ওসমান ভ্রাতৃদ্ধয়ের প্রত্যয় আধুনিক না.গঞ্জ গড়া

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : জেলা এমপিদ্বয় এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনের দুইজন সংসদ সদস্য হচ্ছেন শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। ওসমান ভ্রাতৃদ্ধয়ের নির্বাচনী আসনের আওতায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা। যার মধ্যে সদর ও বন্দর দুটি উপজেলা সহ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড এলাকা। এই দুই ভ্রাতৃদ্বয় পারস্পারিক সহযোগীতায় নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়নের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

যাতে বাংলাদেশের যে কোন জেলার মানুষ নিজেদের সন্তানদের ভাল মানের শিক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সর্বপ্রথম নারায়ণগঞ্জের নামটিই যেন তাদের মনে আসে। নারায়ণগঞ্জকে এমন আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আর এ জন্য তিনি সব থেকে সহযোগীতা কামনা করেছেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলের। আর সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বড় ভাই এমপি সেলিম ওসমান দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সহ সারা বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। যিনি টানা ৪ মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ এর সভাপতি পদে।

১৯৯৬ সালের ২ নভেম্বর এই সেলিম ওসমানের হাত ধরেই বিকেএমইএ সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়ে ছিল। যার নির্দেশনায় ছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সার্বিক সহযোগীতা করে ছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ। আর সে সময় বিকেএমইএ এর অনুমোদন পেতে বড় ভূমিকা রেখে ছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। শনিবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রুটের সস্তাপুর এলাকায় অবস্থিত নমস্ পার্কে উদযাপিত হয়েছে বিকেএমইএ ২২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুর্নমিলনীর জমকালো অনুষ্ঠান। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন এমপি শামীম ওসমান।

এর আগে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে এবং আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার জন্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের মত জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআই এর সাবেক সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী।

তিনি সকলের প্রতি আহবান রেখে বলেন, আমরা যে যেই দলই করিনা কেন এ কথা সত্যি যে সেলিম ওসমান শহর বন্দরের উন্নয়নের সরকারী অর্থায়নের পাশাপাশি যেভাবে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে উন্নয়ন করেছে সেটি বাংলাদেশের অন্য কোন এমপি কখনো করেন না। আর তিনি আমাদের ব্যবসায়ী কমিউনিটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছেন। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এমপি সেলিম ওসমানের কর্মকান্ড আমাদের সকল ব্যবসায়ী মহলকে গর্বিত করেছে। তাই আগামীতেও সেলিম ওসমানের মত এমপিকেই নারায়ণগঞ্জে প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি শামীম ওসমানকেও প্রয়োজন। আগামীতে এই দুই ভাইকে আবারো আমরা এমপি হিসেবে দেখতে চাই। সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান একত্রে কাজ করলে নারায়ণগঞ্জ উন্নয়নে ভেসে যাবে। আপনারা কি আমার সাথে একমত? এ সময় উপস্থিত সকলে দুই হাত তুলে মোহাম্মদ আলীর বক্তব্যকে সমর্থন জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, আমার কারো কাছে ভোট চাওয়া উচিত না। আমি কেন সেলিম ভাইয়ারও কারো কাছে ভোট চাওয়া উচিত না। আসলে এই সিস্টেম টাই উঠে যাওয়া উচিত। আমি এখন পর্যন্ত কারো কাছে ভোট চাই নাই। কারন সমস্যা আমার না সমস্যা আপনার।

এর কারন ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে যদি আপনার একটি ছেলে বা মেয়ে থাকে। ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় আপনি অবশ্যই পাত্র বা পাত্রী সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে খোজ নেন। কারন আপনার ছেলের জন্য যদি খারাপ পাত্রী নির্বাচন করেন বা মেয়ের জন্য যদি খারাপ পাত্র ঠিক করেন তাহলে দেখা যাবে একটি সংসারে অশান্তি লেগেই থাকবে। বাবা মায়ের যদি দুটি ছেলে থাকে আর একটি ছেলে যদি ভাল এবং আরেকটি ছেলে যদি খারাপ হয় তাহলে খারাপ ছেলেটির জন্য বাবা মায়ের জীবনে অশান্তি নেমে আসে। ঠিক তেমনি আপনার এলাকার জনপ্রতিনিধি ভাল হবে নাকি খারাপ হবে সেটি নির্বাচিত করার দায়িত্ব আপনাদের। ছেলে খারাপ হলে একটি পরিবার ধ্বংস হয়। আর জনপ্রতিনিধি খারাপ হলে এলাকা ধ্বংস হয়, সমাজ ধ্বংস হয় দেশ ধ্বংস হয়। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, গরীব মানুষ অভাবে পড়লে তার জমি বিক্রি করে, গোয়ালের গরু বিক্রি, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে। কিন্তু কিছু সুশীল নেতা আছে যারা তারা অভাবে পড়লে দেশ বেচে দেয়। তারাই এখন ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। অতত্রব আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনারা কোন দিকে যাবেন।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যেটা করছেন সেটি নি:সন্দেহে একটি মহৎ কাজ। আমি একজন এমপি হয়েও ১০জন মানুষকে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা আমার নাই। কিন্তু আপনারা এখানে যেকজন উপস্থিত আছেন আপনারা কয়েক লক্ষ মানুষকে চাকরি দিতে পারেন। আপনাদের মাধ্যমে লাখ লাখ পরিবারের মুখে আহার জুটছে। আমরা একটি মায়ের ৩টি সন্তানই এমপি হয়েছি। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে আমরা ঋণী। আমি কাজ করতে চাই। আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্প এলাকা। এখানে ব্যবসা করে আপনারা অর্থ উপার্জন করছেন কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া করাবেন কোথায়? অসুখ হলে চিকিৎসা করাবেন কোথায়? আপনারা চাইলে নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক নারায়ণগঞ্জ শহর গড়ে তোলা সম্ভব। এমন পরিকল্পনাই আমরা করে রেখেছি। বর্তমান সরকার নারায়ণগঞ্জে ক্যাবল রেল চালুর পরিকল্পনা করে রেখেছে। দেশের উন্নয়নে আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন এনে রেখেছি কিন্তু এগিয়ে আসছে না। একটি মেডিকেল কলেজ করতে যাচ্ছি। প্রয়োজনে সেখানে ব্যক্তি মালিকানার সহযোগীতা নেওয়া হবে। ওয়াল্ডের  বেস্টদের আহবান জানানো হবে। আমরা এমন একটি নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই যাতে করে কেউ তাঁর সন্তানদের ভাল মানের শিক্ষাদান ভাল চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম নারায়ণগঞ্জের কথা চিন্তা করে। আর এরজন্য আপনাদের সহযোগীতা সব থেকে বেশি প্রয়োজন।

শামীম ওসমানের কথার সমর্থন জানিয়ে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আজকে শামীম ওসমান যে কথা গুলো বললো বহু আগে থেকেই আমি এই কথা গুলো বলে আসছি। ব্যবসায়ী চাইলে তাদের উপার্জনের তিন ভাগের একভাগ দিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে পারে। নারায়ণগঞ্জ নাসিম ওসমান সেতু যেটি শীতলক্ষ্যা-৩ সেতু বলা হয় সেটির কাজ চলছে। সেতুটি সম্পন্ন হলে নারায়ণগঞ্জ ও বন্দর একটি অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে। আরো একটি সেতুর অনুমোদন দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা করা হয়েছে। সেটিকে মেডিক্যাল কলেজ করা হবে। ১০০ শয্যা হাসপাতালে একটি নাসিং ইন্সস্টিটিউট করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে বাধা আসায় সেটিকে খানপুর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এমন করে নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি উন্নয়ন কাজে বাধার সৃষ্টি করা হয়। ভোটারদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু সংসদ সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বিনা বাধায় কাজ করতে পারে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এমপি কিছু করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অথচ সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেও আমাদের ভোট আছে। আমাদের সকল জনপ্রতিনিধিদের সাধারণ ভোটাদের কাছে দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের সকলকে সহযোগীতার মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়ন গুলো করতে পারলেই নারায়ণগঞ্জকে হারানো প্রাচ্যেরডান্ডির থেকেও আধুনিক রূপ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, এমপি সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, বিকেএমইএ এর প্রথম সহ সভাপতি মনসুর আহম্মেদ, দ্বিতীয় সহ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, সহ সভাপতি(অর্থ) হুমায়ন কবির খান শিল্পী, পরিচালক মঞ্জুরুল হক ও আবু আহম্মেদ সিদ্দিক।

add-content

আরও খবর

পঠিত