ধর্মঘটের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে দুর্ভোগে যাত্রীসাধারণ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : দেশব্যাপী নৌ-যান শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে নারায়ণগঞ্জের নদীবন্দরে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের নদীবন্দরের লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন লঞ্চ। নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৭০টি যাত্রীবাহি লঞ্চ সহ সহাস্রাধিক বাল্কহেড ও পণ্যবাহি কার্গো চলাচল করে থাকে। ধর্মঘটের ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি যাত্রীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ। তবে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষের দাবী এ ধর্মঘট সম্পর্কে তারা অবগত নয়।

জানা গেছে, আজ সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জে ১১ দফা দাবীতে ধর্মঘট পালন করছে নৌ-যান (কার্গো, কোস্টার) শ্রমিক নেতবৃন্দ। আর এ ধর্মঘটে অনেকটাই  বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলার সাথে লঞ্চের নৌ-যান চলাচল ব্যবস্থা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মুন্সীগঞ্জসহ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল করলেও চাঁদপুর, মোহনপুর ও এখলাছপুর সহ অন্যান্য দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীসাধারণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চের অপেক্ষায় যাত্রীদের কেউ কেউ দুই তিন ঘন্টা যাবত টার্মিনালে অপেক্ষা করছে। আবার অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী বোঝাই লঞ্চে নিকটবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পারি দিয়েছে। ধর্মঘটের সমর্থনে লঞ্চঘাটে সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে কয়েকটি লঞ্চ। তবে ধর্মঘট পালনকারী শ্রমিক কর্মচারীরা লঞ্চঘাট থেকে অন্যত্র সড়ে আছে। আবার কোন কোন যাত্রী সুরেশ্বর ও বরিশাল যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ যাতায়াত করেও লঞ্চ পাচ্ছেন না। তাই যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

লঞ্চ শ্রমিকরা জানান, বর্তমান বেতনে তাদের সংসার চলেনা। বার বার আন্দোলন করে বেতন বৃদ্ধির চুক্তি হলেও মালিকরা মানছেন না। নিজেদের বাঁচার তাগিদেই ধর্মঘটে আছেন। দাবী না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলেও জানান তারা।

বাংলাদেশে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের দাবী, বহু আন্দোলনের পর সরকার দাবী মেনে নেয়ার পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও মালিক সমিতি তা মানছে না। দাবী আদায়ের জন্যই এ ধর্মঘট চলছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: বদিউজ্জামান বাদল জানান, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মালিক সমিতির কাছে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের দাবি উপস্থাপন করা হয় নি। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা, কি কারণে? কেন করছে? তিনি জানান, তবে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আজ বিকেলে সদরঘাটে লঞ্চ মালিক কার্য্যালয়ে সমস্ত লঞ্চ ও নৌ-যান মালিকদের নিয়ে আলোচনায় বসে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু জনগণের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বেতনভাতা বৃদ্ধি, নিরাপত্তা, নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে দেশব্যাপী লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন নৌযান শ্রমিকরা। নৌযান শ্রমিকদের একাংশের ডাকে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়। এ কারণে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে যাত্রীবাহী, মালবাহী ও তেলবাহীসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে সোমবার (১৫ এপ্রিল) শ্রম অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে নৌ-যান মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সেই খবরে অনেকেই ঢাকা সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে এসে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত