নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : কেন ওরে হত্যা করা হলো? কি ছিলো ওর অপরাধ? কারো কি এমন বড় ক্ষতি করেছিলো আমার ছেলে। সে তো কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করতো না। একটা শান্ত সন্তান ছিলো আমার। কি লাভ হইসে আমার সন্তানরে মাইরা। আমি এর বিচার চাই। আপনেরা ওর হত্যার আসামীদের ছাড় দিবেন না । সাংবাদিক আর পুলিশ ভাইদের কাছে আমার সন্তানের বিচার চাই। আপনারা শাহরিয়াজের হত্যাকারিদের দ্রুত বিচার করাবেন। এভাবেই সন্তান হারিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাতকার কালে আকুতি মিনতি করছিলেন নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজের ছাত্র শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্রর মা।
শাহরিয়াজের মাতা মাহমুদা সিদ্দিকি আরো বলেন, পুরো এলাকায় খবর নিয়ে দেখেন তাঁর কোন খারাপ রিপোর্ট পাবেন না। আমার ছেলে মেধাবী ছাত্র ছিলো। সে ছাত্র পড়িয়ে টাকা উপার্জন করতো। আর সে টাকা দিয়েই নিজের পড়াশুনা চালাতো। শাহরিয়াজের সপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ হলে বাবা মা এর সকল দেখাশোনার দায়িত্ব বহন করবে। কিন্তু তাঁর সকল সপ্ন আজ নি:শেষ হয়ে গেছে। আর কখনো আমার ছেলেকে বুকে ফিরে পাবোনা।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার থেকে শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র নিখোঁজ ছিল অভিযোগ করে শনিবার ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন তার বাবা। একই দিনে ফতুল্লাহ কাজীপাড়া এলাকার একটি ডোবা থেকে শুভ্রর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শুভ্র নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ফতুল্লা থানার প্রাথমিক সদস্য। এছাড়াও স্থানীয় দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় খন্ডকালিন সময় কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োজিত ছিলো। শুভ্র ফতুল্লা লালপুর এলাকার বাসিন্দা ও মাদ্রাসা শিক্ষক কামাল উদ্দিন সিদ্দিকের বড় ছেলে। তাঁর ছোট এক ভাই ও বোন রয়েছে। ছোট ভাইয়ের নাম সাফিন, সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে আর ছোট বোন ফাহমিদা আক্তার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে।
এদিকে শাহরিয়াজ শুভ্র হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৪ ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এসময় ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত সিএনজি (ঢাকা মেট্রো-থ-১১-৩০২৪), ২ টি চাকু, এবং ৪ টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ১২ই সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটায় জেলা গোয়েন্দা শাখার আইটি বিভাগের এসআই মফিজুল ইসলাম নিহত শুভ্র এর মোবাইল সূত্র ধরে যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেফতাররকৃতরা হলো, সিএনজি চালক কুমিল্লা জেলার তিতাস থানার মঙ্গলকান্দি এলাকার বেলায়েত হোসেনের ছেলে মোঃ ইয়ামিন ওরফে আল-আমিন (২৩), দেবীদ্বার উপজেলার উজালীকান্দি এলাকার কেসমত আলীর ছেলে মোঃ জালাল (৩০), নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নিমাইকাশারী এলাকার আলম মিয়ার ছেলে জুয়েল (২২), এবং দক্ষিন নিমাইকাশারী এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে রবিন ওরফে রিক্সা রবিন। বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টায় ফতুল্লার ভূঁইগড় কড়ইতলা এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পশ্চিম পাশে একটি ডোবায় এলাকাবাসী একটি অজ্ঞাত লাশ ভাসতে দেখে। পরে ফতুল্লা থানা পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠায়।
লাশ উদ্ধারের একদিন পর ১০ সেপেটম্বর রবিবার ফতুল্লার লালপুর মাদ্রাসার শিক্ষক কামাল হোসেন লাশটি তার ছেলে শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র এর বলে সনাক্ত করেন। পরে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২২(৯)১৭।