কাউন্সিলর বাবুকে কারাবন্দী রাখতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সেই মহল!

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (বিশেষ প্রতিবেদক) : ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৫ দিন যাবত কারাভোগ করছেন নাসিক ১৭ নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় কাউন্সিলর ও ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বাবু। নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দুই সাংসদ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। তবে কুচক্রি মহলের ইন্ধনে সম্প্রতি বন্দর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এখন সে দুর্বলতাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে সেই মহল। তাকে কারাবন্দি রাখতে বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলা ঠুঁকে যাচ্ছেন, র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত একসময়কার যুবদল ক্যাডারের গাড়ী চালক থেকে শুরু করে তারই সাবেক কর্মচারী, এমনকি মাদক ব্যবসায়ীও । যা কাউন্সিলর ও ডিস ব্যবসায়ী বাবুর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন বলে মন্তব্য করেছেন তারই স্বজন সহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

কারণ হিসেবে তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক এসোসিয়েশন সাধারন সম্পাদক ও এসবি স্যাটেলাইট ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের স্বত্তাধিকারী ও মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল করিম বাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় যে কটি মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সেগুলোর বাদীর নেপথ্যে একটি বিশেষ মহলের ইন্ধন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় কাউন্সিলর বাবুকে বলি দেয়ার মিশনে নেমেছে ।

জানাগেছে,  কয়েকদিন পূর্বে কাউন্সিলর বাবুর বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় তারই সাবেক কর্মচারী নগরীর পাইকপাড়া এলাকার দুলাল মিয়ার পুত্র রাব্বী একটি অভিযোগ দায়ের করে। প্রতিষ্ঠঅনটির মাত্র দুই হাজার টাকার মাসিক বেতন ভুক্ত একজন কর্মচারী হওয়া স্বত্তেও একসময় এই রাব্বীর হাতে দামী মোবাইল ফোন ও গলায় দামী স্বর্ণের চেইন ব্যবহার করতে দেখে তাঁর বিরুদ্ধে কাউন্সিলর বাবুর মনে সন্দেহ জাগে। তখন অনুসন্ধান চালিয়ে রাব্বীর বিরুদ্ধে মাদক সেবনের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর তাঁকে চাকুরীচ্যুত করেন বাবু।

এরই জের হিসেবে কয়েকদিন পূর্বে কারাবন্দি কাউন্সিলর বাবুর বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মারধরসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ দায়ের করেন মাদক সেবী রাব্বী মিয়া। আর এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে রাব্বী তাঁর বসত বাড়ীর পাশ্ববর্তী ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া একজন শ্রমিক কে সাক্ষী হিসেবে পুলিশের কাছে নাম ঠিকানা দেয়ার পর তা জানতে পেরেই রাব্বীর ভূয়া অভিযোগের হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন সাক্ষী তালিকায় থাকা সেই শ্রমজীবি ব্যাক্তিটি।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, কাউন্সিলর বাবু একজন পরপোকারী জনপ্রতিনিধি হওয়া স্বত্তেও ষড়যন্ত্র করে তার বিরুদ্ধে রাব্বী থানায় একটি ভূয়া অভিযোগ দিয়েছেন। আর অভিযোগে উল্লেখিত সময়ে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার পরেও তাকে সেই অভিযোগের মিথ্যা সাক্ষী বানিয়ে পুলিশের কাছে নাম দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি পাইকপাড়াবাসীর সুপেয় পানির ব্যবস্থা দানকারী কাউন্সিলর বাবুর নি:শর্ত মুক্তি দাবী করেন।

তবে শুধু রাব্বী মিয়াই নয়, তারপরে সদর মডেল থানায় কাউন্সিলর বাবুর বিরুদ্ধে পাইকপাড়া এলাকায় একটি মাদ্রাসার পাশে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখল করে একটি ক্লাব ঘর নির্মানের অভিযোগ দাখিল করেন নগরীর ২নং জমিদারী কাঁচারীগল্লি এলাকার বাসিন্দা হাকিম আব্দুল আজিজের পুত্র নাজমুল হাসান বারেক।

অথচ, শনিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিন সেই স্থানে গিয়ে এনজিও সংস্থা পরিচালিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং, যেই ভবনের কক্ষ দখল করে কাউন্সিলর বাবুর বিরুদ্ধে ক্লাব ঘর নির্মানের অভিযোগ করা হয়েছে, সেই কক্ষের দরজায় খোদ অভিযোগকারী নিজেই তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন মুরুব্বী জানান, অতীতে একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে নাজমুল এলাকায় গণধোলাইয়ের শিকারও হয়েছিলেন। এরপর এমনই ঘটনার কবল থেকে বাঁচতে তিনি একবার কাউন্সিলর বাবুর দ্বারস্থ হওয়ার পর তখন বাবু লম্পট নাজমুলের পাশে না দাঁড়ানোয় এর জের হিসেবে এখন সুযোগ বুঝে ডিস বাবুর বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এরআগে, গত ২১ এপ্রিলও কারাবন্দি কাউন্সিলর ডিস বাবুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুই টি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন দই জন কথিত ডিস ব্যবসায়ী।

যার মধ্যে একজন হচ্ছেন, বিগত জোট সরকারের ক্ষমতার ক্রান্তিলগ্নে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত নারায়ণগঞ্জ যুবদলের দুর্ধর্ষ ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের গাড়ী চালক ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ বাংলাবাজার এলাকার মোক্তার স্যাটেলাইট ক্যাবল টিভির স্বত্তাধিকারী মোক্তার হোসেন।

অপরজন হচ্ছেন, কাউন্সিলর বাবুর সাবেক কর্মচারী ফতুল্লার পুলিশ লাইনস এলাকার সেলুন ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম কুসুম। যিনি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনস এলাকায় একটি সেলুনের ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে নিয়মিত দোকান ভাড়া পরিশোধে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর তখন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সেই দোকান ভাড়া বাবদ নগদ ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮শ টাকা পরিশোধ করে একজন মালিক পক্ষ হিসেবে কর্মচারীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কাউন্সিলর বাবুর পুত্র রিয়েন।

কিন্তু প্রায় দেড়মাস পূর্বে দেড়শ পিস ইয়াবাসহ ফতুল্লা মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে পরিচালিত বিশেষ অভিযান চলাকালীন সময়ে কুসুম গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে ডিস বাবু চাকুরীচ্যুৎ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন কুসুম। এরপর দীর্ঘ কারাভোগ শেষে সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে আসার পর সম্প্রতি একটি চাঁদাবাজির মামলায় কাউন্সিলর বাবু গ্রেফতার হওয়ার ৪ দিনের মাথায় বিশেষ মহলের ইন্ধনে ডিস বাবুর বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা ঠুকে দেন মাদক বিক্রেতা থেকে কথিত স্যাটেলাইট ব্যবসায়ী বনে যাওয়া কুসুম।

আর কাউন্সিলর বাবুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনাবলী গায়েবী দাবী করে তার পরিবারের সদস্যরা সংবাদকর্মীদের জানান, মূলত জনৈক শ্যামলের সাথে কাউন্সিলর বাবুর ডিস ব্যবসার একটি ১০ লাখ টাকার ৫ বছরের মাসিক লাইন ভাড়ার চুক্তিনামা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ৪ বছর ২ মাস যাবত শ্যামল বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় তাঁর কাছে ডিস বাবু প্রায় ৯৮ লাখ টাকা পাওনা হয়ে যান। আর কয়েকদিন যাবত সেই টাকা পরিশোধের তাগাদা দেয়ার কারনেই শ্যামল তাঁর বেতন ভুক্ত স্টাফ কাউসার কে দিয়ে কাউন্সিলর বাবুর বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির ভূয়া মামলা দায়ের করান।

বাবুর পরিবার আরও দাবী করে বলেন, কাউন্সিলর বাবু কখনো বন্দরে ব্যবসা দখল করতে যায়নি। বরং বাংলাদেশ টেলিভিশনের নীতিমালা অনুসরণ করেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ হওয়ায় বন্দরে ব্যবসায়ীদের দাবীর প্রেক্ষিতে সেখানে ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের ব্যবসা সম্প্রসারন করেছেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত