নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জের স্বনামধন্য ওসমান পরিবারের সন্তান একেএম সেলিম ওসমান। যিনি একদিকে সফল ব্যবসায়ী নেতা, বিকেএমইএ সভাপতি এবং জাতীয় সংসদ সদস্য। এছাড়াও তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েও পেয়েছেন দানবীর এর খ্যাতি। এবার তার দিকেই তাকিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ থান পল্লী এলাকার ব্যবসায়ী ও কর্মজীবী কয়েক হাজার পরিবার।
দীর্ঘ ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোন সমাধানের মুখ দেখেননি এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে এ ব্যবসায়ীদের পাশে থেকে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছিলেন সাংসদ সেলিম ওসমান। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। আর সেই আশ্বাসের বাস্তবায়নের অপেক্ষায় এখনও বুক বেধে আছে সকল থান পল্লির ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরা। এতে তাদের মাঝে বিরাজ করছে আবেগ ও উৎকন্ঠা। অনেকেরই প্রশ্ন- প্রদীপ তো জ্বলেনি, কবে পাবো আলো? কবে হবে সেলিম ওসমানের আশ্বাসের বাস্তবায়ন?
অনেকেই আবেগ নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলছেন, এরআগেও উচ্ছেদের পায়তারা হয়েছিল। তবে সেইসময় চারবারের নির্বাচিত সাবেক সাংসদ প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান, ব্যবসায়ী ও গরীবদের স্বার্থে পাশে এসে দাড়িয়েছিল। যে কারণে দুইযুগ এর থান ব্যবসায়, এখনো তার অবদান ভুলেনি ব্যবসায়ীরা। এখনও সেই ধারাবাহীকতায় হাঁটছে এমপি সেলিম ওসমান, শুধু দ্রুত বাস্তবায়নটায় এখন ব্যবসায়ীদের কাছে মুখ্য।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের থান পল্লী এলাকায় পুর্নবাসনের আগে উচ্ছেদে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় শত শত কোটি টাকার লেনদেন (বাৎসরিক)। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চলমান বিশাল এ থান পল্লিটি এখন যেন ধ্বংস স্তুপে রূপ নিয়েছে। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে স্থানীয় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর। শহরের নিকটবর্তী ২ নং রেল গেইট থেকে শুরু হওয়া উকিলপাড়া, নন্দিপাড়া, গলাচিপা নিয়ে বিশাল এলাকায় অবস্থিত এসব ব্যবসায়ীদের এখন যেন করুন দশা, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমনই চিত্র।
প্রসঙ্গত, শিল্প অঞ্চল হিসেবে সু-পরিচিত অন্যতম জেলা নারায়ণগঞ্জ। এই শহরেই প্রায় ২ কিলোমিটার পথ জুড়ে গড়ে উঠেছিল থান কাপড় ব্যবসায়ীদের সুবিশাল থান পল্লী এলাকাটি। ৫ হাজারেরও বেশী এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল ২০ হাজারের মত নারী ও পুরুষ শ্রমিক। যেখানে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে রেলওয়ে থেকে জমি লিজ নিয়ে পরিচালনা করছিলেন এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন আওতাধীণ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছর পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে সম্প্রতি রেলওয়ে কতৃর্পক্ষের একটি উচ্ছেদে এখন তারা সর্বশান্ত।
ব্যবসায়ীদের দাবী, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ৩০ ফুট পর্যন্ত স্থাপনা উচ্ছেদের কথা থাকলেও কারো ইন্ধনে পুরো জায়গাই উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলের পায়তারা চালানো হচ্ছে। এরপরেও তারা বলছেন উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় স্থান ব্যতিত অবশিষ্ট জায়গা যেন ব্যবসায়ীদের জন্য বিবেচনা করা হয়। ইতমধ্যে থান পল্লীটি পুর্নবাসনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন সহ ব্যবসায়ী নেতা বিকেএমই সভাপতি এবং এমপি সেলিম ওসমানের সাথেও মতবিনিময় করেছেন তারা।
সেই মতবিনিময় সভায় বিকেএমইএ সভাপতি ও এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। পাশাপাশি আমি এই এলাকার সংসদ সদস্য। ব্যবসায়ীদের এভাবে উচ্ছেদ করার বিষয়টি একজন ব্যবসায়ী নেতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে অবশ্যই আমাকে অবহিত করার প্রয়োজন ছিল। আর উচ্ছেদ হওয়া ওই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার আওতাধীন। সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের অনেক দায় দায়িত্ব ছিল বলে আমি মনে করি। যদি সিটি কর্পোরশন গত কয়েক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও শহরের বিনোদন সুপার মার্কেট, রহমত উল্লাহ মুসলিম ইন্সস্টিটিউট এবং হাজীগঞ্জ কেল্লা এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়ে তাদের পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বার বার বলছেন পূর্নবাসন না করে কোন উচ্ছেদ নয় সেখানে এভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়ে ব্যবসায়ীদের পথে বসানো হয়েছে, হাজার হাজার শ্রমিকদের বেকার করে দেওয়া হয়েছে। যা কোন অবস্থায় কাম্য নয়।
থান কাপড় ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি আহবান রেখে বলেন, আপনারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা করছেন তাদের একটি তালিকা। যারা শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন কিন্তু কোন ব্যাংক লোন নেই তাদের একটি তালিকা এবং যাদের কোন বৈধ কাগজপত্র কিছুই নাই তাদের একটি পৃথক তালিকা তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এর কাছে জমা দেন। আমি সেই তালিকা নিয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে যাবো। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। তাদের কাছে এসকল ব্যবসায়ীদের পূর্নবাসনের অনুরোধ করবো। প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন সরকারী ভাবে জমিও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনে আমরা তাদেরকে সেখানে পুর্নবাসনের অনুরোধ রাখবো।
ওই সভায় ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম সোলায়মান, বাংলাদেশে হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, সহ সভাপতি কবির হোসেন, সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান বদু, ১৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির সহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যপারে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জ বার্তাকে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন তারা। এই উচ্ছেদে এখন তারা অসহায়। বিভিন্ন ক্রেতার কাছে রয়েছে তাদের বিশাল টাকা বকেয়া। যা পাওয়া এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে, অন্য কোন কাজ না জানা থাকায়, একমাত্র এই ব্যবসাই তাদের শেষ সম্বল। এদিকে ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, এদের পুর্নবাসন না করা হলে যেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হবে ব্যবসায়ীরা তেমনি হাজার কোটি টাকার লেনদেন বন্ধ হওয়ায় প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতির উপরেও। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় স্থান ব্যতীত অবশিষ্ট স্থানে থান ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসনই একমাত্র সমাধান বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হলে প্রতিবেদককে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল জানান, আমরা কখনই চাই না, যেন- কোন ব্যবসায়ী পথে বসে যাক। এই থান ব্যবসায়ীদের সাথে অনেক পরিবার জড়িত। এটা কোনভাবোই ধ্বংস হতে দেয়া যাবেনা। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সকল সহযোগীতায় আমরা সর্বদাই ছিলাম, থাকবো, আছি। তাছাড়া বর্তমান সরকার ব্যবসায়ী বান্ধব সরকার। তাই সরকার কর্তৃক ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে তা কখনোই বিশ্বাস করিনা। আমাদের এমপি সেলিম ওসমান মহোদয়ও ব্যবসায়ীদের পাশে আছে। তিনি হয়তো খুব শিঘ্রই কিছু জানাতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএ পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে। যেহেতু তারা কোটি কোটি টাকা ধার দেনা করে এসব ব্যবসা চালিয়ে গিয়েছিল। তারা এখনও অনেকের কাছে টাকা পায়। এ উচ্ছেদে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তেমনি শত কোটি টাকার লেনদেন বন্ধ হওয়ায় প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতির উপরেও। এছাড়াও বিকেএমইএ সভাপতি ও আমাদের এমপি সেলিম ওসমান ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন তাদের জন্য প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকেও জানাবেন অথবা অন্য একটা জায়গায় কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবস্থা করবে। আর তা শিঘ্রই বাস্তবায়ন হবে বলে বিশ্বাস করি।
নাসিক ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ হোসিয়ারী সমিতি সভাপতি নাজমুল আলম সজল বলেছেন, আমার অনুরোধ যতটুকু প্রায়োজন রেলওয়ের সার্থে, ততটুকু জায়গা রেখে বাকিটা যেন আমাদের এই থান ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্ধ বা লিজ দেয়া হয়। কারণ পুরো নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এখান থেকে থান কাপড় কিনে নিয়ে বিভিন্ন পোশাক প্রস্তুত করে দেশে বিদেশে চাহিদা মিটাচ্ছে।