নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার সাড়ে ৪ বছর উপলক্ষে বিচারের দাবিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় চাষাড়া শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি এড. জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নিহত ত্বকীর পিতা সংস্কৃতিজন রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়। এসময় বরাবরের মত ওসমান পরিবারকে নিয়ে ত্বকি হত্যার বিচারের দাবিতে আবারো বক্তব্যের ঝড় উঠায় বক্তারা। এছাড়াও বিচার র্কায বিলম্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী সহ প্রশাসনের উপর।
বক্তব্যকালে নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, শামীম ওসমান, আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমান ত্বকী হত্যায় জড়িত রয়েছে। সারাদেশের মানুষ জানে এ হত্যাকান্ড কারা ঘটিয়েছে। তারপরেও এর বিচার হচ্ছে না।নারায়ণগঞ্জবাসী ত্বকী হত্যার বিচার একদিন অবশ্যই আদায় করবে।
কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ বলেন, শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমান ত্বকীকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দুইজন ঘাতক তা জানিয়েছে, র্যাবের তদন্তেও তা প্রকাশ করেছে। আজমেরী ওসমান এ ত্বকী হত্যায় জড়িত। সে এখন বড় গডফাদার হয়েছে। সে এখনো প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের সকল প্রমাণ থাকলেও আটক করা হচ্ছে না। আমাদের সাংস্কৃতিক জোটের উপর কিছুদিন পর পর হামলা হচ্ছে। এতে প্রতীয়মান তারা আসলেই হত্যাকারী। তাদের রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না। যত হামলা হবে তত আমাদের প্রতিবাদ বাড়বে।কিন্তু ত্বকীর হত্যাকারীদের একদিন অবশ্যই ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, বিচার বিলম্বিত করা গেলেও কখনোই তা বন্ধ করে রাখা যায় না। ত্বকী সহ সকল হত্যার বিচার আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরবো।
ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, আজ থেকে সাড়ে চার বছর আগে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু আজও ত্বকি হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। একটি বিচার প্রক্রিয়ার জন্যে অভিযোগপত্র, চার্জশীট প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থ্যা সাড়ে ৪ বছরেও ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্রটি আদালতে পেশ করেনি। অথচ এ হত্যার এক বছরেই র্যাব জানিয়েছে কারা হত্যা করেছে, র্নিযাতন করেছে। গাড়িতে করে শীতলক্ষায় কারা নিয়ে গিয়েছে। দেশের আলোচিত ৭ খুনের মতো জটিল মামলা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে পর্যন্ত সম্পন্ন হলো। দুই বছরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৫ খুনের মামলার রায় সম্পন্ন হলো। কিন্তু সাড়ে ৪ বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার পাই নাই।
এ দেশে সব কিছুই প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া না চাওয়ার উপর নির্ভর করে। প্রধানমন্ত্রী চান না যে ত্বকী হত্যার বিচার হউক। আর প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার কারণেই আজকে ত্বকী হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে । দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ বিচার না হওয়ার জবাবতো তাঁকেই দিতে হবে। ত্বকীর ঘাতক যারা এবং এ বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলকেই একদিন অবশ্যই বিচারের আওতায় আসতে হবে। এইটি আজ হোক আর কাল হোক বিচার হবে এবং সকলকে কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। আর ফাসিঁতে ঝুলতেই হবে। এ হত্যা মামলা যারা বিলম্বিত করেছে তারাঁও ছাড় পাবেনা। আমারা কোনও হত্যার বিচারের দাবিতে পিছ পা হবোনা। আশিক হত্যা, চঞ্চল ও মিঠু হত্যা হয়েছে। বহু হত্যাকান্ড সংগটিত হয়েছে যার বিচার আজ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। কেন সম্পন্ন হয়নি, এই হত্যাকারী বা হত্যার অভিযোগ যেই পরিবারের ঘাড়ে, তাদের পিছনে প্রশাসন থাকে। কিন্তু আমরা বিচার আদায় করে ছাড়বো। এই প্রতিজ্ঞা ব্যাক্ত করছি।
সভাপতির সমাপনি বক্তব্যে জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ত্বকী হত্যার বিচার তিনি করবেন আমরা সে বিচার দেখতে চাই। আমরা দাবি জানাই ত্বকীর ঘাতকদের দায় প্রধানমন্ত্রী আর প্রশ্রয় দেবেন না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, খেলাঘর নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, বাসদ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, সিপিবি জেলা সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সম্পাদক হিমাংসু সাহা, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, ন্যাপ জেলা সভাপতি এড. আদুল ওহাব, সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, প্রদীপ ঘোষ বাবু, মনি সুপান্থ, অমল আকাশ, শাহীন মাহমুদ, দীনা তাজরীন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, ৬ মার্চ ২০১৩ ত্বকীকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। এর দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ত্বকীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সাড়ে ৪ বছর ধরে প্রতিমাসের ৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে।