নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও অস্কার জয়ী সঙ্গীত শিল্পী এ আর রহমানের সুরের ছন্দে মাতোয়ারা হওয়ার অপেক্ষায় যখন দর্শকরা, তখন বেরসিক বৃষ্টি এসে যেন ছন্দ হারা করে দেয়। একটু ভোগান্তি আর সময়ক্ষেপণ ছাড়া একেবারে ছন্দহীন করতে পারেনি এই বৃষ্টি। দেড় ঘণ্টা সময় ছিনিয়ে নিয়ে বৃষ্টি থেমে যায়, দর্শক সারি হতে শুরু করে শের–ই–বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যেন সুরের জাদুকরের তালে হারিয়ে যান।
জয় হো দিয়ে শুরু করেন এ আর রহমান। মাঝে কালজয়ী কিছু গানসহ মঞ্চ মাতান কাওয়ালি গানে। তখনো অপেক্ষা তার কণ্ঠে বাংলা গান শোনার। যেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজ উদ্যোগে বানিয়েছিল ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব হান্ড্রেড কনসার্টে গাওয়ার জন্য। দর্শকদের আসনে থাকা শ্রোতাদের জিজ্ঞাসা বাড়তে থাকে, কখন গাওয়া হবে বাংলা গান ? অবশেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ।
জুলফিকার রাসেলের লেখা জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ গানটি গাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করেন এ আর রহমান। এ ছাড়া শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, বিসিবি ও বিসিবি প্রেসিডেন্টের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জয় বাংলা স্লোগানে কাঁপিয়ে তোলেন শের–ই–বাংলা। এ আর রহমান যখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন, তখন প্রেসিডেন্ট বক্সে থাকা প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। বাংলায় গাওয়া গানটি গেয়ে পুরো স্টেডিয়ামে থাকা দর্শকদের আবেগে ভাসান বিখ্যাত এই শিল্পী। মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী পুরো গান দাঁড়িয়ে থেকে শুধু শোনেননি, ভিডিও করে রাখেন মুঠোফোনে।
এরপর বলো জয় বঙ্গবন্ধু, বলো জয় বাংলা– গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন দর্শকদের। অবশ্য এই গানটির সময় বসে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তবে মুঠোফোনে ভিডিও করতে ভুলেননি এটিও।
২৯শে মার্চ মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই কনসার্ট। এরপর শুরু হয় জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের পারফর্ম্যান্স। শের–ই–বাংলা মাতিয়ে মাইলস থামার পর আসেন মমতাজ বেগম। দুই কন্যাসহ তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত পারফর্ম করেন। মাগরিবের নামাজের বিরতির মাঝেই হানা দেয় বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার পর মমতাজ মঞ্চে উঠে যেন দর্শকদের জাগিয়ে তোলেন।
৭টায় প্রধানমন্ত্রীর আসার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা বিলম্বিত হয়। সাড়ে ৮টায় তিনি প্রবেশ করেন। পুনরায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার পর তৃতীয়বারের মতো মঞ্চে আসেন মমতাজ। এ সময় লোকাল বাস, পাংখাসহ জনপ্রিয় গানে মাতান শের–ই–বাংলা।
মমতাজের গানের পর এবার মূল আকর্ষণ এ আর রহমানের পালা। বৃষ্টির কারণে গোলমাল দেখা যায় সাইটস্ক্রিনে। সাউন্ড চেক করতে সময় যায় বেশ কিছুক্ষণ। অপেক্ষার পালা শেষ হয়। ‘জয় হো’ দিয়ে মঞ্চে আগমন ঘটে এ আর রহমানের। মুককালা…মোকাবেলা, ওলেও ওলে…ওও, দিল সে, আগর তুম সাথহো–সহ বিখ্যাতসব গানে মাতিয়ে রাখেন এ আর রহমান। ছিল কাওয়ালি গানও। কুন ফায়া কুন গানে যেন সুর মেলায় পুরো শের–ই–বাংলা। মাঝে সহ শিল্পীরাও মাতান দর্শকদের।
অন্যরকম আকর্ষণ ছিল বিখ্যাত ড্রামার শিবাজি। সাদা পোশাকের সঙ্গে কালো গ্লাস, মাথাও মোড়ানো ছিল সাদা কাপড়ে। পানির জারসহ বিভিন্নভাবে ড্রামের তালে দর্শকদের আনন্দে ভাসান শিবাজি।
রাত ১২টায় এ আর রহমানের পরিবেশনা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হতে হতে বাজে প্রায় পৌনে ১টা। বৃষ্টির কারণেই যে এই বিলম্ব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তার আগেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আয়োজনে ২০২০ সালের মার্চে এশিয়া ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে দুইটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ মুজিব হান্ড্রেড কাপ এ এ আর রহমানকেও নিয়ে এই কনসার্ট করার কথা ছিল। করোনায় ধাক্কায় পুরো পৃথিবী থমকে যায়। পিছিয়ে যায় বিশাল আয়োজন। তবে দুই বছর পর হলেও সেই উৎসবের একাংশ কমসার্ট আলোর মুখ দেখে। ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সূচির কারণে এখনই ম্যাচটি আয়োজন করতে পারছে না বিসিবি। কিন্তু অস্কার জয়ী এই শিল্পীকে নিয়ে কনসার্টটি সফলভাবেই করতে পেরেছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
সুত্র : রাইজিংবিডি.কম