নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো কর্মীর দেনার দায় ও পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে নেতার কর্তব্য পালন করলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। পাশাপাশি তিনি ঐ কর্মীর নামে ফাউন্ডেশন গঠন করে তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে দলীয় নেতা এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
১৩ অক্টোবর শনিবার বিকালে বন্দর ইউনিয়নের কুশিয়ারা এলাকায় জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক মরহুমা আলেয়া বেগমের কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর বিকালে জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক আলেয়া বেগম চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত লিভার ক্যান্সার জনিত রোগে ভুগছিলেন।
মরহুমা আলেয়া বেগম মৃত্যুর পূর্বে প্রায় ২০জন ব্যক্তির কাছে আনুমানিক ৭ লাখ টাকা দেনা রেখে যান। অপর দিকে তাঁর পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমার কুলখানিতে কোন আয়োজন করা হচ্ছে না এমন খবর এমপি সেলিম ওসমানের কানে পৌছালে তিনি নিজ উদ্যোগে কুলখানির সকল ব্যবস্থা করে দেন। সেই সাথে মরহুমা আলেয়া বেগমের পাওনাদার কাছে প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের পাওনা টাকার পরিমান সম্পর্কে অবগতহন। ১৯ জন পাওনাদারের পাওনা টাকার পরিমান ছিল প্রায় ৭লাখ টাকা। তবে সকল পাওনাদার সেচ্ছায় পাওনার অর্ধেক পরিমান টাকা নিয়ে দেনা নিস্পত্তি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে সেলিম ওসমান শনিবার ১৯টি পৃথক চেকের মাধ্যমে সকলের পাওনা টাকা মরহুমা আলেয়া বেগমের স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছেন।
এ সময় এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আলেয়া আপা এমন একজন নেত্রী ছিলেন যিনি আমাকে ধমক দিয়ে শাসন করতেন। উনার এভাবে আমাকে ফাকি দিয়ে চলে যাওয়া মেনে নেওয়ার মত নয়। আমি অনেকে ক্যান্সার রোগী, হার্টের রোগী, সহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের দেশে বিদেশে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আলেয়া আপা আমার কাছে এলাকার বহু মানুষের জন্য বলেছেন। কিন্তু একটি বারের জন্য আমাকে বলেননি উনি এমন কঠিন এক রোগ নিয়ে জীবন যাপন করছেন। আমাকে উনি উনার জন্য কিছু করার সুযোগই দেন নাই। মাঝে মাঝে শুনতাম উনি অসুস্থ্য। ফোন করলে বলতেন ঠান্ডা জ্বর হয়েছে। তেমনি কিছু না। অথচ নিজের কষ্টে কথা গুলো উনি নিজের মাঝেই চাপা রেখে চলে গেলেন। উনি সব সময় এলাকার মানুষের জন্য নারীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন। আমি জানতে পেরেছি উনার কাছে অনেকে টাকা পাওনা আছেন। আলেয়া আপা চলে গেছেন কিন্তু উনার ছোট ভাই সেলিম ওসমান এখনো জীবিত আছেন। উনার যত দেনা রয়েছে তা সবকিছু আমি শোধ করবো। পাওনাদার ভাইয়েরা অর্ধেক টাকা নিয়ে দেনা পরিশোধের কথা বলেছেন। কিন্তু আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে বলবো কারো ভয়ে টাকা ছেড়ে দিবেন না। অথবা অধৈক টাকা মওকুফ করতে গিয়ে আপনার নিজের পরিবারের সমস্যা করবেন না। যাদের পরিবারের সমস্যা হবে অথবা সবাই যদি চান তাহলে আমি সম্পূর্ন টাকাই পরিশোধ করে দিবো এই মুর্হুতে। আপনারা শুধু মন থেকে আলেয়া বেগমের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে সেটি ক্ষমা করে দিয়ে উনার জন্য দোয়া করবেন উনি যাতে জান্নাত বাসী হতে পারেন।
পাশিপাশি তিনি বলেন, আলেয়া আপা নারীদের ভাগ্য উন্নোয়নে কাজ করতেন। নারীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন উনার এই স্বপ্নকে আপনাদের বাচিয়ে রাখতে হবে। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান সহ আপনাদের সবার কাছে দায়িত্ব দিলাম। আপনারা আলেয়া বেগম ফাউন্ডেশন নামে একটি ফাউন্ডেশ তৈরি করে উনার কার্যক্রম গুলো চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনী সকল সহযোগীতা আলেয়া আপার ছোট ভাই সেলিম ওসমান করবে।
তিনি আরো বলেন, আলেয়া আপা মানুষকে খাওয়াতে খুব পছন্দ করতেন। আমার ভাই প্রয়াত নাসিম ওসমানকে উনি কত চিতাই পিঠা আর মাংস নিজে রান্না করে খাইয়েছেন। আমাকেও সুযোগ পেলেই উনি বউয়া রান্না করে পাঠাতেন। এখনো আমার বাসায় উনার পাঠানো ৩টি টিফিন বক্স রয়েছে। যে গুলো আমি এখনো ফেরত দিতে পারি না। আমার সহধর্মিনী নাসরিন ওসমান আজ সেই টিফিন বক্স গুলো দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে যার জন্য উনি আজকে এখানে আসতে পারেনি। আলেয়া আপা এভাবে আমাকে ফাকি দিবে চলে যাবেন এটা কখনো ভাবতেও পারি নাই। এ সময় এমপি সেলিম ওসমান আবেগাপ্লুত হয়ে কান্না চলে আসায় বক্তব্য শেষ করে দেন।
দোয়ায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি বাচ্চু মিয়া, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান সহ অন্যান্যরা।