নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ভবনে গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ মো. সাব্বির (১২) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের প্রায় ৪২% দগ্ধ ছিলো। এখন পর্যন্ত ওই বিস্ফোরণে দগ্ধ ৬ জনের মধ্যে বাবা, ছেলেসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ ১৩ই মার্চ শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত মো. সাব্বির নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব ইসদাইর এলাকার মো. শামিমের ছেলে।
এর আগে গত ৯ই মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবস্থায় মিশাল (২৭) মারা যান। এর পর ১১ই মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ১২ বছরের চাচাতো ভাই মাহফুজ (১২) এবং ১২ই মার্চ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ টায় দেড় বছরের শিশু মিনহাজ এর রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। বর্তমানে মিতা (২৩) ১৪ শতাংশ ও তার মেয়ে আফসানার (৫) ১০% দগ্ধ অবস্থায় এইচডিইউতে মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।
সাব্বিরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে খালু মো. শহীদ জানান, সাব্বিরের শরীরের প্রায় ৪২% দগ্ধ ছিলো। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইইউতে চিকিৎসাধীন ছিলো। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মারা যায়। লাশ নিয়ে আসার জন্য আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি ।
এদিকে ঘটনার দিনের প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বিরের খালা রাহেলা রেগম জানান, ১লা মার্চে নতুন বাসায় উঠি। নতুন বাসায় আসার পর ঘটনার ৩দিন আগে সাব্বির আমাদের বাসায় বেড়াতে আসছিলো। বেড়াতে আইসা আজকে ওরে লাশ হতে হল। তিনি আরও জানান, ৩ ভাই-বোনের মধ্যে ওই ছিলো একমাত্র ছেলে। এর আগে বড় বোনটাও অসুখে মারা যায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ৮ই মার্চ সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় মাসদাইর পতেঙ্গার মোড় এলাকায় নাসরিন আক্তারের মালিকানাধিন ছয় তলা ভবনের হাজী ভিলার ষষ্ঠ তলায় ভাড়াটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে এ অগ্নিকান্ড ঘটে। এতে দগ্ধদের প্রথমে শহরের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে মেডিক্যাল অফিসার গেলাম মোস্তফা তাদের শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউটে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে আশংকাজনক অবস্থায় দগ্ধ সকলকে বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
আগুনের দগ্ধরা হলো : গার্মেন্টস শ্রমিক মিশাল, তার স্ত্রী মিতা, তাদের দেড় বছর বয়সের শিশু সন্তান মিনহাজ এবং মিশালের দুই শ্যালক হোসিয়ারি শ্রমিক মাহফুজ ও সজীব। এদিকে আগুনের খবর পেয়ে মন্ডলপাড়া ফায়ার স্টেশনের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তবে তার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলেন স্থানীয়রা। আগুনে ওই ফ্ল্যাটের অধিকাংশ আসবাবপত্র পুঁড়ে যায়। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা।
দগ্ধ মিতার মা রাহেলা বেগম বলেন, রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরেন মিশাল। অন্যরা বাড়িতেই ছিল। কিছুক্ষণ পরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের মন্ডলপাড়া ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার বেলাল হোসেন জানান, গ্যাসের চূলার লিকেজ থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে ওই ফ্ল্যাটের বিভিন্ন রুমে তা জমাট বেঁধে থাকে। রাতে খাওয়ার পর পরিবারের কেউ গ্যাসের চুুুলা অথবা সিগারেট জ্বালানোর উদ্দেশ্যে আগুন জ্বালালে মূহুর্তের মধ্যে ঘরে আগুন ধরে যায় এবং অন্যান্য রুমে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পরিবারের ৬ জন দগ্ধ হন। তাদের ডাক চিৎকারে বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা এসে আগুন নেভিয়ে ফেলে।