জীবনের শেষ মুহূর্তেও মা-সন্তানকে আলাদা করতে পারেনি মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ রিফাত আল রহমান ) : মা ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কি বিশাল তার পরিধি ! সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটা শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। মার অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ মেলে প্রশস্ত বৃক্ষের ভালোবাসার ছায়াদানকারী মায়ের বুকে। শত আবদার আর নির্মল শান্তির এ গন্তব্যটি কারোরই অজানা নয়। শত কষ্টেও মা সন্তানকে বুকে আগলে রাখেন। শত বিপদ-ঝঞ্জাও সন্তানের হাত ছেড়ে দেন না। শীতলক্ষ্যা নদীতে তেমনি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার দেখা মিললো। আজ আমি আপনাদের তেমনি এক মা-সন্তানের গল্প বলবো। এক বছর বয়সী পুত্র আব্দুল্লাহ। তার মা তাহমিনা (২০) নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ দিয়ে যাচ্ছিলেন মুন্সিগঞ্জ কিন্তু মাঝপথেই ভাগ্যে পরিনত হলো এক ভয়ানক মৃত্যু। তার মা তাহমিনা শিশু পুত্রকে বুকে আগলে রেখে শিশু পুত্রকে শত বাঁচানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত মা-সন্তানকে মৃত্যু কাছে হার মানতে হলো। কিন্তু জীবনের শেষ মুহূর্তেও মা-সন্তানকে বুকের কাছ থেকে আলাদা করতে পারেনি মৃত্যু। ৫ই এপ্রিল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বুকে সন্তানকে আগলে রাখা অবস্থায় এক মা-সন্তানের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। মা-সন্তানের এমন দৃশ্য দেখে দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল সহ অনেকের চোখে অশ্রু এনে দিয়েছে।

এরআগে ৪ঠা এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকার ব্রিজ সংলগ্নে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় রাফিত আল হাসান নামে মুন্সিগঞ্জগামী একটি লঞ্চ অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। এরপর কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়েও রবিবার লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে ৫ই এপ্রিল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ সাবিদ আল হাসান থেকে এক এক করে ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড, দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল। উদ্ধার করা লাশের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি ছিলো। এছাড়াও নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। এছাড়াও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরেরও রয়েছেন বলে জানা যায়।

তাছাড়া এদিকে বুকের মধ্যে মা-সন্তানের লাশ আগলে রাখা অবস্থায় লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। অনেকেই দেখা যায় ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করে নানা রকমের মতামত ব্যক্ত করতে তেমনি একজন ফটো সাংবাদিক মাহামুদুল ইসলাম সৌরভ তার ফেসবুক আইডিতে ছবি পোস্ট করে তার উপরে লিখেছেন, কিছু ছবি আছে যা দেখলে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায় স্তব্ধ হয়ে যায় হৃদয় মা এমন একটি নাম যার সাথে অন্য কারো তুলনা হয়না মৃত্যুর পরও সন্তান কে বুকে আগলে রেখে মৃত্যুবরন করেছেন।

এদিকে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া নারী তাহমিনা বাড়ি বরিশালের উজিরপুরের উটরায়। এছাড়া শীতলক্ষ্যা লঞ্চ ডুবির ঘটনায় তাহমিনার স্বামী হাফিজুর রহমানও (২৪) মারা গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রবিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে সাবিত আল হাসান। কিছুদূর যাবার পরে ঝড়ের কবলে পড়ে লঞ্চটি। সৈয়দপুর এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পাইলিং কাছে একটি কার্গো জাহাজ তাকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। লঞ্চ থেকে সাঁতরে কেউ কেউ উঠতে পারলেও অনেকেই লঞ্চের সাথেই তলিয়ে যায়।

এদিকে লঞ্চ ডুবির খবর পেয়ে যাত্রীদের স্বজনরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্বজনদের কান্নায় ভারি শীতলক্ষ্যা পাড়। ওদিকে লঞ্চ ডুবির খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো.মোস্তাইন বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, সদর উপজেলার ইউএনও নাহিদা বারিক প্রমুখ।

add-content

আরও খবর

পঠিত