নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে।
শেষ মুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। যদিও দু’টি উপজেলায় ইতোমধ্যে বিনা প্রতিন্দ্বদ্বীতায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তবে তিনটি উপজেলাতেই চেয়ারম্যান পদে দাপটের সঙ্গে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের প্রার্থীরা। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অভিযোগ করছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুইজন রয়েছেন। তারা হলেন- সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভূঞা (আনারস) ও হাবিবুর রহমান (দোয়াত-কলম)। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মিজানুর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফেরদৌসী আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আড়াইহাজার উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া (দোয়াত-কলম), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া)।
এ উপজেলায়ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে রফিকুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহিদা মোশারফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সোনারগাঁ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন (আনারস), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু (মোটরসাইকেল) ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী হায়দার (দোয়াত-কলম)।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আবুল ফয়েজ শিপন (চশমা), এম জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঁইয়া (টিউবওয়েল), মাছুম চৌধুরী (তালা) ও আজিজুল ইসলাম (মাইক)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ফরিদা পারভীন (ফুটবল) ও মাহমুদা আক্তার (হাঁস)।
রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন। এই উপজেলার বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীর প্রতীক) পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী দোয়াত-কলম প্রতীকের হাবিবুর রহমান। তার পক্ষে সংসদ সদস্যের অনুসারী নেতা ও সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়াতে গোলাম দস্তগীর গাজীর এই পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সরব স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনারস প্রতীকের আবু হোসেন ভূঞা একসময় বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরাও সংসদ সদস্যের পছন্দের প্রার্থী হাবিবুরের পক্ষে কাজ করছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
আড়াইহাজারে নিজের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীকের সাইফুল ইসলামকে ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু। তার কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সংসদ সদস্য তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাও অংশ নিচ্ছেন। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়ার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার পৃথক দু’টি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দেন শাহজালাল মিয়া। দোয়াত-কলম প্রতীকের এ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন এবং শাহজালালের সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। যদিও এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বা রিটার্নিং কর্মকর্তা বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়নি।
এদিকে, সোনারগাঁ উপজেলায়ও চেয়ারম্যান পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তিনি তার অনুসারী নেতা-কর্মীদের আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল হোসেনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কায়সার হাসনাত তার দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ নাখোশ। তারা ঘোড়া প্রতীকের মাহফুজুর রহমান কালামের পক্ষে কাজ করছেন।
তবে শুধু বর্তমান সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাতই নন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাও তার পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বাবুল হোসেনের নাম ঘোষণা করেছেন। তার অনুসারী নেতা-কর্মীরদের তিনি বাবুলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিএনপি ও সমমনা সংগঠনগুলো গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনও বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে কিছু বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও দলীয়ভাবে বর্জনের অবস্থানে দৃঢ় দলটি। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক দেয়নি। দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্থানীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রভাব বিস্তার না করার জন্য। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের তিনটি উপজেলাতেই ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা পছন্দের একজন প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে তাদের দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠছে। যদিও এখন পর্যন্ত দল থেকে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি আরও প্রকট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নেতাকর্মীরা। এর জন্য তারা দায়ী করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কারণ তাদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ নেতাকর্মীদের।