নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : বাংলাদেশের প্রধানতম রাজনৈতীক অঙ্গনের অন্যতম সংগঠন বাংলদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডের আলোচনা সমালোচনায় সবসময়ই প্রতিবাদী ভূমিকা পালনে রয়েছে এ দলটির বিশেষ অবদান। আর বিভিন্ন সময়েই কেন্দ্রের নির্দেশে পালিত হয়ে থাকে নানা কর্মসূচী। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনে দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃবৃন্দ স্ফতস্ফুত কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে পুলিশের হামলা ও মামলার স্বীকার হয়েছেন একাধিক নেতাকর্মী। এমনকি কর্মসূচী পালনকালেই গ্রেফতার হয়েছেন তারাঁ।
এদিকে একাদশ নির্বাচনকে সামনে ঘিরে দল গোছাতে শুরু হয়েছে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন র্কমসূচী অভিযান। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধেই রয়েছে মামলার পাহাড়। এসব মামলায় গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়েই তাদেরকে নির্বাচনের মাঠে যেতে হচ্ছে। এ মামলার বোঝা বয়েই বিএনপি নেতাকর্মীদের সিংহভাগ সময়ই এখন কাটছে আদালত চত্তরে। এমন অবস্থা যেন অবরুদ্ধ বিএনপি, আদালত থেকে বের হতেই পারছেন না তাদের নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শুনানী শেষে উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আইনজীবী সহ নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
দলীয় সূত্র জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড.তৈমুর আলম খন্দকার, মহানগর সভাপতি ও সাবেক এমপি আবুল কালাম, সাবেক এমপি মো: গিয়াস উদ্দিন, মহানগর সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, জেলা সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন, যুবদলের মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, রানা মুজিব, মো: মনির, সরকার আলম, মাসুকুল ইসলাম রাজিব, রশু, ছাত্রদলের মশিউর রহমান রনি, সাগর সিদ্দিকী সহ জেলা ও মহানগর এবং অন্যান্য থানা এলাকার বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের উপর রয়েছে প্রায় একাধিক মামলা। এদের অনেকেই আবার মামলার সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছেন অন্তত দুই ডজন নেতা। প্রায় সব মামলাই করা নিশ্চিত সাজা হতে পারে এমন কিছু ধারায়। বিস্ফোরক দ্রব্য, সন্ত্রাসবিরোধী, দ্রুত বিচার ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাগুলোর বিচারের কাজ শুরু হয়েছে। মামলা দায়েরের সময় যেসব ধারা উল্লেখ করা হয় চার্জশিটের সময় আলাদা আইনে বিভক্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন মামলা। ফলে চার্জশিটের পর বেশির ভাগ নেতার মামলায় পরিণত হচ্ছে দেড় গুণে। জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবং যুগ্ন আহ্বায়ক রানা মুজিবের বিরুদ্ধে মামলার ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছেন। এছাড়া দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষকদল, যুবদলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়। দলটির নীতিনির্ধারকসহ জেলা ও মাঝারি সারির নেতাদের সপ্তাহে তিন-চারদিন হাজিরা দিতে হয় আদালতে।
এছাড়াও জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা দলীয় কর্মসূচী পালনকালে নারায়ণগঞ্জে যেসকল নাশকতা করেছে এর দায়ভারও বিএনপি ও অঙ্গসংঠনের নেতাদের উপর পড়েছে। জামায়াত-শিবিরের নাশকতামূলক ঘটনার দায়েরকৃত মামলার আসামি হয়েছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্র থেকে দলীয় কোন কর্মসূচীর ঘোষনা আসার সাথে সাথেই পূর্বে দায়েরকৃত মামলার রেফারেন্স অনুযায়ী দলীয় নেতৃবৃন্দের বাড়ীতে পুলিশি অভিযান পরিচালিত হয়ে থাকে।
নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো পূনরায় চাঙা করছে সরকার। বিএনপির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একাধিক মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্র পাওয়ার সাথে সাথেই আদালত পুরাতন দায়েরকৃত মামলার দ্রুত নিষ্পতির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। আর আদালতের রায়ে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের দন্ড হতে পারে। আর আদালতের রায়ের উপরেই অনেক নেতৃবৃন্দের আগামি একাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন অনিশ্চিত হতে পারে।
আরো জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রায় হাজারের উপরে নেতাকর্মী এসব মামলার আসামি। যেগুলোর অধিকাংশই আগামী নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া যেতে পারে। আবার অনেক মামলার রায় হয়ে যেতে পারে চলতি বছরেই। এসব রায়ে বিএনপির সিনিয়র বেশ কিছু নেতা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অযোগ্য হতে পারেন নির্বাচনে। এমন শঙ্কায় জেলা বিএনপির নেতৃত্বে এখন জেরবার অবস্থা।