নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ রিফাত ) : প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ। দাবদাহ থেকে সামান্য পরিত্রাণ পেতে গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। ইফতারেও ধর্মপ্রাণ রোজাদাররা তরমুজই পছন্দ করেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই তরমুজে হাতই দেওয়া যাচ্ছে না। আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে এখন আর তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। এদিকে তরমুজের এমন অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাস পেতে ৭ দিন বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অনেক ক্রেতা ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
মৌসুমের শেষে পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে বলে দাবি খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকাররা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে পিস হিসেবে নেওয়া তরমুজ খুচরা বাজারে কেজিতে বিক্রি করার কারণেই ভোক্তা পর্যায়ে তরমুজের দাম বাড়ছে।
নারায়ণগঞ্জের ফল পট্টি ও চারারগোপ এলাকার পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, সরাসরি ক্ষেত থেকেও পাইকাররা তরমুজ কিনে আনেন, আবার অনেক চাষি তরমুজ নিয়ে পাইকারদের কাছে আসেন। তবে যেভাবেই হোক না কেন এ বাণিজ্যে পিস হিসেবেই তরমুজের বেচা-বিক্রি চলে। আবার পাইকাররাও এনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পিস হিসেবেই বিক্রি করেন এসব তরমুজ। কিন্তু খুচরা বাজারে গিয়ে সেটি কেজি হিসেবে কিভাবে বিক্রি হচ্ছে সেটা কারও বোধগম্য নয়। যেখানে ক্রেতাদের অভিযোগেরও শেষ নেই।
এ বিষয়ে দিগু বাবু বাজারে তরমুজ নিতে আসা রফিক নামে এক ক্রেতা জানান, জীবনের প্রথম দেখছি তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হয়। ব্যবাসায়ীরা আমাদের সাথে একধরণের প্রতারণায় লিপ্ত হয়েছে। এক তো অধিক মূল্যে তরমুজ বিক্রি করছে। আবার সেটাকে সচল রাখতে কেজি দরেও বেচা শুরু করেছে। মানে আমরা যদি ৫০০ টাকা দিয়ে একটি ছোট তরমুজ কিনতে না পারি। তাহলে ৭০টাকা কেজি তে যেন তরমুজ কিনে নিয়ে যাই সে ব্যবস্থাও রেখেছে। অথচ অনেকেই দেখছি তা কিনছেও। তবে এটা একটি পচনশীল ফল, সকলে মিলে ৭ দিনের জন্য এ ফল বয়কট করলে, তারা দেখবেন ব্যবসার নামে প্রতারণা থেকে বেরিয়ে আসবে।
অন্যদিকে পাইকারী ও খুচরা বাজার বৃহত্তর ফলের আড়ৎ হিসেবে পরিচিত চারার গোপ এলাকায় তরমুজ কিনতে আসা আব্বাস জানায়, এখান থেকেই সকলে তরমুজ কিনে নিয়ে যেয়ে বিভিন্ন এলাকায় বা বাজারে এই ফলের ব্যবসা করে। তাই বিভিন্ন সময় আমি এখান থেকেই তরমুজ নিয়ে যাই। কিন্তু এবার তো সিন্ডিকেটে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রলারে করে হাজার হাজার তরমুজ নামানো হচ্ছে। সল্প মূলে ক্রয় করা সেসব তরমুজ তারা সিন্ডিকেট করে কোনটা ৫০০ টাকা, কোনটা ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। এর মানে গতবার যে তরমুজের মূল্য ১০০ টাকা সর্বনিম্ন ছিল। এবার সেটার মূল্য দাড়িয়েছে ১০০০ টাকা। তাই আমাদের উচিৎ এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করা। তা না হলে এই লকডাউন ও রমজানে মানুষের এমনি হাতে টাকা নেই , এরমধ্যে ব্যবসায়ীদের এমন ডাকাতি আমাদের মত মানুষের ফলে চাহিদা মিটাতেও দিবেনা। তাই আমার মনে হয় সকলে একজোটে ৭ দিন তরমুজ কিনা থেকে বয়কট করা । তাহলে তাদের উচিৎ শিক্ষা হবে। নিজেই দেখতে পারবেন রাস্তায় দাড়িয়ে সল্প মূল্যে আপনাদের কাছে কিভাবে ডেকে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছে।
এদিকে, গত বছর যে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়, এবার সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে শুরু করে হাজার দামে। এমনকি তরমুজ ব্যবসায়ীরা আগের সব নিয়ম ভঙ্গ করে পিস হিসেবের পরিবর্তে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। তবে ক্রেতাদের সিন্ডেকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লকডাউন ও ভালো ফলন না হওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন তারা।
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, দাম যাই হোক না কেন, চুয়াডাঙ্গার কালো তরমুজ ছাড়া পাইকারি বাজারে কখনো কেজি হিসেবে এ ফলটি বিক্রি হয়না। আর পিস হিসেব বলতে লট। অর্থাৎ একলটে ১শ থেকে হাজার বা তার বেশি তরমুজও থাকতে পারে। আকার অনুযায়ী ১শ তরমুজের দাম মৌসুমে ৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা, আর এখন শেষ দিকে এসে তা হয়তো ৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সেই তরমুজই খুজরা বাজারে গিয়ে কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে আকার ভেদে কোনো কোনো তরমুজে ৫০ থেকে ১০০ টাকাও লাভ করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি বাজারে পিস হিসেবে তরমুজ কেনা-বেচা হয় জানিয়ে ব্যবসায়ী গণেশ দত্ত বলেন, খুচরা বাজারে তরমুজের আকার অনুযায়ী দর নিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে বশচা হয়ে থাকে। তাই সেই ঝামেলা এড়াতে কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রির প্রথা চালু করেছে তারা। তবে এতে লাভও ভালো হয় বলে জানান তিনি।