নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : জীবনে প্রথমবারের মতো নিজের জন্মদিন ও ঈদ কারাগারে কাটাতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আলোচিত রাজনীতিক ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। আগামী ৫ জুন তাঁর জন্মদিন এবং দুইদিন পর ৭ জুন দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। কিন্তু এবার দিনগুলো কাটবে কারাবন্দি অবস্থায়।
গত ৯ মে সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগের নিজ বাসভবন চুনকা কুটির থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা অন্তত ছয়টি মামলায় আইভীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
১৯৬৬ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে জন্ম নেওয়া আইভী বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ও গণমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত। এ বছর তাঁর বয়স ৫৯ পূর্ণ হবে। বাবা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহাম্মদ চুনকা। মা মমতাজ বেগম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আইভী ছিলেন প্রথম। শৈশব থেকেই বাবার রাজনীতির সান্নিধ্যে বড় হয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার শুরু দেওভোগ আখড়া বিদ্যালয়ে। এরপর নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুল ও পরে মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৭৯ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ, ১৯৮২ সালে এসএসসি ও ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে রাশিয়ার ওডেসা পিরাগোভ মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৯২ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কাজী আহসান হায়াৎকে বিয়ে করে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। সেখানে তিনি মেডিকেল ল্যাব সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। তাদের দুই ছেলে- সাদমান হায়াৎ সীমান্ত ও সাদরিল হায়াৎ অনন্ত।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক হিসেবে। ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে মাত্র ১৭ দিন প্রস্তুতির পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে হন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন শামীম ওসমানের মতো দলের প্রভাবশালী নেতাকে হারিয়ে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী মেয়র। ২০১৬ ও ২০২২ সালের নির্বাচনে আবারও মেয়র নির্বাচিত হন এবং প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পান তিনি।
সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে তিন মেয়াদসহ পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে টানা ২২ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান, দখলদার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকার জন্য জনপ্রিয়তা পান। অনেক সময় দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
২০১৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাবশালী সাময়িকী দি এশিয়ান তাঁকে এশিয়ার প্রভাবশালী নারী মেয়রদের তালিকায় সপ্তম স্থানে স্থান দেয়। এছাড়া বাংলা একাডেমির সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন সম্মানসূচক ফেলোশিপ।
দেশ ও দেশের বাইরে বহুল আলোচিত এই নারী রাজনীতিক এবার তাঁর জন্মদিন ও ঈদ কাটাবেন বন্দিদশায়।