নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : গ্যাস সংযোগে লিকেজ কিংবা নিম্নমানের সংযোগে একাধিকবার নানা দুর্ঘটনায় প্রাণহাণি ঘটলেও সচেতন হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। তাছাড়া সহস্রাধিক অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না নারায়ণগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগের রমরমা কারবার। যার ফলশ্রæতিতে সৌন্দর্য্য বেষ্টিত নগরীর বাবুরাইল এলাকা জুড়ে লেকপাড় হলেও জনসাধারণের অসচেতনতায় অবাধে ছেয়ে গেছে ঝুলন্ত গ্যাস সংযোগ। হোস পাইপ দিয়ে নেয়া এসব গ্যাস সংযোগের কারণে যেকোন সময় ঘটতে পারে প্রাণহাণির মত বড় দুর্ঘটনা। আর এমন দৃশ্য দেখে পথচারীদের অনেকেই মন্তব্য করছে এ যেন সড়কেই ঝুলছে মৃত্যু পরোয়ানা ! তবে দীর্ঘ দিন ধরে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করলেও এ ব্যাপারে উদাসীন স্থানীয় বাসিন্দাসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মন্ডল পাড়া ব্রীজ থেকে শুরু করে বাবুরাইল, ইব্রাহীমের ব্রীজ, পূর্ব আমবাগান ছাড়িয়ে কাশিপুর ইউনিয়নের সম্রাট সিনেমা হল পর্যন্ত সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য যে খাল নির্মাণ করা হয়েছে, সেটাতে এখন ঝুলন্ত গ্যাস সংযোগ দিয়ে ছেয়ে গেছে। এসব এলাকা দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে রাস্তার এপাড় থেকে ওপাড়ে অরক্ষিতভাবে ঝুলছে হোস পাইপে নেয়া অসংখ্য গ্যাস সংযোগ। প্রতিদিনই এসব অরক্ষিত গ্যাস সংযোগের সামনে দিয়ে নানা পেশাজীবী লোকের যাতায়াত এবং জনসাধারণ আড্ডা দিয়ে থাকে। আশে পাশে চায়ের দোকান থাকায়, কখনো দেখা যায় হাতে সিগারেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে একটি রাইজার থেকেই হোস পাইপের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে কয়েকটি গ্যাস সংযোগ। আর এরমধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওইসব এলাকায় চালাচল ও বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ।
বাবুরাইলের স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে এ খালের নির্মাণ কাজ শুরু করার সময় থেকে এখন পর্যন্ত গ্যাসের লাইনটি এভাবেই রয়েছে। তবে তিতাস কর্মকর্তারা বলেছিলো যে খালটির দক্ষিনপাশের হাঁটার রাস্তাটি নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন স্থাপন করবে। কবে ঠিক করবে, সেটা তারা জানায়নি। আর এখন তো হাঁটার রাস্তাটি ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু তারা আর সংযোগ দিতে আসে নেই। তাছাড়া এখন যদি তারা (তিতাস কর্মকর্তারা) লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করে তাহলে পুনরায় জনগণের ভোগান্তি শুরু হবে, খাল নির্মাণের সময় একবার তো চলাচলের ভোগান্তি পোহাতে ইহছে, এইবার যদি তারা আবার মাটি খোড়াখুড়ির কাজ শুরু করে তাহলে তো আরো ভোগান্তি বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে তিতাস কর্মকর্তারা একেবারেই উদাসিন। তাদের কোন টিম এখন পর্যন্ত আমাদের গ্যাস সংযোগগুলি ঠিক করে দেয়নি। এখকন বাধ্য হয়েই আমরা গ্যাস সংযোগ নিয়েছি।
এ বিষয়ে তিতাসের ফতুল্লা এলাকার ম্যানেজার আনোয়ারুল আজিম, হোস পাইপ দিয়ে যারা সংযোগ নিয়েছে তাদের বৈধ সংযোগসহ বিল পরিশোধ থাকলেও কাজটি ঠিক করেনি। এসব লাইন অবৈধ বলেই গণ্য হবে। কারণ এভাবে সংযোগ নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা গ্যাস সংযোগ এমএস পাইপের মাধ্যমে দিয়ে থাকি। তা না হলে নানা দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। আমরা বিষয়টি অবশ্যই দেখবো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ তিতাস অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাকির আহমেদ জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। মাত্র ৯ মাস হলো এখানকার দায়িত্ব নিয়েছি। খাল নির্মাণের পরে যারা বাসা বাড়িতে হোস পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে, এটা ঠিক নয়। তবে যাদের কোন বকেয়া বা অবৈধ কোন সংযোগ নাই তারা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে পুনরায় স্থাপনের জন্য আবেদন করলে আমরা সংযোগটি স্থাপনের জন্য সহযোগীতা করবো।
প্রসঙ্গত, গেল কয়েক মাসে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেও গুটি কয়েকের কারণে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে এ সংস্থাটির। অভিযোগ রয়েছে, তিতাস গ্যাসের অসাধু কিছু ঠিকাদার এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি মহলই টাকার বিনিময়ে এসব বিচ্ছিন্ন সংযোগে পূণরায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। তেমনি দিয়েছে এসব হোস পাইপের নতুন সংযোগও। এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি বৈধ গ্রাহকরা ভুগছেন গ্যাস সংকটে। এ ছাড়া নিন্মমানের সংযোগ উপকরণের কারণে বাড়ছে বিস্ফোরণ জনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস লাইনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ ৩১ জন মুসল্লির নিহত হওয়ার ঘটনায় তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে লিকেজ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির কথা নতুন করে সামনে আসে। মসজিদ ট্র্যাজেডির পর দুর্ঘটনার আতঙ্কে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের সঞ্চালন লাইনে অগুনতি লিকেজের কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। এসবের সূত্র ধরে উঠে আসে নারায়ণগঞ্জে তিতাস গ্যাসের বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগের বিষয়টিও। বিগত কয়েকদিনে তিতাসের অবৈধ সংযোগ ও নিম্নমানের সঞ্চালন লাইনে লিকেজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় তিতাস গ্যাসের অন্ততপক্ষে ২ লাখের মতো অবৈধ সংযোগ রয়েছে। আর ওইসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সহ এখন কাজ করছে তিতাস কর্তৃপক্ষও।