নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) হত্যার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নিহতের স্বজনরা। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।
মানববন্ধনে নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বড় ভাই আরাফাত আল ফাহিম বলেন, গত ২ জানুয়ারী আমার বোন লামিয়া আক্তার ফিজাকে তার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন নির্মমভাবে ও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।তবে এই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা আমার বোনের লাশ ঘরের জানালার গ্রিলের সাথে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। কিন্তু পুলিশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধ করে হত্যার সত্যতা পেলে থানায় মামলা হয়। এ ঘটনার পর থেকে আসামিরা সবাই পালিয়ে গেছে। পুলিশ তাদের কাউকে ধরতে পারছে না। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ বিচার ফাঁসির দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, এই হত্যার ঘটনার নির্দেশদাতা চুন্নু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলারও আসামি।সে এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছেনা।
নিহতের মা ফাহিমা বেগম বলেন, আমার মেয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মুন্না, তার মা-বাবা ও বোন সহ স্বজনরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে আছে। এটা কেমন বাংলাদেশ। এটা কেমন আইন।এখনো আমার মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না। আমি এই খুনিদের ফাঁসি চাই।
নিহতের বাবা ও মামলার বাদী মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার মেয়ে হত্যার পর ফতুল্লা থানায় আরও ৩টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুুলিশ। অথচ আমার মেয়ে হত্যার আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে প্রত্যেক দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে কান্না করতে হচ্ছে।ফলে আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই আসামিদের ছায়া দিচ্ছে রেয়েছে পুলিশ।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার খালা সুরাইয়া আক্তার মুন্নি, মামা জাহাঙ্গীর আলম, এলাকাবাসী আলাল মাদবর সহ আরও অনেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মামলার মূল আসামি অর্থাৎ নিহতের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ সহ অন্যরা পলাতক রয়েছে। এদের গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে।পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না- নিহতের স্বজনদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ভিত্তিহীন কথা। মামলা হওয়ার পরে আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করবে না তা হতে পারে না। তবে আসামিরা অনেক ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। তারা এই ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেনা। এবং তারা কোন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও অবস্থান করছেনা। আর এই হত্যার মামলার আসামিদের মধ্যে চুন্নুর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী কোন হত্যা মামলা রয়েছে কিনা তা যাচাই বাছাই করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে গত ২ জানুয়ারি রাতে ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকায় শশুর বাড়ির জানালার গ্রিল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লামিয়া আক্তার ফিজার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না শ্বশুর বাড়ির সবাই আত্মগোপন ছিলেন। ফলে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে রহস্যের সৃষ্টি হয়।এদিকে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে, ‘স্বামীর বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পেরে প্রতিবাদ করায় ফিজাকে হত্যা করা হয়েছে।’
এরপর ৬ জানুয়ারি ফরেনসিক রিপোর্টে হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ৭ জানুয়ারি নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার আসামিরা হলেন-নিহত লামিয়া আক্তার ফিজার স্বামী আসাদুজ্জামান ওরফে মুন্না (৩১), তার শ্বশুর মনির হোসেন মনু, তার শাশুড়ি আকলিমা বেগম (৫২), তোফাজ্জাল হোসেন (৪৮), চুন্নু (৫০), মুন্নী, আব্দুর রশিদ ওরফে মিঠুন (৫০) নূর নাহার (৪৪), রাজ্জাক (৪৫), রানা (৪০), রিপন (৪৪), ও গোলাম রহমান জিসান (২৪)।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, শ্বশুর মনির হোসেন মনু, শ্বাশুড়ি আকলিমা বেগম, ননদ মুন্নী, চাচাতো ভাই তোফাজ্জল হোসেন ও তার বড় ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসী চুন্নুর ইন্ধনে ফিজাকে হত্যা করে তার স্বামী মুন্না। হত্যার পর লাশ জানালার সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। মূলত স্বামীর বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পেরে তাতে বাধা দেয় ফিজ্।া এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ফিজাকে একাধিকবার মারধর করেছে তার স্বামী। এসব নিয়ে কলহের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পরে এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তোফাজ্জাল হোসেন ও নূর নাহার কে গ্রেফতার করেছে।