তাজরিন ফ্যাশনের শ্রমিক হত্যার ৪ বছর, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব সংবাদদাতা ) :  নভেম্বর ২০১২ সালে তাজরিন ফ্যাশনের সর্বগ্রাসী আগুনে পোশাক শিল্পে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় শ্রমিক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল। আশুলিয়ার নিশ্চিন্ত পুরে তাজরিনের এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শত শত শ্রমিক দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়ে ছিল। যদিও পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ১১৪ জন, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অসংখ্য শ্রমিক। এই মর্মান্তিক ঘটনা আজও হৃদয় থেকে ভুলতে পারেনি স্বজন হারা পরিবার ও এদেশের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর মানুষের চোখের জল এখন ঝরছে। অঙ্গ হারানো শ্রমিক তার পরিবারে বুঝা হয়ে নিদারুন কাষ্টে দিনাতিপাত করছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে গ্রাম থেকে আসা অসহায় দারিদ্র মানুষ গুলো বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ও পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে তাজরিনে কাজে যোগদান করেছিল। কিন্তু মুনাফালোভী মালিকের লালসার আগুনে পুড়ে তাদের সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।

এই ঘটনার ৪ বছর পূর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত অনেক পরিবার ক্ষতিপূরণ পাইনি অথবা যা পেয়েছে তা যথার্থ নয়। আই. এল. ও  কনভেনশন বা আন্তর্জাতিক মান অনুসারে তাদের  ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি । আহতদের অনেকের চিকিৎসা সম্পন্ন করা হয়নি, যারা পঙ্গু হয়েছে তাদের পূর্ণবাসনও করা হয়নি।

যে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে আজ তাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই অকালে জীবন দিতে হচ্ছে তাদের। পোশাক শ্রমিকদের প্রতিটি মুহুর্ত যেন নিরাপত্তাহীনতা- শোষণ-বঞ্চনা-অসহাত্ব আর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। আর সরকারের কাছ থেকে তাজরিনের নিহত ৫৫ জন শ্রমিকের প্রাপ্তি হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে এক খন্ড জমি। অন্যদিকে শ্রমিক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত খুনি মালিকদেরকে সরকার আশ্রয় পস্রয় দিয়ে রক্ষাকরে চলেছে।

তাজরিন ফ্যাশনে আগুনে পুড়িয়ে শ্রমিক হত্যার দায়ে কারখানার মালিকসহ দোষীদের বিরুদ্ধে ২৫ নভেম্বর ২০১২ ইং আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এস. আই. খাইরুল ইমলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। উক্ত মামলার আসামী দেলোয়ারসহ গ্রেফতার হওয়া অপরাধীরা  জামিনে মুক্তি পেয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আদৌ শ্রমিক হত্যাকারীদের যথার্থ শাস্তি হবে কি না তা নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে। স্বজন হারা পরিবার ও শ্রমিকদের চাওয়া বিচারের বাণী আজ নিভৃতে কাঁদে।

এই সময় কালে ৩০ বছর পূর্বে প্রণীত ক্ষতিপূরণ আইন বর্তমানে খুবই অসামঞ্জস্য পূর্ণ ও অপ্রতুল। সুতরাং ক্ষতিপূরণ আইনের পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করা অতিব জরুরী। সকল শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা, সকল শ্রমিক  বিশেষকরে নারী শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিভিন্ন  শিল্পাঞ্চলে- জরুরি বিভাগ, বার্ন ইউনিট ও এ্যাম্বুলেন্সসহ আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা ও শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, সকল কারখানায় কলোণী ভিত্তিক বিশ্রামাগার, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন। আগামীদিনে সু-শিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টির মাধ্যমে পোশাক শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। পোশাক শিল্পের স্থায়িত্ব ও বিকাশের লক্ষ্যে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তুলতে হবে।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত