা থেকে ইউনিয়নে যেখানেই যাই না কেন কেবল নেতা আর নেতা! পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল এমনকি গাছগাছালি পর্যন্ত রক্ষা নেই, সবখানে কেবল নেতাদের ছবি। বাদ পড়েনি বিদ্যুতের খুটি। যেসব বিদ্যুতের খুটিতে পদদারী নেতাদের ছবির সাথে সংযুক্ত করে রকমারী ফেস্টুনে সাটিয়ে দেয় নিজেদেরই ছবি।

ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে রাখা এমন অনেকের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই এ জেলারও খুব বেশীদিন আগের বাসিন্দা নয়। কেউ শিল্প কারখানায় নিয়োজিত রয়েছে। কেউ চাকুরী কিংবা ব্যবসা সুবাধে এই শহরেই বসবাস করছে। আবার এদেরই কেউ এখন সম্পূর্ণ বেকার! তবে প্রভাব বিস্তারে পিছিয়ে থাকায় তারা কোন না কোন প্রভাবশালী কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের টার্গেট করে থাকে। এরপরই তাদের পিছনে মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন দখলদারীতেও লোকবল দিয়ে সহযোগীতা করাই হয় এদের কাজ। এর পরবর্তিতে তারাই হয়ে যায় নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা।
আর এসব নিয়ে কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীন নেতা বলেন, এখনতো কারেন্টের খাম্বা থেকেও নেতা তৈরী হয়। আর আগে একটা সাদা-কালা পোস্টার করতে গেলেও কয়েকশ বার ভাবা লাগতো।

তিনি বলেন, এখন তো পদদারী নেতারা যেমনি ওইসব লোকদের ব্যবহার করে তেমনি ওইসব সুযোগ সন্ধানীরাও নেতাদের খুশি করিয়ে একটা সময় এলাকার নেতা বুনে যায়। তারপর নিজ মহল্লা থেকে বের হয়ে এসে জেলা পর্যায়েও নেতাগিরি দেখায়।

মজা করে তিনি বলেন, অথচ শুরুটা কিন্তু ওই যে সেই কারেন্টের খাম্বা থেকেই। নেতারা কিন্তু ওইসময় যাচাই বাছাই করে দেখেনি। যাকে তার ছবি ব্যবহার করতে দিচ্ছে, সে তার ছবি যুক্ত করে ফেস্টুন লাগিয়ে আসলে কি হাসিল করতে চাচ্ছে। আর তাদরে জন্যই এখন আসল নেতাদের পাওয়া মুশকিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর চাষাঢ়া থেকে খানপুর, মেট্রোহল, কালির বাজার, নিতাইগঞ্জসহ অলিগলিতে প্রতিটি বিদ্যুতের খুটিতে ঝুলছে নানা রকমের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ব্যানার ফেস্টুন। সড়ক ও মহাসড়কেও একই অবস্থা। এছাড়াও বন্দর থানা এলকায় যেতে খেয়া পারের ঘাটগুলোর প্রবেশমুখেও বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা কিংবা নেতা-নেত্রীকে সম্বোধন করে ব্যানার-ফেস্টুন সাটিয়ে রেখে দিয়েছে। তাদের অধিকাংশই অপরিচিত মুখ হলেও নিজেদের প্রচারণায় চেষ্টার যেন কোন কিছুর কমতি রাখেনি। যা ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ অন্যান্য থানা এলাকাতে গেলেও চোখে পড়ে।

রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে এখন নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা যায় না। প্রশ্ন জাগে, নেতাদের এই যে ক্রমবর্ধমান বিস্তার এর শেষ কোথায়? একজন আদর্শনিষ্ট কর্মী হওয়ার আগেই নেতা বনে যাওয়ার এমন প্রবণতা এখন প্রায় সকল রাজনৈতিক দলেই দেখা যায় বলে রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকদের অভিমত। তারা বলেন, আদর্শবান কর্মী না হয়েই এখন সবাই নেতা হতে ব্যস্ত। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নিয়েই অনেকেই এখন নেতার কাতারে চলে আসতে চান। এমন প্রবণতা সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশে অন্তরায় বলে মনে করেন তারা।

add-content

আরও খবর

পঠিত