নারায়ণগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় লঞ্চ চলাচল স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে মালিকপক্ষ দ্রুততম সময়ে লঞ্চ চালুর দাবি জানালে নৌ-মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের জন্য তাদের ডাকা হয়। গত ৩ই এপ্রিল রবিবার দুপুর সোয়া ২টায় নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা। তবে বৈঠকেও লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রবিবার নৌ-মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমাদেরকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জে সানকিং ডেকের লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের এই লঞ্চগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধের অনুরোধ করেছিলাম। এছাড়াও আপার ডেকের লঞ্চ আমাদের দেওয়ার কথা বলেছি। এর জবাবে সচিব আমাদের বলেছেন, আপনারা লঞ্চ ম্যানেজ করে নিয়ে আসেন। আর নয়তো লঞ্চ বানিয়ে নিন। মিটিংয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন।

বন্ধ করে দেওয়া লঞ্চগুলো পরবর্তী সময়ে চলাচলের কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউজ্জামান বাদল বলেন, মিটিংয়ে সানকিং ডেকের লঞ্চের বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এগুলো চলাচলে আর কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

এর আগে গত ২০শে মার্চ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী ৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম.এল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।

এই ঘটনার ৪ দিন পরে নারায়ণগঞ্জ টু মুন্সীগঞ্জ নৌপথে এসটি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত নামে সি-ট্রাক চালু করা হয়। এর একদিন পরে নারায়ণগঞ্জ টু চাঁদপুর নৌ পথে ঢাকা থেকে আগত এমভি নিউ আরিফ নামে দোতলা লঞ্চ চালু করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জের ছোট লঞ্চগুলো অনিরাপদ বলে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাতটি রুটে প্রতিদিন ৭০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। ৭টি নৌপথ হলো নারায়ণগঞ্জ-হোমনা উত্তর থানা, নারায়ণগঞ্জ-মতলব থানা, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-তালতলা ও নারায়ণগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর। তবে তালতলা ও বাঞ্ছারামপুর নৌপথে নাব্যতার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এসব নৌপথে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।

বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবুলাল বৈদ্য বলেন, ছোট লঞ্চগুলো চলাচলে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আপাতত নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত একটি সি-ট্রাক এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত একটি বড় লঞ্চ চলাচল করছে।

তিনি আরো বলেন, অনেককেই বড় লঞ্চ চালাতে চাচ্ছে। তাদের জানিয়েছি আবেদন করতে। সে প্রেক্ষিতে আমরা চলাচলের অনুমতির ব্যবস্থা করবো।

এদিকে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ চালুর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের নেতারা।

সংস্থার নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, লঞ্চ চালুর দাবি জানিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি। এছাড়াও লঞ্চ চালুর বিষয়ে আমরা বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি। রবিবার সচিবের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। তবে আমরা আশানুরূপ ফল পাইনি। সাধারণ যাত্রী, মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থে দ্রুততম সময়ে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি পেতে চেষ্টা চলবে বলে জানান তিনি।

add-content

আরও খবর

পঠিত