নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( শহর সংবাদ দাতা ) : নারায়ণগঞ্জে একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট বাসায় মা ও অন্ত:সত্ত্বা মেয়েকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছেন। ১লা মার্চ মঙ্গলবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় স্বপন দাসের মালিকানাধীন মাতৃ সদন নামে একটি ৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনাটি ঘটে। এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুইজনকে আটক করেছে। দিন দুপুরে ফ্ল্যাটে ঢুকে হত্যার ঘটনায় শহরে ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে।
নিহতরা হলেন : রুমা চক্রবর্তী (৪৬) ও তার মেয়ে ৭ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী (২২)। নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ চক্রবর্তী স্থানীয় একটি পাইকারি আড়তে ম্যানেজারের চাকরি করেন।
ফ্ল্যাট বাসায় মা ও মেয়ের খুনের ঘটনায় দুইজনের মধ্যে একজনের মরদেহ মেঝেতে ও অপরজনের মরদেহ অর্ধেক খাটের উপর ছিল। পুরো ফ্লোর ছিল রক্তমাখা। ওই ঘটনায় রক্তমাখা ছুরিসহ জুবায়ের নামে এক যুবককে এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক করেছে পুলিশ। সে পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা যায়। তবে আটক নারীর নাম তদন্তের খাতিরে প্রকাশ করেনি পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ওই যুবক দুই জনকে কুপিয়ে ও জখম করে হত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, আটক জুবায়ের দুপুর পৌনে ৩টার দিকে শহরের নিতাইগঞ্জে ডালপট্টি এলাকায় স্বপন দাসের মালিকানাধীন ভবনটিতে প্রবেশ করেন। আধাঘণ্টা পর রক্তাক্ত ছুরি নিয়ে এক নারীকে নামতে দেখে সন্দেহ হলে নিচ তলার একটি আড়তের কর্মচারী ওই নারীকে আটকে বাইরে থেকে মূল ফটক বন্ধ করে আশপাশের লোকজনকে খবর দেন।
এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হলে স্থানীয় ৪ যুবক ও পুলিশ ওই ভবনের ছয় তলায় উঠলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করা অবস্থায় দেখতে পান। এরপর দরজা ভেঙে প্রবেশ করলে সেখানে মা ও মেয়ের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর ফ্ল্যাটের ড্রইং রুমের দরজা ভেঙে জুবায়ের নামে ওই যুবককে হাতে গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় রক্তাক্ত ছুরিসহ আটক করে পুলিশ।
এদিকে নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ চক্রবর্তী জানান, আমি এখানেই একটি দোকানে কাজ করি।আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই বা ছিলও না। কেন এ হত্যার ঘটনা সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি খবর পেয়ে এসে দেখি সব শেষ। আমার বাড়ির নিচে ও ফ্ল্যাটে পুলিশ। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
তিনি আরও জানান, আমার মেয়ে ৭ মাসের অন্ত:সত্ত্বা। যে এখনো পৃথিবীর আলো দেখেনি তার কি দোষ ছিল। এটা তো দুইজনকে হত্যা নয় একসাথে তিনটি জীবন কেড়ে নিয়েছে ঘাতক। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে কয়েক মাস আগে থেকেই আলাদা থাকে। আমার মেয়ে অন্ত:সত্ত্বা থাকায় সে আমার বাড়িতে এসেছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজামান বলেন, মা ও মেয়েকে খুন করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে দুইজনকে আটক করি। নিহতদের শরীরে ছুরির আঘাতের অনেক চিহ্ন রয়েছে। তবে তদন্তের প্রয়োজনে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত জুবায়ের খুনের কথা স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জুবায়ের নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তিনি বিক্ষিপ্তভাবে নানা তথ্য দিচ্ছেন। প্রয়োজনে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশ, ডিবি ও সিআইডি এসেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রুমা চক্রবর্তীর একমাত্র পুত্রবধূ দৌড়ে নিচে নেমে আসেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, খুনি তাকেও ধাওয়া করে।