নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ১১ জনের মধ্যে স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪২) এর মৃত্যুর একদিন পর স্বামী হাবিবুর রহমানও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২৭ই এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুর রহমানের মৃত্যু হয়। নিহতের মেয়ের জামাতা বিপ্লব এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু হলো। এখনও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩ জন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
তিনি জানান, শুক্রবার দুর্ঘটনার পরই বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল দগ্ধদের। মঙ্গলবার দুপুরে আমার শ্বশুরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সার্পোটে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান। আজ তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।
গত ২৩ এপ্রিল সকাল ৬টায় ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা জামাই বাজার এলাকায় একটি ভবনের তিন তলার ফ্লাটে গ্যাস বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছিল। বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গিয়ে পাশের দোতলা ভবনের ছাদে পড়ে। বিস্ফোরণে ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটের দরজা-জানালার কাচ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া পাশের দোতলা ভবনের দরজা-জানালা ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। বিস্ফোরণে দুইটি ভাড়াটিয়ার ২ পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে থেকে হাবিবুর রহমানের পরিবারের ৬ জন দগ্ধ হয়েছে। অন্য পরিবারটির দগ্ধ ৫ সদস্য চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।
দগ্ধ হয়েছিলেন : হাবিবুর রহমান (৫৬), তার , তাদের ছেলে লিমন (২০), মেয়ে সাথী (২৫), তাবাসসুম মীম (২২), তার ৩ মাস বয়সী শিশুপুত্র মাহির , নিরাহার (৫৫), তার স্ত্রী শান্তা বেগম (৪০), তাদের ছেলে সামিউল (২৬), তার স্ত্রী মনোয়ারা আক্তার (১৬)। তাদের শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আজ মারা গেলেন স্বামী হাবিবুর রহমান। এর আগে ২৬ এপ্রিল মারা গেছেন তার স্ত্রী আলেয়া বেগম।
বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়া আলেয়া বেগমের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আলেয়া বেগমের স্বামী হাবিবর রহমানের ৮৫ শতাংশ ও শাশুড়ি সামান্তা বেগমের শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া সামিউলের শরীরের ১০ শতাংশ, তাবাসসুম মীমের শরীরের ২৫ শতাংশ, মীমের ৩ মাস বয়সী ছেলে মাহিরের ২০ শতাংশ, লিমনের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁরা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৩ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লা জামাই বাজার এলাকায় মডেল গার্মেন্টস এর দক্ষিণ পাশে স্থানীয় মফিজুল ইসলামের তিন তলা বাড়ির ৩য় তলায় ভাড়াটের ফ্ল্যাট বাসায় গ্যাসের চূলার পাইপ লাইনের বিস্ফোর নারী ও শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ হয়।
দগ্ধরা হলেন : হাবিবুর রহমান, লিমন, সাথী, মীম, মাহিরা (৩ মাস), আলেয়া, সোনাহার, শান্তি, সামিউল, মনোয়ারা ও আরেকজনের নাম পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে লিমন, সাথী , মীম , মাহিরা (৩ মাস) ও আলেয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দগ্ধ আলেয়া বেগমের সোমবার মৃত্যু হয়।
বিস্ফোরণের পর পরিদর্শনে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ওই বাড়িটি সিলগালা করে দেয়া হয়। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
ওই সময় উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা জানিয়েছিলেন, একজন নারীকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। শিশু সহ ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বার্ন ইউনিটের ডাক্তাররা জানিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে করা হবে।