নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : শহরের নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ৫ কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি বিল ভাউচারের টাকা আত্মসাৎ, ব্লাড ব্যাংকের অর্থ লোপাট, সরকারি মালামাল বাইরে বিক্রি, রোস্টারের নামে প্রতি মাসে অর্থ লুটে নেয়াসহ বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই অভিযোগে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
অভিযুক্ত ৫ কর্মচারীরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আহসান হাবিব, ব্লাড ব্যাংক ইনচার্জ আব্দুর আজিজ, স্টোরকিপার আতিকুর রহমান, ওয়ার্ডমাস্টার শেখ আনসার আলী ও অফিস সহায়ক জয়নাল।
এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সভাপতি জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর রহমান। এছাড়া কমিটিতে অপর দুই সদস্য হলেন, সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মো. আসিফ মাহমুদ, মেডিকেল অফিসার ডা. একেএম মেহেদী হাসান।
এই কমিটি আগামী ১৮ মার্চ সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অফিস কক্ষে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করবে বলে কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাসার বলেন, অভিযুক্ত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্ত করছে। কমিটি আগামী ১৮ মার্চ এই বিষয়টি নিয়ে বসবে বলেও জানিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিবে অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর রহমান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। দ্রতই এই বিষয়ে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এদিকে, অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের আলোচিত পিএ সিদ্দিক এর আত্মীয়। দুইজন সিদ্দিকের ভাই এবং অপরজন ভায়রা। পিএ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ছিল ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তারাও এই কর্মচারীর দাপটে ছিলেন তটস্থ। পিএ সিদ্দিকের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সেলিম ওসমানও। তিনি প্রকাশ্যে একাধিক অনুষ্ঠানে সিদ্দিকের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। যদিও সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে, দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে পিএ সিদ্দিক হন রাজশাহীতে।
২০২০ সালের ৩ জুলাই এক সভায় সেলিম ওসমান অভিযোগ করেন, গত ৫ বছর ধরে আমি এই হাসপাতাল নিয়ে কাজ করছি। এতোবড় চুরি আমার জীবনেও আমি দেখিনি। কখন টেন্ডার হয়, কখন সাপ্লাই হয় আমরা কেউ জানি না। এসব দুর্নীতির পেছনে তত্ত্বাবধায়কের পিএসহ কয়েকজন জড়িত। এখানে ১শ টাকার মাল ১৫শ টাকা ধরা হয়। বাকি টাকা লুটপাট হয়েছে। তারা এই শহরে গাড়ি বাড়ির মালিক, একাধিক ক্লিনিকের শেয়ার হোল্ডার। একজন দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করলাম, তার নাম পিএ সিদ্দিক। তাকে বদলি করে দেওয়া হলো রাজশাহী। বদলি করে কি তাকে বাঁচিয়ে দেওয়া হলো? এখানে উপস্থিত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার আছেন প্রয়োজনে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে বের করা হোক। এসব লুটেরাদের কাছ থেকে জনগণের টাকা ফেরত আনতে হবে।