নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত মো. দিদার। বিগত সময় আওয়মী লীগ সরকারের আমলে দলের নেতাদের প্রভাব বিস্তার করে বুনে যান পরিবহন মাফিয়াদের অন্যতম হোতা। তবে এবার তিনি বিএনপি দলের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ওসমানদের সহযোগী হলেও মিস্ত্রি থেকে কোটিপতি পরিবহন মাফিয়া দিদার এখনো কিভাবে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে বীরদর্পে রয়েছে।
জানা গেছে, শামীম ওসমানের এই ঘনিষ্টজন ইতমধ্যেই চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলায় জড়িয়েছেন। এমনকি পরিবহনে নানা অনিয়ম ও চাঁদাবাজির কারনে বিভিন্ন সংবাদপত্রের শিরোনামও হয়েছেন। গত ৫ আগষ্টে ছাত্র-জনতার গণঅভূথ্যানে এসব পরিবহন মাফিয়াদের অনেকেই এখন গাঁ ঢাকা দিয়েছে। অনেকেরই বন্ধ হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। কিন্তু ওসমানদের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হলেও বিএনপির কিছু নামদারীদের সাথে সখ্যতা করে পরিবহন সেক্টরে তিনি এখনো সরব রয়েছেন। পরিবহন পরিচালনা থেকে শুরু করে শহরের বুকে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই দিদার।
সূত্রে জানা গেছে, এই দিদার ছিল একসময়কার মিস্ত্রি। সে তার সহযোগী বোগদাদ, সুমন ও মল্লিক এই তিনজন সিন্ডিকেট করে বুড়িগঙ্গা ট্রান্সপোর্ট থেকে বিগতসময় পুলিশ এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামেই ব্যপক চাঁদাবাজি করেছেন। ওই সময় গাড়ির মালিকরা টাকার হিসাব চাইলেও সে সাধারণ মালিকদের নানাভাবে হুমকি ধমকি দিয়েছিল। এমন অভিযোগে সংবাদও প্রকাশ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮২ সাল থেকে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করা এই দিদার এখন পরিবহন মাফিয়া। কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক এখন তিনি। নারায়ণগঞ্জ শহরের উত্তর চাষাড়া, চানমারি, শিকশন বাগ ও সবুজ বাগে তার নামে এবং বেনামে ৪/৫ টা বাড়ী আছে। এছাড়া কালিগঞ্জের কেরানীগঞ্জে গার্মেন্টস শাটিং শুটিং এর বিশাল কারখানা আছে। মিরপুরে ভায়রার বাসার সাথে ভাংগারী ও স্ক্রাবের ব্যবসা আছে। কয়েকটা ফ্ল্যাট আছে। তার গ্রামের বাড়ীতে ছিল মাটির ঘর। বর্তমানে চৌচালা ২য় তলা বাড়ী। বিশাল লেক, মৎস খামার। আরো রয়েছে নামে বেনামে অনেক জায়গা সম্পত্তি। এছাড়াও কয়েকটি ব্যাংকের সাথে তার বড় অংকের লেনদেন রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে প্রতিটি পরিবহনে রয়েছে তার গাড়ী। তার প্রতিটি পরিবহনে নিয়ন্ত্রণ রাখতেও নিয়োগ দিয়েছিল নিজস্ব স্বজনরা। যেমন ছেলে, ছোট ভাই, ভাগিনা, ভাতিজা, তার বোনের জামাই, বেয়াই এবং রয়েছে তার অনুগতরা।
অভিযোগ রয়েছে, বোগদাদ এবং সুমনের মাধ্যমে চাষাড়া টু চিটাগাং রোড ইউনিটি নামে একটি লেগুনা সার্ভিস চালু করেছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য তাদের চাঁদাবাজির কারণে সেই পরিবহনটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, প্রতিটি মালিককে পথে বসিয়ে দিয়েছে। পরে চাষাড়া টু সাইনবোর্ড রোডে সিটি সার্ভিস নামে চলাচল করে যাহা তার ছেলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করেছিল, সেটিও বিলুপ্তির পথে। তার ছোট ভাই কাজল আল্লাহ ভরসা পরিবহন হতে টাকা উঠাতো। তার ভাগিনা দেলোয়ার বাঁধন পরিবহন পরিচালনা করে এবং জোরপূর্বক পরিবহন মিস্ত্রী সমিতির সভাপতি হয়েছিল। দিদার নিজে বন্ধু এবং আনন্দ পরিবহনেও জোরপূর্বক সভাপতি হয়। প্রতিটি পরিবহনে তার আধিপত্য বহাল রাখার জন্য তার আত্মীয়স্বজন, ভাগিনা ভাতিজা দ্বারা নিয়ন্ত্রন করতো। কাউকে সে তোয়াক্কা না করে নিজের মত করেই চাঁদার টাকা খরচ করে এবং কিছুদিন পর পর দেশবিদেশ ভ্রমন করতো এমন অভিযোগও মালিকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মালিক জানান, অবৈধ কর্মকান্ড হইতে সাধারণ মালিকদের এবং বিভিন্ন পরিবহন হইতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য আমরা বহুবার নিষেধ করেছি। কিন্তু তার সাথে আমরা পারি নি। কারণ তিনি ছিলেন শামীম ওসমানের সহযোগী। যে কারনে সে প্রভাব খাটিয়ে আমাদের নানাভাবে হুমকী দিতো। তাই আমরা চাই সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে এই পরিবহন মাফিয়া দিদারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনিক সহযোগীতা। সাধারণ মালিকগণ আশা করে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করলে তার কাছে পরিবহনে ব্যপক চাঁদাবাজী এবং দুর্ণিতির আদ্যোপান্ত পাবে।
আর এসব অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে মো. দিদার জানায়, এসব অভিযোগ সত্য নয়। যারা মামলা করেছে তারা কুচক্রি মহল। আমাদের বন্ধু পরিবহন নিতে চায়। ওদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আমাদের সকল বন্ধু পরিবহনের মালিকরা। পরে কলটি কেটে গেলে। পূণরায় রাতে কল দেয়া হলে তিনি কলটি রিসিভ না করায় অভিযোগ গুলোর বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।