নারায়ণগঞ্জে ছেলের পর পিতার লাশ, জামিনে অভিযুক্তরা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পূর্ব শত্রুতার জেরে ছেলের পর পিতাকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিচারের দাবী করেও সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকীতে নিরাপত্তাহীণতায় ভোগছে অসহায় পরিবারটি। এদিকে এ ঘটনার মামলা নিয়ে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠার আগেই কক্সবাজার থেকে এক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তবে ৯ দিন হলেও পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার নেই কেউ বরং এসময়ে অভিযুক্তরা জামিন লাভ করে ফেলায়, ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ এনে দোষছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

জানা গেছে, মাত্র ১৫ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধে আড়াই বছর আগে খুন হয়েছিল ছেলে শাহাদাৎ হোসেন অন্তু। সে ঘটনার রেশ না কাটতেই, বক্তাবলী এলাকার বেশ কয়েকজন চিহ্নিত ডাকাত ও সন্ত্রাসীরা এবার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের। যাকে ৩৪ দিন নিখোঁজ থাকার পর অর্ধগলিত লাশ দেখে শনাক্ত করে তার স্ত্রী ও সন্তানরা। আর এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতেও বেগ পেতে হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে। তাদের দাবী, স্থানীয় রশিদ মেম্বার, আওলাদ, সামেদ আলী, গনিসহ চিহ্নিত ডাকাত ও চাঁদাবাজ কালা জসিম গ্রুপের লোকজন পরিকল্পিতভাবে ছেলের পর খুন করেছে জাকির হোসেনকে।

এ বিষয়ে কথা হলে জাকির হোসেনের স্ত্রী খোরশেদা বেগম জানান, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে রশিদ মেম্বার, আওলাদ, সামেদ আলী, গনি, রাজিব। আমি আমার ছেলে ও স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই।

জাকিরের মেয়ে যুথি আক্তার জানায়, আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার এখনো পাইনি। যেকারণে আসামীরা আমার ভাইয়ের পর আমার বাবাকে হত্যা করেছে। রশিদ মেম্বার আমার বাবাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে আর বাবার সাথে কথা বলতে পারিনি। তারা তখন থেকেই আমাদের হুমকী দিতো।

তাছাড়া আমার ভাইয়ের মামলা তোলে নিতেও হুমকী দিয়েছিল। পরে আমার বাবা রশিদ মেম্বারের নামে জিডি করছিল কেন এ নিয়েই তার লোকজন এই হত্যা করেছে। আমার বাবাকে তারা নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।

তবে এসব ঘটনায় জিডি এবং অভিযোগ করেও সহযোগীতা না পাওয়ায় কিছু পুলিশ সদস্যের অবহেলার অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী পরিবার। নিহত জাকির হোসনের মেয়ে জামাই জাকির বলেন, জিডি করার পর থেকে আমার শ্বশুরকে খোঁজে বের করার জন্য পুলিশ কোন সহযোগীতা করেননি। তাদের কাছে বার বার গিয়েছি তারা তাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তিতে ৩৪ দিন পর বন্দর এলাকায় লাশের সন্ধান পেলে পড়নে থাকা পোশাক দেখে শ্বশুরকে চিহ্নিত করে। এমনকি ২ দিন ধরে এই মামলা করার জন্য দৌড়িয়েছি। মামলা নিতে পুলিশ অনীহা করেছিল। ২ জন পুলিশ সদস্য এ ঘটনা নিয়ে অভিযুক্তদের সাথে আতাঁত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে রশিদ মেম্বারকে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য জানা যায়নি।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত ওসমান গনির সাথে কথা হলে তিনি জানায়, তিনি জাকির হোসেনকে চিনেন না। কখনো দেখেন নি। তাকে ফাসাঁনো হয়েছে। আমরা জামিন নিয়েছি খুব শিঘ্রই এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তোলে ধরবো।
এ ঘটনায় ফতুল্লা থানার তদন্ত ওসি মহসিন মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন, জিডি পাওয়ার পর পুলিশের পক্ষে যতটুকু করার, ততটুকু পুলিশ করেছিল।

বন্দর থানায় মামলা রুজু হওয়ায় সে বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিকের সথে কথা হলে তিনি জানান, মামলা বন্দর থানায় হয়েছে। তবে তদন্ত করছে নৌ থানা পুলিশ। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে নৌ থানা ওসি মনির হোসেনের সাথে কথা হলে জানায় কলাগছিয়া নৌ পুলিশ ফারি বলতে পারবে। সেমতে নৌফারি ইনচার্জ মেহেদী জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানায়, এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের তারপরেও আমি যতটুকু জানি তা বলতে পারবো। স্বজনরা পড়নের পোশাক দেখে এবং লাশের সাথে গুলের ডিব্বা সহ টুপি দেখে চিহ্নিত করেছে। আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা উদ্ধার করে সুরাত হাল রিপোর্ট করেছে। আইনী কাজ প্রক্রিয়াধীন। তার স্ত্রী মামলা করেছে। র‌্যাব একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। জেনেছি ১২ জন অভিযুক্ত রয়েছে। অনেকেই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় পুলিশ তৎপর হয়ে উঠার আগেই ছায়া তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব-১১। ফলশ্রুতিতে বিচক্ষনিক অভিযানে র‌্যাব-১৫ এর সহায়তায় কক্সবাজার এর সুগন্ধা বীচ পয়েন্ট এলাকা হতে আসামী কবীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব-১১।

add-content

আরও খবর

পঠিত