নিখোঁজ দেড় বছরের শিশু নিয়ে কী রাজনীতি !

দশ মাস পরে কেন আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ : কাউন্সিলর সজল

পুলিশের আশ্বাসে অভিযোগে নাম লেখা হয়নি : নিখোঁজের পিতা এপন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : দেড় বছরের শিশু সাদমান সাকি। নাসিক ১৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওমর খালেদ এপনের আদরের সন্তান। গত ২০১৭ সালের ১লা ডিসেম্বর দুপুরে শহরের দেওভোগ কাঠের দোতলা এলাকায় নিজ বাড়ির গেটের সামনে থেকে নিখোঁজ হয় সে। ঘটনার দিন রাতে সদর মডেল থানায় প্রথমে জিডি ও একদিন পর অপহরণ মামলা করেন নিখোঁজ শিশুর বাবা ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ ওমর খালেদ এপন। ঘটনার ৩ মাস পর মামলাটি তদন্তের ভার দেয়া হয় পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে।

তবে বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ সাদমান সাকি। কিন্তু চলতি মাসে হঠাৎ করেই নিখোঁজ সাদমান সাকিকে নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ। অপহরণের ঘটনায় সম্প্রতি একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলকে দায়ী করেছেন শিশুটির পিতা ওমর খালেদ এপন। আর এ নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এমনঅবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল মনে করছেন এতদিন বিষয়টি একটি ধারায় প্রবাহিত হলেও এখন এটি রাজনৈতিক ইস্যুতে ঘুরে দাড়াচ্ছে। কারণ নিখোঁজের বাবা এপন ও কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের বক্তব্যে এখন এটি স্পষ্ট। উভয়ই এখানে রাজনীতির প্রভাব ও সংশ্লিষ্টতাকে দায়ী করছে।

নিখোঁজের ঘটনায় শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সাদমান সাকির জন্মদিনে তার উদ্ধারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সাকির বাবা সৈয়দ উমর খালেদ এপন বলেছেন, আজ ওকে (নিখোঁজ সাকিকে) নিয়ে আমাদের আনন্দ করার কথা কিন্তু আজ আমাদের ওকে ফিরে পাবার দাবিতে রাজপথে নামতে হচ্ছে। সাকিকে উদ্ধারের বিষয়ে প্রশাসন কিছু করতে পারবে না। তাদের কাছে গেলে বলে, ওরা শামীম ওসমানের লোক, আমাদের পক্ষে সম্ভব না। উপরের কিছু নির্দেশনার ব্যাপার আছে। এছাড়াও নাসিক কাউন্সিলর নিবার্চনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নাজমুল আলম সজল সাকিকে অপহরণ করেছে এমন অভিযোগও উঠে যা গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছে।

এদিকে শিশু সাদমান সাকি নিখোঁজের ঘটনায় তাকে জড়িয়ে যে বক্তব্য ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে তার প্রতিবাদে রোববার (১৮ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন  নাসিক ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল। শিশু সাদমান সাকি নিখোঁজের ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমিও তো কারো পিতা, আমি প্রশাসনের কাছে আহবান করবো এই ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক। কিন্তু সাদমান সাকির বাবা সৈয়দ ওমর খালেদ ওরফে এপন আমাকে ও ৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানকে নিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে তিনি সাদমানের পিতা এপনের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, নিখোঁজ ছেলেকে নিয়ে অপ-রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন। কারো প্ররোচনায় পড়ে বিভ্রান্তমূলক কথা বলে মামলাটাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করবেন না।

এসময় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমি ও এপনসহ ৭ জন প্রার্থী । নির্বাচনের ফলাফলে আমি ৪ হাজার ৮৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই। অন্যদিকে ১২০ ভোট পেয়ে সাত প্রার্থীর মধ্যে সপ্তম হয় এপন। ওই নির্বাচনে তার জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়। সুতরাং তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বলার প্রশ্নই ওঠে না। যদি তার সাথে আমার শত্রুতাই থাকে তাহলে তার অভিযোগের প্রথমেই আমাদের নাম থাকার কথা। ঘটনার ১০ মাস পরে কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলো আমি তার কাছে এটা জানতে চাই।

অপরদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর খালেদ এপন গনমাধ্যমকে বলেন, আমি প্রথমেই নাজমুল আলম সজলকে আসামি করে মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তখন বলেছিল, সজলকে আসামি করলে বিষয়টা রাজনৈতিক রূপ নেবে আর আপনার ছেলেকেও পাবেন না। পুলিশ বলেছিল, এর থেকে বরং তার নাম দিয়েন না, আমরা আপনার ছেলেকে খুজে বের করার চেষ্টা করছি। পুলিশের এই আশ্বাসের কারণে আর আমার ছেলেকে ফিরে পেতেই অভিযোগে তার নাম লেখা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর সজল, সাকি নিখোঁজে পরিবারের প্রতি সন্দিহান প্রকাশ করে জানান, সাদমান সাকি নিখোঁজের পর তার বাবার দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ তার আত্মীয় জিল্লুর রহমান, সোহেল আহম্মেদ আররা ও আব্দুর রহমান তপনকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও সাদমান সাকি নিখোঁজ হওয়ার পর একটি নাম্বার থেকে ফোন আসে ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। আরেকটি নাম্বারে বিকাশে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পাঠায়। তদন্ত করে সৈয়দ ওমর খালেদ ওরফে এপন এর ছোট ভাইয়ের জড়িত হওয়ার প্রমান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পুলিশ মামলার তদন্তের স্বার্থে তার ভাইকে আটক করে থানায় নিয়ে এলে সৈয়দ ওমর খালেদ ওরফে এপন তার ছোট ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।কাকে দেয়া হয়েছিল টাকা? এই নাম্বারটা কার? তাছাড়া এপন মাদকের সাথে জড়িত, তাকে ডোপ টেস্ট করা হউক। আমি খবর পেয়েছি ওমর খালেদ ওরফে এপন ও তার ছোট ভাইয়ের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে হাতাহাতি হয়েছে। তার বৃদ্ধ মাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এটার কোনো মামলা হয় নাই কেন। পারিবারিক অনেক কোলহ রয়েছে তার। আমার সন্দেহ হয়। সুষ্ঠু তদন্ত করলে এটি বের হয়ে যাবে কে আসল অপরাধী। যে কোনো হত্যা বা গুমের ঘটনা ঘটলেই ৪/৫ জন লোক ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারকে দোষারোপ করে । এতে করে আসল অপরাধী পার পেয়ে যায়।

তবে সচেতন মহলের দাবী অপরাধী যেই হোক দ্রুত চিহ্নিত করলেই শান্ত হতে পারে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ। তা না হলে এ ঘটনায় উত্তাল হতে থাকলে এটি বড় কোন সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে যা নারায়ণগঞ্জবাসী কখনই কামনা করে না। শিশু সাকি কে দ্রুত উদ্ধারের মাধ্যমে এর অবসান ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জেলার সুযোগ্য এমপি, মেয়র, ডিসি সহ পুলিশ সুপারের দিকে তাকিয়ে গোটা নারায়ণগঞ্জবাসী।

add-content

আরও খবর

পঠিত