নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জের একাধিক আসনে দলীয় মনোনিত প্রার্থী সহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শেষ দিনে ৬১ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। যেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এই প্রধান তিনটি দলেই রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামীলীগের ৪জন , বিএনপির ১জন ও জাতীয় পার্টির ১ জন প্রার্থী। রাজনৈতিক ভাষায় বিদ্রোহ প্রার্থী বলা হলেও তাদের দাবী বিদ্রোহ নয় কৌশল। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে প্রধান তিনদলে প্রার্থীদের বিদ্রোহ এখন দৃশ্যমান। প্রতিদন্দ্ধি প্রার্থীকে পরাজয় করে প্রার্থীরা নিজের বিজয় ছিনিয়ে আনতে করে যাচ্ছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে। কিন্তু প্রার্থীদের এমন অবস্থানের কারণে একাদশ নির্বাচনে জটিল সমীকরণের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নারায়ণগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পালিত কন্যা এবং কেন্দ্রীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসাইন মৌসুমী, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে জাতীয় শ্রমিকলীগের শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যান বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ এবং বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বুধবার (২৮ নভেম্বর) প্রার্থীদের ছিলো মনোনয়ন ফরমের শেষ দিন। আর এ দিনটি ঘিরে জেলা র্নিবাচন কমিশন কার্যালয়ে ছিলো ব্যপক আনন্দঘন পরিবেশ। সকাল ৯টা থেকেই শুরু হয় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন দাখিলকারিদের পদচারণা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাংবাদ কর্মীদের ব্যস্ততা।
জানা গেছে, মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে আজ মোট ৬১ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে জমা দিয়েছেন ১০ জন প্রার্থী, ২ আসন থেকে ৮জন, ৩ আসন থেকে ১৫, ৪ আসন থেকে ১৬ ও ৫ আসন থেকে ১২ জন। মনোনয়ন দাখিলকারীদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া দিপু, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অ্যাড. তৈমুর আলম খন্দকার, সিপিবির মনিরুজ্জামান চন্দন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান (হাবিব) ও রেহান আফজাল।
এর আগে মঙ্গলবার জমা দিয়েছেন মো. ইমদাদুল্লাহ, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। নারায়ণগঞ্জ- ২ (আড়াইহাজার) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বাবু, সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক রাস্ট্রদূত ও আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ হোসেন, বিএনপির সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ, উপজেলা বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন,বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী নাসির উদ্দিন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোশারফ হোসেন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমী, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, আওয়ামীলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মনোনীত প্রার্থী মজিবুর রহমান মানিক। এছাড়া সিপিবির মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মাওলানা সানাউল্লাহ নূরী, গণফ্রন্টের প্রার্থী মো. সিরাজুল হক।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান, সতস্ত্র থেকে কাউসার আহম্মেদ পলাশ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা ও সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মো. শাহআলম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ, সিপিবির ইকবাল হোসেন, বাসদের সেলিম মাহমুদ, মুফতি মনির হোসেন কাশেমি জমিয়তে ওলামা ইসলাম বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহমুদ হোসেন, সালাউদ্দিন খোকা মোল্লা জাতীয় পার্টি, গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গোলাম মো. কায়সার, ইসলামী আন্দোলনের শফিকুল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির হিমাংশু সাহা এবং ন্যাপের মো. ওয়াজি উল্লাহ।
নারায়ণগঞ্জ- ৫ (সদর ও বন্দর) আসন থেকে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির একেএম সেলিম ওসমান, বিএনপির অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শরীক নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম, ২০ দলীয় জোটের শরীক সাম্যবাদি দলের সাঈদ আহমেদ, বাসদের আবু নাঈম খান বিপ্লব, সিপিবির মন্টু ঘোষ, ইসলামী ঐক্য ফ্রন্টের সৈয়দ আল্লমা বাহাদুর শাহ, রেজাউল আল আলতাফ কল্যান পাটি, জাকের পার্টিও মোরশেদ হাসান জামাল, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবুল কালাম ও খেলাফত মজলিসের মো.কবির হোসেন। প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর বুধবার শেষ হয়েছে মনোনয়ন জমার শেষ দিন। ২ ডিসেম্বর বাছাই, ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং ভোট গ্রহন ৩০ ডিসেম্বর।