নারায়ণগঞ্জে শ্র‌মি‌কের বদ‌লে শিক্ষার্থী দিয়ে সরানো হলো স্কু‌লের ইট

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জে শ্র‌মি‌কের বদ‌লে শিক্ষার্থী দিয়ে স্কু‌লের ইট সরি‌য়ে নেয়ার কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শহরের সনামধন্য বিদ্যাপীঠ নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে এমন কর্মকা‌ন্ডে রী‌তিমত হতাশ ও ক্ষো‌ভের সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে অ‌ভিভাবক‌দের মা‌ঝে। 

দীর্ঘদিন যাবত স্কু‌লের মা‌ঠেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল হাজারেরও অ‌ধিক ইট। ত‌বে এত‌ে শিক্ষার্থী‌দের তেমন ব্যঘাত না ঘট‌লেও এ নি‌য়ে সং‌শ্লিষ্ট কতৃর্প‌ক্ষ ছিল এ‌কেবারই দায়সাড়া। আর তাই‌তো বিস্তর ফান্ড থাকা সত্ত্বেও পেশাদার শ্রমিক না এ‌নে বিপুল সংখ্যক ইট সরানোসহ ময়লা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কা‌জে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত শিশু শিক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয় বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্কুল চলাকালীন সময়ে বন্ধ রাখা হয়ে‌ছে ‌শিক্ষার্থী‌দের ক্লাস। এমন অমান‌বিক ঘটনায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক।

অ‌ভিভাবকরা জানায়, দেশে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও এমন এক‌টি শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠা‌নে শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে এমন কান্ড আস‌লেই দু:খজনক। এ‌তে আমরা হতাশ, তাহ‌লে এসব শিক্ষার্থীরা এখান থে‌কে কি শিক্ষা নি‌বে?

জানা গে‌ছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দিয়ে এমন অ‌নৈ‌তিক কাজটি করান সহকারি শিক্ষক গোলাম মোস্তফা শাহীন। নিজে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের এ কাজের করেন তদারকিও । এমন এক‌টি ভিডিও চিত্র ধার‌ণের পর স্কুলে গিয়ে পাওয়া যায় এর সত্যতাও।

এ ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, সহকারি শিক্ষক গোলাম মোস্তফা শাহীনের নির্দেশেই তারা ইট বহন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজটি করেছে। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, দুই এক দিনের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। পরীক্ষার আগ মুহূর্তে শারীরিক পরিশ্রমের এমন ভারী কাজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো ঠিক হয়নি। তারা অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে। এতে করে পরীক্ষায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে কেউ কেউ মতামত দেন।

এ ব্যাপারে স্কুলের অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক গোলাম মোস্তফা শাহীন জানান, স্কুলে ফুটবল খেলার আয়াজন হবে। তাই মাঠ পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে স্কাউট শিক্ষার্থীরা তার নির্দেশে স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজটি করেছে বলে তিনি দাবি করেন। পাশাপাশি বিষয়টিকে খুব হালকাভাবেই দেখছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

প্রধান শিক্ষক আবদুল বারী দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো যায়। এতে কোন অসুবিধা নেই। এ ব্যাপারে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মনোয়ারা সুরুজ বলেন, জাতিসংঘের শ্রম আইনে শিশু শ্রমের কথা নিষিদ্ধ থাকলেও আমাদের দেশে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশের পাশাপাশি শারিরীক গঠনের বিকাশেরও প্রয়োজন আছে। তবে ওজনে ভারী কাজ শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া কোনভাবেই উচিত নয়, তাতে কাজের প্রতি শিশুদের অনীহা সৃষ্টি হবে। এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রেহেনা আকতার দু:খ প্রকাশ করে বলেন, এটি খুবই অন্যায় কাজ হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করা হবে। তিনি যা নির্দেশ দেবেন সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের দিয়ে ইট বহন করানো স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেনি। কাজটি অমানবিক হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দিলে সেটিও আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। যেখা‌নে এসব কোমলমতি ‌শিক্ষার্থী‌দের হা‌তে থাকার কথা বই, খাতা, কিংবা কলম। সেখা‌নে তা‌দের উপর চাপি‌য়ে দেয়া হ‌য়ে‌ছে অ‌বৈধভা‌বে ‌শিশু শ্র‌মের মত এমন ভা‌রি কা‌জ। এ‌তে ক‌রে যেম‌নি ক্ষ‌তিগ্রস্থ হ‌য়ে‌ছে লেখাপড়ায় অনুশীলন। তেম‌নি ঘ‌টে‌ছে মান‌সিকতার বিবর্তন। প্র‌তিষ্ঠান‌টির বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নি‌য়েও উঠ‌ছে নানা প্রশ্ন। ‌

add-content

আরও খবর

পঠিত