নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে মিছিল, মিটিং আর জনসভায় একটিই নাম। নেতাকর্মীদের বজ্রকন্ঠে রাজপথ প্রকম্পিত হয় একটাই শ্লোগান- নারায়ণগঞ্জের মাটি, শামীম ওসমানের ঘাটি। নারায়ণগঞ্জের মাটি, আওয়ামীলীগের ঘাটি। নারায়ণগঞ্জের মাটি, শেখ হাসিনার ঘাটি। বিভিন্ন সময়ে চমকপ্রদ ও নানা ঘটন অঘটনের জন্য খবরের শিরোনাম হওয়া শামীম ওসমানের রাজনৈতিক ইতিহাসে আছে বিপুল বৈচিত্র। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাজনৈতিক ইতিহাসে ওসমান পরিবার বিগত তিন পুরুষ ধরে অবদান রেখে আসছে। খান সাহেব ওসমান আলী থেকে শুরু শামছুজ্জোহা, পরবর্তীতে নাসিম ওসমান না ফিরার দেশে চলে গেলে বর্তমানে শামীম ওসমানই সে ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন।
সেই চল্লিশ এর দশক থেকে শুরু করে অদ্যাবধি অসামপ্রায়িক চেতনার এ পরিবারটি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও আওয়ামী পরিবারের সহযোদ্ধা হিসেবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবায় পাশে দাঁড়িয়েছে। এবং জেলার প্রতিটি নেতাকর্মীকে এগিয়ে আসার র্নিদেশও দিয়েছেন তিনি। এ র্নিদেশে বর্ন্যাত ও রোহিঙ্গা জনসাধারণের জন্যও ব্যপক অবদান রয়েছে । নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে সম্মিলিত হয়ে কাজ করার মাইলফলক রেখেছেন তিনি। আর এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় আবারো ব্যপক আলোচনায় চলে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমান।
আর এই আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেলেসমতি কর্মকান্ড। জেলা বিএনপির কমিটি দেয়ার বছর পুর্তি না হতেই যেন ভেঙ্গে র্চুণবির্চুণ হওয়ার অবস্থা। এই কমিটিতি সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন কাজী মনিরুজ্জামান এবং কাগজে কলমে পদপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। তবে তাদের কমিটি কতটা সংঘবদ্ধ এবং কে কতখানি নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য এটাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নারায়ণগঞ্জ রাজনীতিতে এক চমক দেখালেন এমপি শামীম ওসমান।
জেলায় বিএনপি দলের নিষ্কৃয়তায় ও হতাশায়, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামলীগের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডে এমপি শামীম ওসমানের পাশে থাকতে একে একে আওয়ামীলীগে যোগ দিচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে সম্প্রতি ১৫ই অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত ডিএনডি প্রকল্প র্শিষক জনসভায় আওয়ামী সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রীর সামনে ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মতিন প্রধান। একই অনুষ্ঠানে মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আয়েশা আক্তার দিনাও মিছিল নিয়ে হাজির হন। এবং জনসভার মূল মঞ্চেই তিনি শেষ র্পযন্ত অবস্থান নেন। এছাড়াও গত ১৯ই অক্টোবর ফতুল্লায় ভেলকি দেখান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস এবং কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টু।
এসময় তাদের মুখেই ফুটে উঠে আওয়ামী সরকারের উন্নয়নে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমানের প্রশংসায় পঞ্চমুখী বক্তব্য। অনুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাস তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, আমার নেতা শামীম ওসমানের হাত দিয়ে স্মরণকালের সেরা কাজ আমার উপজেলায় হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সকল রাস্তাঘাট শামীম ওসমানের হাত ধরে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়েও শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।
একই অনুষ্ঠানে মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, ডিএনডি জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে এখানকার মানুষ। এ মুক্তির কারিগর আমার বড় ভাই শামীম ওসমান। এমপি শামীম ওসমান যে ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প এনেছেন এতে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য তিনি সবার অন্তরে থাকবেন। উনি আমার বড় ভাই কিন্তু উনার পক্ষে কথা বললে আমাকে অনেক পত্রিকার শিরোনাম হতে হয়। বিগত তিন বছরে এখানে শতকোটি টাকার কাজ হয়েছে শামীম ওসমানের হাত ধরে। এটাই বাস্ততা। দলমত নির্বিশেষে উনি সকলের জন্য কাজ করছেন।
এর আগেও আজাদ বিশ্বাস একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, শামীম ওসমানের মত সাংগঠনিক নেতা নারায়ণগঞ্জে আর কেউ নাই। অপর এক অনুষ্ঠানে মনিরুল আলম সেন্টু বলেছিলেন, শামীম ওসমান উন্নয়ন করে জনগণের পীর হয়ে গেছেন। আর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীদের মাঝে এক ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় দালাল হিসেবেও তাদের আখ্যা দিয়েছে। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ তড়িৎ গতিতে স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আব্দুল মতিন প্রধানকে বিএনপির ঘর ছাড়া করে।
জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে না পেয়ে এখন জেলা বিএনপির বড় বড় নেতারা আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট নেতা শামীম ওসমানকে রাজনৈতিক গুরু মানা শুরু করছেন। জেলা বিএনপির নেতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাহ্-বা দিচ্ছেন আওয়ামীলীগ সরকারের। তাই এটা এখন স্পষ্ট মুখে মুখে জেলা বিএনপি নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে ফাঁকা বুলি ছুড়ঁলেও আসলে তারা আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে আঁতাত করেই চলছেন বলে মত বিএনপি নেতাকর্মীদের।
এর আগে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ জন্মে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের কর্মকান্ডে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কর্মীদের রেখে পুলিশের লাঠি পেটার ভয়ে কাজী মনিরুজ্জামান গাড়িতে চড়ে পলায়নের দৃশ্যও সমালোচনায় প্রশ্নবিদ্ধ করে ।
এছাড়া বন্দর বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলও নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলে ব্যপক সমালোচনায় রয়েছে। জাতীয় র্পাটির চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নারায়ণগঞ্জ আগমনী অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকে জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে জড়িয়ে বিএনপিকে কাবিখা করে পার পেয়েছেন। তখন বিএনপির তৃণমূল দাবি করে আসছিলো মুকুল ওসমান পরিবারের সাথে আতাঁত করে এসব কাজ করেছেন সুনিপুনভাবে।
এদিকে জেলা বিএনপির নেতাদের মস্তিস্কবিকৃতির সুযোগ নিতে এতটুকু ভুল করে নি আওয়ামীলীগ। স্বয়ং পানিসম্পদমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী প্রশংসায় ভাসিয়েছেন জেলা বিএনপি নেতারা। বিচক্ষণতার সাথে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেছেন, আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ আজকে আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করলেন। এ কাজ আমাদের করার কথা, কারণ আমি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি।