নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগেঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের একটি ওয়ার্ডে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছে। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ আরও ২০ জন।
শনিবার (৯ মার্চ) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফলাফল ঘোষণার পর দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এই ঘটনা ঘটে বলে জানান সোনারগাঁ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোহসীন। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন মো. হৃদয় ভূঁইয়া (২৪)। তিনি দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন হৃদয়ের চাচাতো ভাই ওমর ফারুক ভূঁইয়া (৩৫)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পূর্বেই হৃদয় নামে যুবকের মৃত্যু হয়। তার শরীরের সামনের অংশে বেশ কয়েকটি ছররা গুলির দাগ রয়েছে। আরও একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। সংঘর্ষে আহত অন্তত ১১ জন পুলিশ সদস্য হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য মজিবুর রহমান গত বছরের ২০ মে মারা গেলে ইউপি সদস্য পদটি শূণ্য ঘোষণা করা হয়। এই পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন কায়সার আহমেদ রাজু ও আজিজুর রহমান। ফলাফল ঘোষণার পর উভয়পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয়পক্ষই অগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা পুলিশের উপরও হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ফাঁকা গুলিও ছোড়ে পুলিশ।
সংঘর্ষে নিহত হৃদয়ের বড়ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, তারা কায়সার আহমেদ রাজুর সমর্থক। ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় কেন্দ্রের বাইরে তারা অপেক্ষা করছিলেন। ফলাফল ঘোষণার পর আজিজুর রহমান তার লোকজন নিয়ে তাদের উপর হামলা চালান।
আজিজুর ও তার লোকজন গুলি করছে, ওই গুলিতে আমার ভাই মারা গেছে। আমার বড়ভাই ইকবাল ও চাচাতো ভাই ফারুকও আহত হইছে। ফারুকের গুলি লাগছে, সে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায়।
তবে, যোগাযোগ করা হলে আজিজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কায়সার আহমেদ রাজুর লোকজন পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ সময় ছোড়া গুলিতে একজন নিহত হন। আমাদের পক্ষের কেউ গুলি করার অভিযোগ মিথ্যা।
যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, সারাদিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর যখন নির্বাচন কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে উপজেলা পরিষদের দিকে যাচ্ছিলেন তখন কেন্দ্রের একপাশে দুইপক্ষের সংঘর্ষে বাঁধে। এক পর্যায়ে তারা নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যদের উপর ইট-পাটকেল মারতে থাকে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে।”
এতে পুলিশের অন্তত ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন জানিয়ে এসপি বলেন, তবে, নিহত ওই যুবক সংঘর্ষের মধ্যে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছে। আরও একজন গুলিবিদ্ধ বলে জেনেছি।
এই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, উপনির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আজিজুর রহমানকে পিরোজপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ।