নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : ইতালির বিখ্যাত গাড়ি প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বোরগিনি। বিশ্বব্যাপী রয়েছে এর সুনাম। এবার এমন একটি গাড়ির প্রতিচ্ছবি দৃশ্যমান হল বাংলাদেশেই। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত অটোরিকশা ওয়ার্কশপে তৈরি হয়েছে (ল্যাম্বোরগিনি) এর আদলে এই গাড়িটি। যা ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ১০ ঘণ্টা পাড়ি দিতে সক্ষম। আর এটি তৈরি করেছেন নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার আকাশ আহমেদ। মো. নবী হোসেনের ছেলে আকাশের ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজের তৈরি গাড়িতে চড়বে। গাড়ি তৈরিতে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার।
স্বপ্নের শুরু দেড় বছর আগে। অটোরিকশা নির্মাণের গ্যারেজ থেকে বডি তৈরি করতে করতে এক সময় আকাশ তার বাবার কাছে প্রস্তাব দিল গাড়ি বানাবে সে। বাবা না করতে গিয়েও চিন্তা করল ছেলেটাই সবচেয়ে বেশি কাজ করে পুরো ওয়ার্কশপে। না করে দিলে হয়ত মন খারাপ করে কাজে মন দিবে না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলেকে অনুমতি দিল গাড়ি নির্মাণের। আর সেই থেকেই যাত্রা শুরু। ক্যালেন্ডারের পাতায় ইতালির বিখ্যাত গাড়ি প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বোরগিনি গাড়ির মডেল দেখেই সেটিকে অনুসরণ করে সামনে এগোতে থাকে সে। বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন এক-দুইশ টাকা নিয়েই কাজ শুরু করা। ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল ফলো করা। জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা থেকে ইস্পাতের পাত কেটে গাড়ির বডির শেপ তৈরি করা। ল্যাম্বোরগিনির আদলে গাড়ির নকশা প্রণয়ন। নির্মাণ, জোড়াতালি সবই নিজের হাতে তৈরি।
আকাশ বলেন, গাড়ির চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবল কিনে আনা হয়েছে। বাকি সবকিছু নিজের হাতে তৈরি। যা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রায় দেড় বছরের টানা প্রচেষ্টায় সেটি পূর্ণাঙ্গ গাড়িতে পরিণত হয়েছে। গাড়িটিতে প্রায় পাঁচটি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। যেটি প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আর এই ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে লাগবে ৫ ঘণ্টা। আর সড়কে নামলে দুজন আরোহীকে নিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে। গাড়িটি এই অবস্থায় দাঁড় করাতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।
আকাশ আরো বলেন, ছোটবেলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু যেহেতু করেছি তাই শেষ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছি। ঈদের ছুটিতে গাড়িটি নামানোর পরেই অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। নিজের পরিশ্রমে তৈরি করেছি গাড়িটি। তবে গাড়িটিতে আরো কিছু কাজ বাকি আছে। যেমন গাড়ির দরজাগুলো সুইচের মাধ্যমে খুলবে ও বন্ধ হবে।
আকাশের বাবা নবী হোসেন বলেন, আমার ছেলে এই গাড়ি বানিয়েছে এটা এখনো এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব যাতে গাড়িটি বাজারজাত করার অনুমতি দেয়। অনুমতি দিলে আমার জন্য অনেক উপকার হবে। দেশীয় প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব গাড়িটি দেখে আমি আরো ২৫ টি গাড়ি তৈরির অর্ডার পেয়েছি। বাজারজাত করলে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকাতেই মানুষ পরিবেশবান্ধব এই গাড়ি ব্যাবহার করতে পারবে। ব্যক্তিগতভাবে আরেকটি গাড়ি বানানোর ইচ্ছে আছে।