নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুর এলাকায় একটি জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে শিল্পগোষ্ঠী প্রাইম গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল ওরফে প্রাইম বাবুলের বিরুদ্ধে এক সবজি বিক্রেতাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সবজি বিক্রেতা শাহজাহান সাজু সদর মডেল থানায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যদিও পাল্টা জিডি করার কথা জানিয়েছেন আবু জাফর আহমেদ বাবুলও।
জিডিতে সাজু অভিযোগ করেন, শহরের কিল্লারপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা হাউজিং সোসাইটির ভেতরে গোলাম ফাত্তা নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০০৬ সালে ৪ শতাংশ জমি বায়না সূত্রে কেনেন। পরে সেখানে তিনি বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। ২০১২ সালে জোহা ব্রাদার্সের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জমিটি দখল করার পায়তারা করছেন আবু জাফর আহমেদ বাবুল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে তার বাড়ির সামনে গিয়ে ওই জমি দখল নিতে হুমকি-ধমকি দেয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী সাজু।
প্রেস নারায়ণগঞ্জকে তিনি বলেন, ‘আমি যখন জমিটি কিনি গোলাম ফাত্তা তখন শীতলক্ষ্যা হাউজিং সোসাইটির দায়িত্বে ছিলেন। তখন ফাত্তা সাহেব আমাকে জমিটির দলিল (রেজিস্ট্রি) করে দেননি। আমার মতো অন্য যারা তখন কিনেছিলেন তাদেরও দলিল করে দেননি। আমি আগে গাড়ি চালাতাম, এখন দ্বিগুবাবুর বাজারে সবজি বিক্রি করি। আমার সকল সঞ্চয় ও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি বিক্রি করে শীতলক্ষ্যা হাউজিং এ জমিটি কিনি। সেখানে চারদিকে দেয়াল এবং উপরে টিনসেড দিয়ে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছি। এখন পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কথা বলে এই জমিটি দখল নিতে চান বাবুল সাহেব।’
৫৫ বছর বয়সী সাজু বলেন, ‘বাবুল সাহেব পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর বিভিন্ন সময় তার সাথে কথা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন দফায় আমার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকাও নিয়েছেন কিন্তু আজ দেবো কাল দেবো বলে জমিটি আর রেজিস্ট্রি করে দেননি। এখন আমাকে বলছেন, এই জমি ছেড়ে কিংবা তার কাছে বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যেতে। আমার তো এখন আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই’
এই বিষয়ে গত আগস্টের ১৮ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত একাধিকবার পুলিশের উপস্থিতিতে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা হয়েছে বলেও জানান শাহজাহান সাজু। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ১ অক্টোবর রাতে সদর থানায় বর্তমান ওসি সাহেবের রুমে আমরা বসি। ওই সময়ও আমি জমি না ছাড়লে আমার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার হুমকি দেন বাবুল সাহেব।’
যদিও এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাল্টা অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল, যিনি নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রাইম বাবুল বলে অধিক পরিচিত।
বাবুল বলেন, ‘আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন ওর (সাজু) কাছে কোনো দলিলপত্র আছে কিনা। বৈধ কাগজপত্র তো সব আমার কাছে। সুতরাং জমি তো তার না। সে যে গোলাম ফাত্তার কথা বলছেন, সে তো একটা প্রতারক। আর বিগত সময়ে আমাকে সে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে এবং তাও জমির ভাড়া হিসেবে। আমি বলেছি, ভাই তুমি গরীব মানুষ, এত বছর ধরে থাকো, তোমাকে আমি ৫ লাখ টাকা দিচ্ছি তুমি অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে নেও। কিন্তু বিনা কাগজপত্রে সে সেখানে থাকতে চায়, এটা তো হতে পারে না।’
গত ১ অক্টোবর সদর থানায় তিনিও একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানান ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার আগে যারা এই থানার দায়িত্বে ছিলেন তাদেরও শরনাপন্ন হয়েছেন উভয়পক্ষ। কিন্তু জমি সংক্রান্ত বিষয়ে থানা পুলিশ সমাধান দিতে পারে না, এইটা আদালতের এখতিয়ার। আমরা উভয়পক্ষকেই এই ব্যাপারে বুঝিয়েছি। হাউজিং সোসাইটির কমিটির লোকজনকে নিয়ে নিজেরাই আলোচনার মাধ্যমে এটি সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছি।’
জমি সংক্রান্ত বিষয়টিতে উভয়পক্ষই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন জানিয়ে ওসি বলেন, ‘জিডির বিষয়ে তদন্ত করবে পুলিশ।’