নিথর দেহের পাশে নেই মন্দির বা পূজা কমিটি, শেষকৃত্যে এগুলেন কাউন্সিলর শফিউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করায় ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে রয়েছে লাশ। ভাইরাসটি সংক্রমনের ভয়ে অনেকেই পাশে আসছেন না । এমন পরিস্থিতিতে মানবিকতা ও দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিউদ্দিন প্রধান। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) ভোরের দিকে  নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। মৃত প্রফুল্লা নাহা (৭১) নন্দীপাড়া এলাকার মরহুম আলফাজ উদ্দিনের ভাড়াটিয়া।

জানা গেছে, লাশটি পড়ে থাকলেও সেটি শেষকৃত্যে কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলনা।ওইসময় খবর পেয়ে কাউন্সিলর শফিউদ্দিন তার সেচ্ছাসেবীদের আসতে বলে। পরে লাশটি মৃতের ৬তলা বাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ভ্যানে করে লাশটি নিয়ে যান মাসদাইর শ্বশানে। এরপর নিজে দাড়িয়ে থেকেই বিকাল ৪টার সময় লাশটির দাহ কাজ সম্পন্ন করে বাড়ি ফিরেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন করোনা ভাইরাস ১৪নং ওয়ার্ড কমিটির সদস্য আবুল বাসার বাসেত, এস এম সিরাজ, তুহিন, খাজা রহমান, যুবকদের পক্ষে ওবায়দুর রহমান, হারুন অর রশিদ, রানা, বিল্লাল।

এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কাউন্সিলর শফিউদ্দিন জানান, মৃত ব্যাক্তি ভাড়াটিয়া হলেও। আমাদের স্থানীয় একজন বাসিন্দা। সে একজন হোসিয়োরী ব্যবসায়ী। তার আত্মীয় স্বজনরা প্রতিষ্ঠিত। তবে এ ঘটনার পরে কেউ এগিয়ে আসেনি। যা খুবই দু:খজনক। আমি অনুভব করলাম, হাশরের ময়দানে যেমনি কেউ কারো নয়। ঠিক তেমনই শুরু হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পরে স্থানীয় মন্দির কমিটি কিংবা পূজা কমিটি কেউ আসেনি। এ লোকটির দাহ করার জন্যও কাউকে এগিয়ে আসতে দেখলাম না। আমি সবসময়ই বলি মানুষ মানুষের জন্য। আমি যখনই কাজ করি। মানবিকতায় এগিয়ে আসার জন্য সকলকে বলি।

কাউন্সিলর বলেন, দুপুরে বাড়িতে নামাজ পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে সকল দোকানপাট বন্ধ করতে বলি এমন সময় আমাকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় প্রফুল্লা নাহা (৭১) মারা গিয়েছেন। তার শেষকৃত্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। তখন আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে নাসিকের এবং প্রশাসনের সাথে কথা বলে আমার টিম নিয়ে প্রফুল্ল নাহার মরদেহ ঘর থেকে বের করে মাসদাইর শ্মশানে নিয়ে যাই এবং গোসল শেষে বিকাল ৪টার দিকে তার দাহ সম্পন্ন করেছি। প্রফুল্ল নাহা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়বেটিস রোগে ভুগছিলেন এবং কিছুদিন যাবৎ তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাই করোনায় আক্রান্ত ভেবে কেউ তার শেষকৃত্যে এগিয়ে আসে নি। টেস্ট করলে হয়তো জানা যেত করোনায় আক্রান্ত কিনা।

এদিকে মৃত ব্যক্তি সনাতন ধর্মাবলম্বী হলেও তার মৃত্যুর খবর শুনে স্থানীয় মন্দির কমিটি বা জেলা ও মহানগর পূজা কমিটির কোন নেতা তার মরদেহ দাহ করার ব্যাপারে এগিয়ে না আসায় এসকল কমিটি নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এসময় কাউন্সিলরের মহৎ এ কাজ দেখে এবং এসকল কমিটিগুলোর কাউকে না দেখে স্থানীয়রা ক্ষোভের সুরে বলেন, কি লাভ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ বা মহানগর ও জেলা পূজা উদযাপন সহ বিভিন্ন মন্দির কমিটি করে এবং এ সকল কমিটির নেতা হয়ে ? যদি এসকল নেতারা একজন মৃত ব্যক্তি শেষ কৃত্যের সময় কোন ধরনের সহযোগীতাই করতে না পারেন।

তবে পালপাড়া এলাকায় যুবসংহতি নেতা রিপন ভাওয়ালেরে উদ্যোগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শেষকৃত্যের জন্য একটি টিম তৈরী হচ্ছে। আগামীতে এ দুরযগপূর্ণ অবস্থায় তারা কাজ করবেন বলে তথ্য পেয়েছি। এছাড়া প্রফুল্লা নাহার মৃত্যুর খবরটি জানতেন না বলে দাবী করেছেন রিপন ভাওয়াল। জানলে নিজেও শারিরিকভাবে অসুস্থ্য হলেও অবশ্যই পাশে থাকতেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত