দখলকারী যত প্রভাবশালী হোক ছাড় নয় : সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন, কোনভাবেই পানি নিস্কাশনের খাল দখল করতে দেয়া হবে। সেলিম ওসমান ও হাতেম বুঝি না খাল দখল মুক্ত রাখতে হবে। প্রভাবশালীরা খাল দখল করবে আর আমাদের সাধারণ মানুষ জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাবে তা হতে পারে না। আর যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই হউক না কেন খাল দখল করে স্থাপনা করলে সেটা উচ্ছেদ করতে হবে। আর কিভাবে জলাবদ্ধতা দূর করা যায় তা নিয়ে বিসিক শিল্পনগরীর ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করেন এবং পানি সরাতে হবে। এ সময় তিনি আগামী ৭ দিনের মধ্যে খাল দখলকারীদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন অন্যথায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরী এলাকাসহ আশে পাশের জলাবদ্ধতা এলাকা পরিদর্শন করে সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে লীজ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে স্থাপনা তৈরি করা হলেও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে সেই লীজ বাতিলের ব্যবস্থা করে করা হবে। তার পরও কোন প্রকারে মানুষকে জলাবদ্ধতার কষ্ট সইতে দেয়া যাবে না। খাল দখল কিংবা সরকারী জায়গা দখল করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে থাকে সে যদি আমার লোকও হয়ে থাকে তার পরও ছাড় দেয়া হবে না।

সেলিম ওসমান আরো বলেন, খাল যে কেউ কিনতে পারেন। কিন্তু সেটি ভরাট করে যদি শিল্প কারখানাও তৈরি করতে হয় তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও খাল ভরাটের ব্যাপারে সরকারীভাবে আইনী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিসিক এলাকায় কমবেশি সাড়ে পাঁচশ রপ্তানিমূখী শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চারশ কন্টিনার পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এখানে সাড়ে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। তাই বিসিক শিল্পনগরীকে রক্ষাকরা সকলের দায়িত্ব। তাই খালটি অবশ্যই দখলমুক্ত করতে হবে। আর দখলকারী ব্যক্তি যে হোক না কেন যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কোন ছাড় দেওয়া হবে না। আমি তাদের প্রতি অনুরোধ রাখবো যাতে করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তারা সেচ্ছায় স্থাপনা সরিয়ে নেন। অন্যথায় জেলা প্রশাসনের পরবর্তী সভায় এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন সহ বাস্তবায়নে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিসিক শিল্প এলাকার ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, সামনেই রমজান মাস। বর্তমান পরিস্থিতিকে পুজিঁ করে কোন মালিক যাতে ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের বেতন- বোনাস পরিশোধ না করার অযুহাত তুলতে না পারেন সেজন্য পঞ্চবটি থেকে বিসিক ২নং গেট পর্যন্ত এবং বিসিক অভ্যন্তরের রাস্তা গুলোতে যাতে করে যানজট না থাকে। এজন্য মালিকদের উদ্যোগ নিয়ে প্রয়োজনের কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সহযোগীতা নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করতে হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে বিসিকের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পয়েন্টে কতিপয় ব্যক্তি অটো স্ট্যান্ড, ছোট কন্ট্রিনার স্ট্যান্ড তৈরি করে ব্যবসা করছেন অনেকে আবার চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে যেন বিসিক অভ্যন্তরে এই চিত্র আর না থাকে। যদি এগুলো পরিস্কার না হয় তাহলে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিসিক শিল্পনগরী রক্ষায় প্রয়োজনী যে কোন ব্যবস্থায় গ্রহনে কঠোর হতে হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ সাবেক সহসভাপতি মো: হাতেম, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শওকত আলী, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হোসেনে আরা বীনা, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মো: শরীফুল হকসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জে কল্যাণী খালসহ শাখা খালগুলো দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ অর্ধ শতাধিক স্থাপনা। এতে খাল সরু হয়ে ময়লা আবর্জনা জমে সদর উপজেলা ও ফতুল্লার শিল্পাঞ্চলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী। স্থানীয়ভাবে যেটি কাইল্যানী খাল নামে পরিচিত। ফতুল্লার মাসদাইর পুলিশ লাইন থেকে শুরু হওয়া এই খাল শাসনগাঁও হয়ে কাশিপুর বুড়িগঙ্গা নদীতে মিশেছে। এক সময় বড় বড় নৌকা চলাচল করত এই খালে। কিন্তু কালের বিবর্তনে, খালটি বেদখল হয়ে যাওয়ায় এখন জরাজীর্ণ। অবৈধভাবে দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান আর দ্বি-তল ভবন গড়ে তোলায় খালটিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মাসদাইর, শাসনগাঁও, ফাজিলপুরসহ কয়েকটি শিল্পনগরীর রাস্তায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও শিল্প মালিকরা অবৈধভাবে খাল দখল করায় পানি বুড়িগঙ্গায় পৌঁছাতে পারে না। ফলে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীসহ কয়েক লাখ শ্রমিককে।

add-content

আরও খবর

পঠিত