নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব সংবাদদাতা ) : নারায়ণগঞ্জের সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে ২ টাকার ভাড়া নিয়ে যাত্রীর সাথে ইজারাদার লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি, ঝগড়া ও এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে ইজারাদার ট্রলার সার্ভিস বন্ধ করে দিলে দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী কয়েক হাজার যাত্রী। এ ঘটনায় ১ জন নারীসহ ৬ জন যাত্রীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত ২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌ-থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো.মকবুল মাঝি (২৩) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে নৌ-থানা পুলিশ। আটক ব্যক্তির বাড়ি চাঁদপুর। তবে তিনি বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ কদমরসূল এলাকায় বসবাস করেন। সে মৃত আরশাদ মাঝির ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘাট পাওয়ার সময় এক যুবককে ব্যাপক মারধর করে ঘাটের টোল আদায়কারিরা। এসময় পাবলিক ক্ষেপে গেলে টোল আদায়কারিদের সাথে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় একজন নারীর মাথা ফেটে রক্ত ঝড়তে দেখা গেছে। এছাড়াও অনেকেই আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে সাধারন যাত্রীরা বলেন, নতুন ইজারাদার আসার পর থেকে টোল আদায়কারিদের অত্যাচার অনেকাংশে বেড়ে গেছে। সামান্য এক ব্যাগ বাজার নিয়ে গেলে তারা ১০ টাকা চেয়ে বসে থাকেন। তাদের ব্যবহার ও কথাবার্তা খুবই খারাপ, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বলতে গেলে পুরো বন্দরবাসীকে তারা জিন্মি করে রেখেছেন শুধুমাত্র একটি ঘাট দিয়ে। আমরা এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই।
খেয়াঘাটে দুর্ভোগের শিকার যাত্রী সেলিম হোসেন বলেন, সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় নৌকাগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী উঠে পড়ে। ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়েছি। তিনি জানান, ট্রলার বন্ধ থাকায় মারামারির ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।
ঘাট ম্যানেজার সাব্বির হোসেন হৃদয় বলেন, আজ সকালে ঘাট ভাড়া নিয়ে মকবুল মাঝি নামে এক যুবকের সাথে আমাদের টোল আদায়কারিদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় যুবকের কপাল ফেটে রক্ত বের হলে, আমি তার কপাল স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে বিচারের আশ্বাস দেই। পরে যুবকটি চলে যায়। কিন্তু ঘাট থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে যুবক ফোন দিয়ে লোকজন আনে। এক দফা ওই লোকজন নিয়ে আসলে, আমি ফের তাদের বিচারের আশ্বাস দিলে তারা চলে যায়। কিন্তু এক কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ করে ওরা আমাদের ঘাটে হামলা চালায়। এসময় তারা আমাদের ঘাটের সিসি ক্যামেরা ও ফ্যান ভাংচুর করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে যাত্রী প্রতি ভাড়া ২ টাকা করে। মকবুল মাঝিসহ ৩ জন যাত্রী বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছেন। কিন্তু ভাড়া দিয়েছে ২ জনের। ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদের কাছে জানতে চান তারা কতজন। কিন্তু তারা কোন উত্তর দেয়নি। এতে ঘাটের টাকা উত্তোলনকারীরা বলেন, বোবা নাকি। এ নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই যাত্রী চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর লোকজন নিয়ে ঘাটে এসে ইজারাদারের লোকজনদের উপর হামলা করেন।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নৌ-থানা পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, মারামারির খবর শুনে দ্রুত গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। একই সাথে একজনকে আটক করে সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিচুর রহমান জানান, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগটি আমলে নেয়া হয়েছে ও একজনকে আটক করা হয়েছে।