নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : গত কয়েক যুগেও দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা যা পারেনি শিক্ষার্থীরা ৩দিনে তা করে দেখিয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছে নিরাপদ সড়ক পেতে আমাদের কত কী করনিয়। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের ছোট অভিযানে লাইসেন্সহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির পাওয়া গেল ২ শতাধিক চাবি। তাহলে কি হতে পারে গোটা পরিবহন সেক্টরের অবস্থা।
সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জেও গত তিনদিন নিরাপদ সড়কসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রথমে রাস্তা অবরোধের কর্মসূচি পালন করলেও পরে বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে চালকদের লাইসেন্স দেখছে তারা। লাইসেন্স পেলে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যেসব চালকের লাইসেন্স নেই ও ফিটনেস নেই চাবি রেখে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে তারা। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। অর্থাৎ, পুলিশের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। আর এসময় প্রায় ২ শতাধিক চাবি একট্টা করে। যা বিগত কোনও ইতিহাসে দেখা যায়নি।
এর ফলে গত কয়েকদিন লাইসেন্সহীন অধিকাংশ গাড়িই রাস্তায় নামেনি। শহরে দেখা যায়নি লেগুনা, টেম্পু, সিএনজি সহ ভারি অনেক যানবাহনই। আর যেগুলো নেমেছে, সেগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার শিক্ষার্থীদের চেকের মুখে পড়তে হয়েছে। এতেও অখুশি নন লাইসেন্সধারী চালকরা। কারণ, নিরাপদ রাস্তা সবারই কাম্য। অখুশি সেই চালকরা, যারা লাইসেন্স ছাড়াই এতদিন গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচীতে দেখা গেছে, যারা লাইসেন্স দেখার দায়িত্বে রয়েছেন, সেই পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও অনেকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকলেও তারা নিজেরাই মানছেন না আইন!
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য তাদের কিন্তু আমরা সম্মানের সহিত সচেতন করে তারপরেও ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তারা যখন দায়িত্বে থাকে তখন কিন্তু ব্যবহার করা হয় অশালীন বাক্য। অর্থাৎ এতদিন ধরে লাইসেন্সবিহীন রাস্তায় ধাপিয়ে বেড়িয়েছেন তারা। কিন্তু এসব যেন দেখার কেউই ছিল না! সবাই এতদিন ঘুময়ে ছিলেন?
এই আন্দোলনে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভূমিকাই বেশি লক্ষণীয়। এতদিন যা অনেকেই পারেনি, ছোট-ছোট এই ছেলে-মেয়েরা সেটাই করছে। যেভাবে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে তারা, নিঃসন্দেহে ইতিহাস তাদের মনে রাখবে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি শামীম ওসমানের আশ্বাসে রোববার (৫ জুলাই) পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় চাষাঢ়া খাজা সুপার মার্কেটের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডেকে তিনি অনুরোধ করেন আজকের জন্য তোমরা (ছাত্ররা) দেখো। আগামীকাল পুলিশ কিভাবে ট্রাফিক কন্ট্রোল করে। রোববার বসো, দেখো তোমরা যেভাবে চাচ্ছিলা পুলিশ প্রশাসন সেভাবে করছে কি না! যদি না হয় জবান দিচ্ছে রোবাবার তোমাদের সাথে আমিও রাস্তায় থাকবো।
এসময় আন্দোলনরত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহাতির মাহমুদ সড়কে যানবাহন ও চালকদের বিভিন্ন অনৈতিকতা তুলে ধরে। এবং এমপি শামীম ওসমানের আশ্বাসে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বলেন, সবাইর কাছে অনুরোধ করলাম সবাই যার যার মতো বাসায় ফিরে যাও। যতি এসব কথার ব্যাত্যয় ঘটে তবে আবার আমরা রাস্তায় নামবো । পরে শিক্ষার্থীদের কাছে সংরক্ষিত থাকা চালকদের লাইসেন্সবিহীন গাড়ির চাবিগুলি সদর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়।